পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের কলঙ্কিত রেকর্ডকে ভেঙ্গে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সোয়া এক বছরের মাথায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ জনগণের উপর বিশ্বাস রাখতে পারেনি। তাদেরকে সন্ত্রাস-ভোট ডাকাতি-কারচুপির আশ্রয় নিতে হয়েছিল। ৩০০ আসনের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিজেরা নিয়েছিল ২৯৩ আসন, মাত্র ৭টি আসন বিরোধী দলকে দেয়া হয়। ৭৩ সালের নির্বাচনে জাসদ ২৩৭টি আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছিল। জাসদকে দেয়া হয়েছিল মাত্র ১টি আসন। দুর্নীতি, সন্ত্রাস গণতন্ত্র হত্যা, ভোটাধিকার হরণ, আওয়ামী লীগের ইতিহাসে নতুন নয়। আর ৫ জানুয়ারি আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে গণহত্যা, খুন, গুম,নির্যাতন চালিয়েও ন্যূনতম ভোট আদায় করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। সারাদেশে নির্বাচন কেন্দ্রগুলো ছিল একদম ফাঁকা। কোথাও কোথাও ভোটারের বদলে ভোট কেন্দ্রে চত্ষ্পুদ প্রাণীর বিচরণ দেখেছে বিশ্ববাসী।
মঙ্গলবার (০৫ জানুয়ারি) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের ইতিহাসে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচনে বিশ^াস করে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী সংস্কৃতি আওয়ামী লীগ কখনোই পাত্তা দেয় না। জনগণের ক্ষমতার প্রতি অবিশ্বাসী-অবিশ্বস্ত আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করতে পরিকল্পিতভাবে ২০১১ সালে সংবিধান থেকে তত্ত¡াবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দিয়েছিলো। এরপর যে কোনো উপায়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এই সরকারের যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তা ছিল একতরফা, বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতা, নিশিরাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা, জালভোট প্রদান, ভোট ডাকাতি, মৃত ব্যক্তির ভোট প্রদান, গায়েবী ভোট, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়াসহ অভিনব ভোট সন্ত্রাসের বহু বিচিত্র দৃশ্য।
তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালে প্রহসনের নির্বাচন প্রায় সকল রাজনৈতিক দল বর্জন করেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা ও তাঁর দলকে ক্ষমতায় রাখার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত দৃশ্যমান হয়। তৎকালীন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদকে শেখ হাসিনার পাতানো নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য কি হুমকি দিয়েছিলেন তা এরশাদ নিজেই গণমাধ্যমে বলেছিলেন। তারপরেও জাতীয় পার্টি তাদের সকল মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করার পরেও বন্দুকের নলের মুখে ভয় দেখিয়ে কয়েকজনকে বিজয়ী ঘোষণা করে গৃহপালিত বিরোধী দলের আসনে বসানো হয়। এটির প্রমাণ এইচ টি ইমাম বলেছিলেন-আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে প্রত্যেক কেন্দ্রেই আমরা দলীয় চেতনার ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রয়োজনীয় লোক নিয়োগ দিয়েছি। তারপরও আওয়ামী লীগের ভয় কাটেনি। যদি জনগণ অন্য কোনো প্রার্থীকে নির্বাচিত করে ফেলে, এমন আতঙ্কে নির্বাচনের আগেই সরকার গঠন করার মতো ১৫৩ জন প্রার্থীকে আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নিজ দলীয় এমপি হিসেবে ঘোষণা করে। বাকী আসনগুলোতে শতকরা ৫ শতাংশ ভোটও পড়েনি। জনগণ সেই নির্বাচন ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছিল।
বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচনের আগেই সরকার গঠন করার মতো এমন লজ্জাকর আর ন্যাক্কারজনক ও নজীরবিহীন নির্বাচন কেবলমাত্র আওয়ামী লীগের দ্বারাই সম্ভব। এ কারণেই দেশের জনগণ একটা বিষয় বিশ্বাস করে, সেটি হলো 'আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে-দেশে স্থিতিশীল, প্রাণবন্ত, দায়িত্বশীল, সুগ্রন্থিত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে না। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার থাকবে না। আর দেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার থাকলে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকবে না। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের ঘৃণ্য কালিমালিপ্ত পথ ধরে ২০১৮ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ভোটারদেরকে পরিত্যাগ করা হয়েছে। এই ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দেশের প্রশাসন মিলেমিশে নব্য নাৎসীবাদে পরিণত হয়ে তার হিং¯্র দাঁতের কামড়ে সমগ্র রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বিষময় করে তুলেছে। বাস্তবিক অর্থে নির্বাচন কমিশন, সরকার ও আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী অপকর্মের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রধান মালিক জনগণকে পরাজিত করেছে। সেনা সমর্থিত তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ এবং ২০১৪ ও ২০১৮ সালের একতরফা জাতীয় নির্বাচন সবই ছিল দেশী-বিদেশী গভীর চক্রান্তের নির্বাচন।
রিজভী বলেন, ৫ জানুয়ারির এ দিনে ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে জনগণকে করা হয়েছে পরাধীন। স্বাধীনভাবে ভোট প্রদানের অধিকার ও ইচ্ছাকে ধ্বংস করা হয়েছে। গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে সংবিধান, গণতন্ত্রকে। অঘোষিত বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ‘লাল ঘোড়া’ দাবড়িয়ে দেয়ার আদলে স্বৈর সরকারের সন্ত্রাসী বাহিনী, গুম-খুন বাহিনী, দখল-লুটেরা বাহিনী, ধর্ষক বাহিনী লÐভÐ করে চলেছে গোটা দেশ। এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার জন্য বন্দী করে রাখা হয়েছে। গত একযুগ আওয়ামীলীগ জোর করে ক্ষমতায় বসে থেকে প্রতিটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতির উৎসব করে চলেছে। কেবল জাতীয় নির্বাচন নয়, স্থানীয় প্রশাসনের নির্বাচন থেকে শুরু করে পেশাজীবি সংগঠনের নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনরা ভোটারবিহীন নির্বাচনের ভাইরাস সংক্রমিত করেছে। এখন ভোট মানে প্রহসন।সরকার বিরোধী দলগুলোর জন্য গ্রেফতার মামলা হামলা সন্ত্রাসের হিম আতংক। নির্বাচন মানে মুজিব কোট ধারীদের নৌকা প্রতীক লাভের আর্থিক প্রতিযোগিতা। এখন জনগণ জানে, যে কোন নির্বাচনের আগে নৌকা প্রতীক টেন্ডারে তোলা হচ্ছে। যে প্রার্থী বেশী দামে কিনতে পারে তার ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে। নৌকা প্রতীক পাওয়া মানে নির্বাচিত হওয়া। এভাবে আওয়ামী লীগ এখন ভোট ডাকাতলীগে পরিণত হয়ে বাংলাদেশের অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থাকে জাদুঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে।
মধ্যরাতে ভোট ডাকাতি করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থাকতে হচ্ছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, এখন জনরোষের ভয়ে দিনের বেলায় ভোট ডাকাতি করতেও ভয় পাচ্ছে। ধিক্কার জানাই এই আওয়ামীলীগকে। আওয়ামী লীগের কাছে নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব কিছুর মূল্য নেই। তাদের কাছে জবরদস্তি করে ক্ষমতায় দুর্নীতি লুটপাট করে সব চেটেপুটে খাওয়াটাই মূখ্য।
তিনি বলেন, একটি ষড়যন্ত্রের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর থেকে গণতন্ত্রের সব দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নাগরিক স্বাধীনতার গলায় ফাঁসির দড়ি লটকিয়ে দিয়েছে। নিঃশব্দ বোবাকণ্ঠই হচ্ছে আওয়ামী বাকশালীদের কাছে প্রিয়। ক্ষমতাসীনরা উৎপীড়নের পথ বেছে নিয়ে যেভাবে গণতন্ত্রকে বিষাক্ত গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়েছেন, তার পরিণতি হবে এই সরকারের জন্য ভয়াবহ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।