Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ছয় মাসে ৪৮৬৩ কোটিপতি

করোনার মধ্যেও ব্যাংকে জামানত বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

কারোনাভাইরাসের মধ্যেও দেশে ৬ মাসে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ৪ হাজার ৮৬৩ জন। ২০২০ সালের মার্চে যখন দেশে মহামারি করোনার আবির্ভাব শুরু হয়, তখন ব্যাংকে কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫টি। গত সেপ্টেম্বরের শেষে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ৪৮৮টি। ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ৬ মাসে ব্যাংক খাতে কোটি টাকা আমানত রাখা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৮৬৩টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত এক বছরে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ৭ হাজার ৭১১ জন। ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৭৯ হাজার ৮৭৭ জন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ৮৭ হাজার ৪৮৮টির মধ্যে ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট যেমন রয়েছে; তেমনই প্রাতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্টও রয়েছে। আর প্রতিটি প্রাতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্টের পেছনে কোনও না কোনও ব্যক্তি রয়েছেন। ব্যাংকে কোটি টাকার বেশি আছে এমন আমানতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া মানেই দেশে নতুন করে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে গেছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংকে কোটি টাকার আমানতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া মানেই দেশে নতুন করে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে গেছে। নামে অথবা প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি টাকার ওপরে আমানত রাখা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বাড়া মানেই কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া। যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ-এক্সের প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে করে তিনি বলেন, অতি ধনী বৃদ্ধির হারের দিক থেকে বাংলাদেশ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে যাচ্ছে। তার মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবেও এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বিগত ১২ বছর ধরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। ২০০৯ সালের জুন মাস শেষে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৪৯২ জন। এখন এই সংখ্যা ৮৭ হাজার ৪৮৮ জন। গত ১২ বছরে ৬৫ হাজার ৯৯৬ ব্যাংকের গ্রাহক কোটিপতির তালিকায় নতুন করে নাম লিখিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের শেষে ব্যাংকে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তি রয়েছেন এক হাজার ৩০৩ জন। ৪০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তি রয়েছেন ৪৭২ জন। ৩৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ২৬৮ জন গ্রাহক। ৩০ কোটি টাকারও বেশি আমানত রেখেছেন ৩৫২ জন। ২৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ৬২৬ জন। ২০ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ১০৪০ জন। ১৫ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ১ হাজার ৫৭১ জন। ১০ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ৩ হাজার ২৩২ জন। পাঁচ কোটি টাকার বেশি আমানত রেখেছেন ৯ হাজার ৬৯৯ জন। এক কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা আমানত রাখা গ্রাহকের সংখ্যা ৬৮ হাজার ৯২৫ জন গ্রাহক।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি ছিলেন মাত্র পাঁচ জন। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে এই সংখ্যা বেড়ে ৪৭ জনে দাঁড়ায়। ১৯৮০ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮ জনে। এরশাদ সরকারের পতনের সময় ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৯৪৩ জন। ১৯৯৬ সালের জুনে কোটিপতি ছিলেন দুই হাজার ৫৯৪ জন। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এ সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ১৬২ জনে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৮৮৭ জন। ২০০৮ সালে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারী গ্রাহক ছিলেন ১৯ হাজার ১৬৩ জন।
২০১৮ সালে সম্পদশালী বৃদ্ধির হার ও ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রক্ষেপণ ধরে ওয়েলথ-এক্স এর প্রতিবেদনে বলা ছিল, ৩ কোটি ডলার বা আড়াইশ’ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিকদের সংখ্যা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি হারে বাড়ছে। ওয়েলথ-এক্সের হিসাবে, ২০১৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে অতি ধনীর সংখ্যা বেড়েছে গড়ে ১৭ শতাংশ হারে। এ হার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারতসহ মোট ৭৫টি বড় অর্থনীতির দেশের চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতের সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ৪৫১টি। আর গত মার্চ থেকে জুন ওই তিন মাসে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ৪১২ জন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এই বছরের জুন মাস শেষে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৮৬ হাজার ৩৭ জন। গত মার্চ শেষে এই সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫ জন।
এদিকে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) করোনাকালীন আয়, ব্যয় ও বেকারত্বের প্রভাব তুলে ধরে বলা হয়েছে, করোনায় মানুষের আয় কমেছে ২০ শতাংশ। করোনার আগে গত মার্চ মাসে প্রতি পরিবারের মাসিক গড় আয় ছিল ১৯ হাজার ৪২৫ টাকা। আগস্টে তা কমে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৪৯২ টাকায়। অর্থাৎ পাঁচ মাসের ব্যবধানে পরিবারপ্রতি আয় কমেছে প্রায় চার হাজার টাকা। এ ছাড়াও মহানগর ও নগরগুলোতে বিপুল সংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়েছে। নগরীর ৮ শতাংশ মানুষ দিনে এক বেলা কম খেয়ে জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের সহযোগিতায় প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ আয়োজিত এক ওয়েবিনারে জানানো হয়, কোভিড-১৯-এর কারণে আয় কমেছে শতকরা ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবারের। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে সেসব পরিবার, যাদের বছরে আয় এক লাখ টাকার কম।



 

Show all comments
  • তাসফিয়া আসিফা ৯ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:২১ এএম says : 0
    টাকাওয়ালাদের টাকা আরও বাড়ছে আরছে গরিবরা আরও গরিব হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • রমজান আলি ৯ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:২২ এএম says : 0
    দেশে কোটিপতির অভাব নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ খান ৯ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:২২ এএম says : 0
    দেশে ধনী-গরিবের ব্যবধান বেড়েই চলেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • হোসাইন এনায়েত ৯ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:২৩ এএম says : 0
    খোঁজ নিয়ে দেখেন বেশিরভাগের অভৈধ ইনকাম।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ