রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
পদ্মা, যমুনা ও কালিগঙ্গা নদীর ভাঙনে মানিকগঞ্জ জেলায় এবার প্রায় ২শ’ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। অব্যাহত ভাঙনে জেলার স্কুল কলেজ, রাস্তাঘাট, আবাদি জমি, বসতবাড়িসহ ৬৪৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন লক্ষাধিক পরিবার। ভাঙন ঠেকাতে প্রতিবছরই কোটি টাকা খরচ করে জিও ব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু তাতে কোন কাজে আসছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারের বন্যায় জেলা নদী ভাঙনে তিনটি স্কুল, ৩শ’ কিলোমিটার রাস্তা, ২৭৬টি বাড়িঘর নদীতে ভাঙনের শিকার রয়েছে। এতে প্রায় ২শ’ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে বসত বাড়িঘর ও জমির ক্ষতির পরিমান ৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, স্কুল কলেজের ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা ও রাস্তাঘাটের ক্ষতি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৯০ কোটি টাকা। জানা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে হরিরামপুর ও দৌলতপুর উপজেলার মানুষ বেশি ভাঙনের শিকার হয়ে থাকেন। বন্যার পানি আসার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভাঙন আতংকে থাকে জেলার শত শত মানুষ।
নদী ভাঙনে শিকার হরিরামপুরের বয়রা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান তোষার বলেন, বয়রা ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের মধ্যে ১০টি গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ৫০টি পরিবার বাড়িঘর হারিয়ে পিপুলিয়া সরকারি রাস্তার পাশে ঘর নির্মাণ করে ছেলে সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
ভুক্তভোগি সত্য সরকার জানান, লেছড়াগঞ্জচরে আমাদের ২৬ বিঘা জমি ছিল পদ্মার ভাঙনে সব হারিয়েছি। বর্তমানে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মিতরা গ্রামে ১০ শতাংশ জমি কিনে কোন রকমে ছেলে সন্তান নিয়ে আছি। এক সময় ১৫/২০ বিঘা জমি চাষ করতাম। ঘরের ধানের ভাত খেতাম। কিন্ত এখন জমিজমা হারিয়ে কিনে খেতে হচ্ছে। ভাঙনের শিকার খলিল মোল্লা বলেন, ‘আমরার বাহাদুরপুর গ্রামে বাড়ি ছিলো। হেই গ্রাম ভাইঙ্গা গোপীনাথপুর আইসা বাড়ি করি। এহন যে বাড়িতে আমরা আছি, সেই বাড়িও সিকিভাগ ভাইঙ্গা গেছে।’ আব্দুর রশদি মোল্লা বলেন, ‘আমার বাড়ি ৪ বার ভাঙা দিছে। এখন পদ্মার পাড়ে পইরা রইছি। আমরা কি করুম, কই যামু।’
হরিরামাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, ধূলসুড়া ইউনিয়নের ৩৬টি গ্রামের মধ্যে ১০টি, গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ১৩টি গ্রামের মধ্যে ৩টি সম্পূর্ণ নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে। অব্যাহত ভাঙনের ফলে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বাহাদুরপুর বাজার বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনের ফলে এই উপজেলার শত শত পরিবার জেলার বিভিন্ন স্থানসহ ঢাকার সাভারের বিভিন্নস্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
মানিকগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছরের বন্যার ৩শ’ কিলোমিটার রাস্তা নষ্ট হয়ে প্রায় ১৫০ থেকে ১৯০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ৩৪ নম্বর বাঁচামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৯৮ নম্বর সুবুদ্ধি-পাচুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৩ নম্বর চরকাটারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যমুনায় বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলোর সংস্কার কাজ করতে কমপক্ষে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা দরকার।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাইন উদ্দিন জানান, নদী ভাঙন রোধে দৌলতপুরের বাঁচামারা থেকে হরিরামপুরের ধুলসুরা ইউনিয়ন পর্যন্ত বেড়িবাঁধের জন্য ধাপে ধাপে কাজ করা হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আওলাদ হোসেন বলেন, গেল বন্যায় ৭টি উপজেলার মধ্যে হরিরামপুর, দৌলতপুর, শিবালয়, সাটুরিয়া ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ৮৭৩টি পরিবার বাড়ি-ঘর নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এ সব পরিবারকে পূনর্বাসনের জন্য আমরা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। দ্রুত এদেরকে সরকারি খরচে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুল হক জানান, মানিকগঞ্জ জেলায় সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩শ’ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ইতোমধ্যে ১৫০শ’ কিলোমিটার রাস্তা মেরামত সম্পন্ন করেছি, বাকি কাজ আগামি জুন মাসের মধ্যে শেষ করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।