Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আনন্দে মুখর বন্দরনগরী

পর্যটকের ভিড় পাহাড় সৈকত পার্ক বিনোদনকেন্দ্রে

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

পাহাড়, সমুদ্র, নদী, উপত্যকায় ঘেরা চট্টগ্রাম। প্রাচ্যের রাণী খ্যাত এই নগরী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। মহানগরী এবং আশপাশে রয়েছে অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্র। বেড়ানোর ভর মৌসুমে এখন পর্যটকদের ভিড়। আনন্দে মুখর মহানগরীর সর্বত্রই উৎসবের আমেজ। বিনোদন কেন্দ্র থেকে শুরু করে পার্ক, উম্মুক্ত স্থান সবখানে নানা বয়সের মানুষের ভিড়।

সরকারি ছুটির দিন ছাড়াও প্রতিদিন সকাল বিকেলে মানুষ ছুটছে বিনোদন কেন্দ্রে। হোটেল-মোটেল রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসগুলোতে অতিথিদের ভিড়। বাণিজ্যিক রাজধানীর পর্যটন ব্যবসা এখন দারুণ জমজমাট। মহানগরীর বাসিন্দাদের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও পর্যটক আসছে।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত লোকে লোকারণ্য। বর্ণিল সাজে সজ্জিত দেশের অন্যতম এই বিনোদনকেন্দ্র। লুসাই কন্যা কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অগণিত জাহাজের সারি। সাগর তীরে আছড়ে পড়া সমুদ্রের ঢেউ। অপরূপ এ সৌন্দর্য উপভোগে প্রতিদিনই ভিড় করছে হাজারো পর্যটক। বন্দরনগরীর প্রাণকেন্দ্র থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে পতেঙ্গা সৈকত। এখানে রয়েছে সাগরে গোসল করা, ঘোড়ায় চড়ার সুযোগ। সেই সঙ্গে আছে স্পিডবোট কিংবা কাঠের তৈরি নৌকায় ওঠার সুযোগও। সৈকতে আছে একাকি বসে সমুদ্র দেখার ব্যবস্থা। সৈকতের পাশ দিয়ে তৈরি আউটার রিং রোড পতেঙ্গা সৈকতের সৌন্দর্যে যোগ করছে নতুনমাত্রা।

পতেঙ্গা এলাকায় রয়েছে আবাসিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট। ভালমানের রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে সেখানে। মূল সৈকতের পাশে গড়ে উঠেছে নেভাল বীচ। নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় দৃষ্টিনন্দন এলাকা হিসেবে দর্শকদের নজর কাড়ছে এ পর্যটন কেন্দ্র। পতেঙ্গা সৈকতের নিকটে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে রয়েছে বাটারফ্লাই পার্ক। হাজারো বর্ণিল প্রজাপতির মেলা এই পার্কে। সেখানে আছে রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্ট।

প্রজাপতি দেখার সাথে সাথে পার্কে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগও রয়েছে। শিশুদের জন্য আছে বেশকিছু রাইড। বিমানন্দরের কাছে মেরিন একাডেমি ঘাটের পাশে গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র বোট ক্লাব। বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত এই ক্লাবে সামাজিক ও করপোরেট যেকোন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের নিয়েও থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা আছে। খোলা মাঠে নদীর তীরে বসানো হয়েছে তাবু। সেখানে রাত্রী যাপনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নেয়ারও সুযোগ আছে।

ক্লাবের পাশে কর্ণফুলী নদীতে আছে প্রমোদতরী। ভ্রমণ জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরের ধারক কর্ণফুলী নদী হয়ে সাগরের নীল স্বচ্ছ জলরাশি দেখার তথা অন্যরকম রোমাঞ্চকর সমুদ্র বিহারের ব্যবস্থাও আছে। পতেঙ্গা সৈকতের পাশাপাশি নগরীর খেজুরতলা, কাট্টলী এবং টোল রোড এলাকায় সৈকতেও পর্যটকের ভিড় নামছে। দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলীর কর্ণফুলী সেতু, শত বছরের কালুরঘাট সেতু এবং নগরীর মেরিনার্স রোড এলাকায় গড়ে উঠা নেভাল-টু সৈকতেও পর্যটকের আনাগোনা বাড়ছে।

নগরীর ফয়’স লেককে ঘিরে গড়ে ওঠা অ্যামিউজমেন্ট পার্ক এখন পর্যটন আকর্ষণের শীর্ষে। মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র থেকে আট কিলোমিটার দূরের এ পার্কে প্রতিদিনই শত শত পর্যটকের ভিড় জমছে। ১৯২৪ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃক খনন করা কৃত্রিম লেককে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিশ্বমানের এ পর্যটনকেন্দ্র। সেখানে আছে বেশ কয়েকটি রিসোর্ট। বিনোদনের জন্য রাইডের পাশাপাশি রয়েছে সী-ওয়ার্ল্ড।
ফয়’স লেকের পাশে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানায় হরেক পশু-পাখি পরিদর্শন এবং ফয়’স লেকে বিনোদন উপভোগ করছেন পর্যটকরা। অন্যতম দর্শনীয় স্থান টাইগারপাসের বাটালি হিল। নগরীর সবচেয়ে উঁচু এ পাহাড়টি দেখতে আসছেন পর্যটকরা। এর পাশেই রয়েছে জিলাপী পাহাড়। নগরীর লালখান বাজার ইস্পাহানি মোড় থেকে ম্যাজিস্ট্রেট কলোনী হয়ে উঠা যায় এ পাহাড়ে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের সমাধিস্থল ওয়ার সিমেট্রি এখন নগরীর অন্যতম পর্যটন স্পট। মেহেদীবাগ গোল পাহাড় এলাকার এ সমাধিস্থলে বিশ্বযুদ্ধে ইন্দো-বার্মা রণাঙ্গনে আজাদ হিন্দ ফৌজের আক্রমণে মিত্রবাহিনীর যেসব সৈনিক প্রাণ হারান তাদের সমাহিত করা হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেয়া এই ওয়ার সিমেট্রিকে দেয়া হয়েছে নান্দনিক রূপ। পাহাড়ের ভাঁজে অপরূপ সাজে দাঁড়িয়ে থাকা এ সমাধিস্থল দেখতে ভিড় করেন অনেক ভ্রমণপিপাসু। ঐতিহাসিক লালদীঘিকে বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়েছে। দীঘিকে ঘিরে তৈরি পার্কে মানুষের ভিড়। দীঘির স্বচ্ছ পানিতে বর্ণিল মাছ দেখতে শিশুদের আগ্রহের কমতি নেই।

নগরীর দর্শনীয় এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার জাতিতাত্তি¡ক জাদুঘর, সার্কিট হাউস এলাকায় জিয়া স্মৃতি জাদুঘর, এমএ আজিজ স্টেডিয়াম লাগোয়া নেভাল জাদুঘর, বায়েজিদ বোস্তামি দরগাহ, সেখানে প্রাচীন দীঘিতে থাকা বিরল প্রজাতির কাসিম, চন্দনপুরা জামে মসজিদ, সিআরবি শিরীষতলা, রেলওয়ের কাঠের বাংলো, ডিসি হিল পার্ক। বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্ক, কালুরঘাটের স্বাধীনতা কমপ্লেক্স, কর্ণফুলী শিশু পার্ক।

চট্টগ্রাম নগরীতে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে সিটি প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, পর্যটনের মাধ্যমেই কোটি কোটি টাকা আয় সম্ভব। আর তাতে দেশের অর্থনীতির চিত্রও পাল্টে যাবে। চট্টগ্রাম প্রাকৃতিকভাবেই অত্যন্ত সুন্দর নগরী। পরিকল্পিতভাবে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা গেলে এ খাতে বিপুল আয়ের দুয়ার খুলে যাবে।

তিনি বলেন, পতেঙ্গা বেড়িবাঁধে তৈরি আউটার রিং রোডকে ঘিরে মীরসরাই পর্যন্ত পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারের মেরিনার্স রোডের নেভাল টু সৈকত ঢাকার হাতিরঝিলের আদলে গড়ে তোলা যায়। ফয়’স লেক থেকে ফৌজদারহাট গলফ ক্লাব পর্যন্ত ক্যাবল কারের ব্যবস্থা করা হলে সেখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড় জমবে। মহানগরীর পাহাড় এবং সবুজ পরিবেশকে অক্ষুন্ন রেখে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব বলে জানান তিনি।



 

Show all comments
  • তিনা ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৪:৪০ এএম says : 0
    পাহাড় আমার প্রিয় জায়গা
    Total Reply(0) Reply
  • জুয়েল মিয়া ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:১৭ এএম says : 0
    কিন্তু কোথাও কোনো স্বাস্খ্যবিধি মানা হচ্ছে না।
    Total Reply(0) Reply
  • মশিউর ইসলাম ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:১৭ এএম says : 0
    করোনায় অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে অভিযোগ করেন কিন্তু বিনোদন পার্কগুলোতে উল্টা চিত্র।
    Total Reply(0) Reply
  • গাজী ওসমান ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:১৮ এএম says : 0
    বিনোদন পার্কগুলোতে অশ্লীলতা বন্ধে পদক্ষেপ আশা করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • রাজি হোসেন ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:১৯ এএম says : 0
    এদেশের পার্ক ও পর্যটন স্পটগুলো দেখলে মনে হয় করোনা বলতে কোনো জিনিস নাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পর্যটক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ