Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্ভোগে যাত্রী-পর্যটক

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত গাড়ির ছড়াছড়ি ১৫০ কিলোমিটার যেতে ৫ ঘণ্টা

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

সড়কের ওপর বাজার। রয়েছে অবৈধ স্থাপনা। অবাধে চলছে ছোট যানবাহন। সিএনজি অটোরিকশা থেকে শুরু করে টমটম, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশার ছড়াছড়ি মহাসড়কে। সড়কজুড়ে খানাখন্দক, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। আর তাতে স্থবির চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। ১৫০ কিলোমিটার মহাসড়ক পাড়ি দিতে লেগে যাচ্ছে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। সড়কে চরম বিশৃঙ্খলায় তীব্র জটে আটকা পড়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে যাত্রী-পর্যটকরা। প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।

পর্যটনের ভর মৌসুমে দেশের প্রধান পর্যটন শহর কক্সবাজারমুখী পর্যটকের ঢল। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে কক্সবাজার যাওয়ার একমাত্র মহাসড়কের বেহাল অবস্থায় নাকাল পর্যটকরা। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ ম্লান হয়ে যাচ্ছে সড়কে। এতে কক্সবাজার বিমুখ হচ্ছেন পর্যটকরা। ইমেজ সঙ্কট বাড়ছে কক্সবাজার, বান্দরবানসহ এ অঞ্চলের পর্যটন স্পটগুলোর।

যানবাহন চালক ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে। মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, টমটম চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও সেখানে অবাধে চলছে এসব ছোট যানবাহন। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা প্রভাবশালীদের মদদে এসব অবৈধ যানবাহন দখল করে নিয়েছে মহাসড়ক। সড়কজুড়ে হাটবাজার এবং অবৈধ স্থাপনার কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাভাবিক যানবাহন চলাচল। যানজটে আটকা পড়ছে পর্যটকবাহী শত শত যানবাহন।

দুর্ভোগের শুরু হয় কর্ণফুলী সেতু এলাকা থেকে। সেতুর উত্তর প্রান্তের গোল চত্বরে অসংখ্য যানবাহন রাস্তা দখল করে যাত্রী উঠানামা করে। এতে প্রায় এক কিলোমিটার সড়কে তীব্র যানজট লেগে থাকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। যানজট ঠেলে কক্সবাজারমুখী যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহন শহর ছেড়ে যেতেই আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পার হয়ে যায়। মহাসড়কের শিকলবাহা থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার অংশ অত্যন্ত সরু। এ অংশে রয়েছে ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। পটিয়ার শান্তিরহাট থেকে কক্সবাজারের বাংলা বাজার পর্যন্ত মহাসড়কের ওপর ছোট বড় অন্তত ২০টি বাজার রয়েছে। এর ফলে যানবাহন চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। বিশেষ করে পটিয়ার শান্তিরহাট, পটিয়া সদর, দোহাজারী, কেরানীহাট, ঠাকুরদীঘির পাড়, আমিরাবাদ, চুনতি, চকরিয়ার বরইতলী, চিরিঙ্গা, ডুলাহাজরা, খুটাখালী, ঈদগাঁও, রামুসহ কয়েকটি বাজারে তীব্র যানজট হচ্ছে। মহাসড়কের অনেক অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে আটকা পড়ছে যানবাহন।

স্বাধীন ট্রাভেলসের চালক মো. আমির হোসেন বলেন, মহাসড়ক ভাঙাচোরা তার উপর ছোট যানবাহনের দাপটে যানজট হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছা যাচ্ছে না। মহাসড়কের যে অংশ সরু এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে সেখানে যানবাহন চলছে ধীরে। মহাসড়ক ঘেঁষে হাটবাজারে যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। এর ফলে কোন বাস সিডিউল রক্ষা করতে পারছে না।

কক্সবাজারের তারকা হোটেল কক্স টুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রিহ্যাব চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের প্রেসিডেন্ট আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী বলেন, ঢাকা থেকে সাড়ে চার ঘণ্টায় চট্টগ্রাম আসা গেলেও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যেতে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। ছোট গাড়ির ছড়াছড়িতে বেহাল মহাসড়কে আটকা পড়ছেন পর্যটকরা। মহাসড়কটির এ দুরবস্থার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পর্যটন খাতে। করোনার কারণে টানা লকডাউনে সবকিছু বন্ধ ছিল। হোটেল, মোটেলগুলোও সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নানা আয়োজন করেছে। কিন্তু এখন পর্যটকের আগমন বাড়লেও মহাসড়কের দুর্ভোগে তারা অতিষ্ঠ। অনেক আগেই এ মহাসড়কটি চোর লেন করা জরুরি ছিল।

দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, মহাসড়কে কিছু কিছু এলাকায় খানাখন্দক সৃষ্টি হয়েছে। তবে সেখানে নিয়মিত সংস্কার কাজ চলছে। শিকলবাহা থেকে দোহাজারী পর্যন্ত সরু সড়কে যানজট হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সড়কের এ ৩২ কিলোমিটার অংশ সম্প্রসারণ এবং বাঁক সোজাকরণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ৩২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি বাঁক সোজাকরণ এবং ৩২ কিলোমিটার সড়ক ১৮ ফুট থেকে ৩৪ ফুটে সম্প্রসারণের প্রকল্পও মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে সড়কে দুর্ভোগের অবসান হবে বলে জানান তিনি।

হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম বলেন, পটিয়ার ভেল্লাপাড়া থেকে বাইপাস পর্যন্ত সড়কে যানজট হচ্ছে। তবে মহাসড়কে ছোট যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান এবং মামলা দেয়া হচ্ছে। এর ফলে ছোট যানবাহনের আধিক্য কমে আসছে। অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সড়কে খানাখন্দকের কারণে যানজট হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পর্যটক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ