পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সমিতি বাজার এলাকায় দুই বোন খুনের ঘটনায় ঘাতক স্বামী রনি মিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতদের বোন সাথী আক্তার বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। পরে ওই মামলায় রনিকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।
তেজগাঁও থানার এসআই জহিরুল ইসলাম জানান, গত শনিবার রাতে ইয়াসমিন ও শিমুর বোন সাথী আক্তার বাদী হয়ে রনি মিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। মামলা হওয়ার পর আটক রনিকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তদন্তে এখন পর্যন্ত যা উঠেছে সে অনুযায়ী, রনি প্রথমে শ্যালিকা শিমুকে গলা টিপে হত্যা করে কম্বল দিয়ে মুড়ে রাখে। পরে তার স্ত্রী ইয়াসমিন বাসায় ফিরলে ছোট বোনকে ঘুম থেকে জাগানোর চেষ্টা করে। এর ফাঁকেই রনি পেছন থেকে এসে ইয়াসমিনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। তিনি আরও বলেন, এ মামলায় জটিল পারিবারিক কলহের বিষয় রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখছি। নিহত দুজনের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, রনি মাদকাসক্ত ও জুয়ারি। ইয়াসমিন তাকে ডিভোর্স দিয়েছেন। তারপরও রনি বাসায় এসে তাদের বিরক্ত করতো।
জানা যায়, ২০০৮ সালের পহেলা জানুয়ারি জামালপুরের রনি ও নরসিংদীর ইয়াসমিন আক্তারের বিয়ে হয়েছিল। পেশায় রিকশাচালক রনি স্ত্রী, দুই সন্তান ও শ্যালিকাকে নিয়ে থাকতেন ঢাকার পূর্ব নাখালপাড়ার একটি বাসায়। রনি রিকশা চালিয়ে যা আয় করতেন তার সবই জুয়া খেলে শেষ করতেন। এ কারণে সংসারে প্রায়ই অভাব-অনটন লেগে থাকতো। অভারের তাড়নায় খেয়ে না খেয়ে তাদের সংসার চলতো। ঠিকমতো খাবার না জুটায় রনির স্ত্রী ইয়াসমিন দুই সন্তানকে তার মায়ের কাছে রেখে আসেন। কিন্তু তাতেও সচ্ছলতা আসেনি তাদের পরিবারে। ভ্যান ও রিকশা চালিয়ে আয়ের সবটুকুই জুয়া খেলে শেষ করতেন রনি।
এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে প্রায়ই বাকবিতন্ডা ও ঝগড়া হতো। রনি মাফ চেয়ে বলতেন আর তিনি জুয়া খেলবেন না। কিন্তু শুধরাননি রনি। পরে অভাবের সংসারের ইতি টানতে রনিকে ডিভোর্স দেন তার স্ত্রী ইয়াসমিন। রনি সেটা মেনে নিতে পারেননি। আলাদা থাকলেও তিনি ফের ইয়াসমিনের সঙ্গে সংসার করতে চেয়েছিলেন। এজন্য ইয়াসমিনকে তিনি অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ইয়াসমিন তাতে রাজি হননি। সর্বশেষ গত শনিবার দুপুরে সেই চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে প্রথমে শ্যালিকা ও পরে স্ত্রীকে হত্যা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ রনিকে আটক করেছে। পরে হত্যাকান্ডের দায়ও স্বীকার করেছেন রনি।
উল্লেখ্য, গত শনিবার পূর্ব নাখালপাড়ার একটি বাসা থেকে ইয়াসমিন আক্তার (২৮) ও শিমু আক্তার (১৭) নামের দুই নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা দু’জনে সম্পর্কে সৎ বোন। ইয়াসমিন আক্তার রনির সাবেক স্ত্রী ও শিমু আক্তার তার শ্যালিকা। ইয়াসমিন একটি তৈরি পোশাক কারখানায় আর শিমু সম্প্রতি নাবিস্কো এলাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করতেন।
তেজগাঁও পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, রনি ভ্যান ও রিকশা চালিয়ে যে টাকা আয় করতেন সেটি দিয়ে জুয়া খেলতেন। এ কারণে তার পরিবারে অভাব-অনটন লেগে থাকতো। তার স্ত্রী ইয়াসমিন বারবার সতর্ক করে দেওয়ার পরও তিনি জুয়া খেলতেন। মাঝে-মধ্যে মাফ চাইতেন কিন্তু পরে আবার একই কাজ করতেন। এসব কারণে বিরক্ত হয়ে চার মাস আগে তার স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দেন। পরে রনি মগবাজার ওয়্যারলেস এলাকায় চলে যান। ডিভোর্সের পরে রনি বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছেন সংসার টিকিয়ে রাখার। কিন্তু তার স্ত্রী ইয়াসমিন তাতে রাজি হননি। সংসার শুরু করার জন্য গত শনিবার দুপুরেও স্ত্রীকে বোঝাতে নাখালপাড়ার ওই বাসার তিনতলার একটি কক্ষে যান রনি। সেখানে গিয়ে তার শ্যালিকাকে পান। সংসারটা আবার শুরু করার জন্য রনি তার শ্যালিকাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। শ্যালিকা যেন তার বোনকে বোঝায়। তখন শ্যালিকা তার বিগত দিনের কর্মকান্ড সামনে নিয়ে এসে কথা বলে। এ সময় শ্যালিকাকে কোনোভাবেই তিনি বোঝাতে পারছিলেন না। শ্যালিকা তার জুয়া খেলা, অভাব-অনটনসহ নানান বিষয়ে কথা বলতে থাকে। একপর্যায়ে রনি তার শ্যালিকার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তার গলা টিপে ধরে হত্যা করে। তার মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর খাটের ওপর রেখে কাঁথা দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করেন। এ সময় রনির সাবেক স্ত্রী ইয়াসমিন ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে দেখেন তার বোন মৃত। হত্যাকান্ডের কথা ইয়াসমিন জেনে যাওয়াতে রনি তাকেও রুমের মধ্যে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন।
ডিএমপি’র তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন-অর-রশীদ বলেন, পারিবারিক কলহ থেকে এই হত্যাকান্ডটি ঘটেছে। আমরা ঘাতক রনিকে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেফতার করেছি। সে হত্যার দায় স্বীকার করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।