পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাহাড় ঘেরা চাটগাঁর প্রত্যন্ত অঞ্চলেও রয়েছে মনোমুগ্ধকর সব পর্যটনকেন্দ্র। দর্শনীয় এসব স্থানে অগণিত পর্যটকের ভিড় লেগেই আছে। দৃষ্টিনন্দন লেক, পাহাড়ি ঝরণা, ইকোপার্ক, সমুদ্র সৈকত, কর্ণফুলী ও হালদায় নৌকা ভ্রমণ এবং দুই পাড়ের দর্শনীয় স্থানগুলোতে ঘুরে বেড়াতে নানা এলাকা থেকে আসছে মানুষ। স্কুল-কলেজ বন্ধ। শীতের কামড়ও তেমন নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ফলে পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে ঘুরে বেড়াতে নেমে পড়েছেন অনেকে। মহানগরীর মতো গ্রামীণ জনপদেও এখন উৎসবের আবহ। অনাবিল আনন্দে মাতোয়ারা ভ্রমণপিপাসুরা।
পর্যটনের এ ভর মৌসুমে নগরীর সদরঘাট থেকে কর্ণফুলী নদী হয়ে কাপ্তাই পর্যন্ত নৌ বিহার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বন্দরনগরী থেকে ২০ মিনিটের দূরত্বে ভাটিয়ারীতে রয়েছে ভাটিয়ারি গলফ ক্লাব হিসাবে পরিচিত অসাধারণ প্রাকৃতিক রূপে বৈচিত্র্যে ঘেরা পর্যটন স্পট। পাহাড়-টিলায় ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশে রয়েছে কাক চক্ষু স্বচ্ছ লেকের পানি, ঝরণা। আছে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত গলফ কোর্স। সম্পূর্ণ অঞ্চলটি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য একেবারেই নিরাপদ। এলাকাটি অপরূপ সৌন্দর্যে পর্যটকদের শিহরিত করে। একই সাথে পাহাড় এবং পাহাড়ের গায়ে সূর্যাস্ত মনকে ভরিয়ে দেয়। নগরীর বায়েজিদ থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সিডিএ নির্মিত সড়কের দুই পাশে এখন পর্যটকের ভিড়। পাহাড় কেটে তৈরি সড়ক অন্যতম পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রতিদিন বিকেলে সেখানে মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়াতে যাচ্ছে।
পর্যটকের ভিড় সীতাকুন্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে। সীতাকুন্ড বাজার থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার। অনিন্দ্য সুন্দর এই সৈকতকে প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে। একদিকে দিগন্তজোড়া সাগরের ঢেউ অন্যদিকে কেওড়া বন এই সৈকতকে করেছে অনন্য। এ সৈকতকে ভিন্নতা দিয়েছে সবুজ গালিচার বিস্তৃত ঘাস। সাগরের পাশে সবুজ ঘাসের উম্মুক্ত প্রান্তর পর্যটকদের চোখ জুড়ায়। এখানে পাওয়া যায় সোয়াম্প ফরেস্ট ও ম্যানগ্রোভ বনের মত পরিবেশ।
সীতাকুন্ডে রয়েছে ইকোপার্ক। সেখানে অসংখ্য দুর্লভ গাছের সমষ্টি। হরেক গাছ-গাছালির সাথে উঁচু উঁচু পাহাড় প্রাকৃতিক অনন্য অনুভ‚তি দেয় পর্যটকদের। ইকোপার্কটি মহানগরী থেকে ৩৫ কি.মি. উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং রেলপথের পূর্ব পাশে অবস্থিত। বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকার পর্যটক আসেন সেখানে। সীতাকুন্ডের অন্যতম দর্শনীয় স্থান চন্দ্রনাথ পাহাড়, সহস্রধারা ও সুপ্তধারা ঝরণা। মীরসরাইয়ের মহামায়া লেক, খৈয়াছড়া ঝরনা, নাপিত্তাছড়া ট্রেইল, কমলদহ ঝরণা, ঝরঝরি ট্রেইল। মীরসরাই ও ফেনীর সোনাগাজী সীমান্তের মুহুরি প্রজেক্ট এলাকায়ও হাজারো পর্যটকের ভিড়।
মহানগরীর ৪৫ কিলোমিটার উত্তরে রামগড়-সীতাকুন্ড বনাঞ্চল। এ বনাঞ্চলের মধ্যেই রয়েছে বিচিত্র সব বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হাজারিখিল। যেখানে আছে ১২৩ প্রজাতির পাখি। রঙ-বেরঙের এসব পাখির মধ্যে রয়েছে বিপন্ন প্রায় কাঠময়ূর ও মথুরা। আছে কাউ ধনেশ ও হুতুম পেঁচাও। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের সমারোহ থাকায় চিরসবুজ এই বনে এমন কিছু প্রজাতির পাখি পাওয়া গেছে, যা অন্য কোনো বনে সচরাচর দেখা যায় না। এরমধ্যে রয়েছে হুদহুদ, চোখ গেল, নীলকান্ত, বেঘবৌ, আবাবিল। এসব পাখি আকার-আকৃতি, বর্ণ ও স্বভাবে বৈচিত্র্যময়।
মহানগরী থেকে মাত্র এক থেকে দেড় ঘণ্টার পথ দূরত্বে আনোয়ারায় পারকি সৈকত। পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের মত পারকিও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। একদিকে ঝাউবনের সবুজের সমারোহ, আরেকদিকে নীলাভ সমুদ্রের বিস্তৃত জলরাশি ভ্রমণপিপাসুদের নজর কাড়ছে। আর সমুদ্র তীরের মৃদুমন্দ বাতাসে ঘুরে বেড়ানোর মজাই যেন অন্যরকম। এ সৈকতকে ঘিরে সেখানে রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন ব্যবসা জমে উঠেছে। মহানগরীর কাছে হওয়ায় প্রতিদিন সেখানে অসংখ্য মানুষের ভিড় জমছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে পিকনিকে আসছেন পর্যটকরা।
এ অঞ্চলের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। পাহাড় ঘেরা ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতে প্রতিদিনই অগণিত মানুষ আসছে। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে সবুজ ক্যাম্পাস। জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে ফটিকছড়ির চা বাগান, রাঙ্গুনিয়ার কোদালা চা বাগান, শেখ রাসেল এভিয়েশন পার্ক, হাটহাজারীর নন্দীরহাটে জমিদার লক্ষীচরণ সাহার বাড়ি, বোয়ালখালীর কানুনগোপাড়ায় মেধস মুনির আশ্রম ও পাহাড়, লোহাগাড়ার চুনতি সীরাত ময়দান।
পর্যটক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের অংশ নৌকা সাম্পান। কিন্তু কালের বিবর্তে এসব হারিয়ে যাচ্ছে। খরস্রোতা কর্ণফুলীর সৌন্দর্য উপভোগ এবং নৌ ভ্রমণের জন্য নগরীর সদরঘাট থেকে কর্ণফুলী নদী হয়ে কাপ্তাই পর্যন্ত নৌ বিহার ব্যাপক আকারে চালু হলে পর্যটক বাড়বে। কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চালু হলে চীনের সাংহাইয়ের মত চট্টগ্রাম হবে ওয়ান সিটি টু টাউন। তখন কর্ণফুলীর ওপারেও পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হবে। পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ব্যাপক উদ্যোগ প্রয়োজন।
টুরিস্ট পুলিশ চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ মুসলিম বলেন, শীত আসতেই চট্টগ্রামের বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকের সমাগম বাড়ছে। করোনায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত এবং সেই সাথে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশ। পতেঙ্গাসহ কয়েকটি এলাকায় টুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। খুবশিগগির সীতাকুন্ডের গুলিয়াখালীসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে টুরিস্ট কাজ শুরু করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।