বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
গোলাম আশরাফ খান উজ্জ্বল
মক্কায় মুসলমানদের কেবলা পবিত্র কাবা শরীফ। এ কাবা শরীফ মহান আল্লাহতায়ালার এক অপূর্ব নিদর্শন। প্রতি বছর লাখ লাখ মুসলমান কাবাঘর তোয়াফ করতে মক্কা গমন করেন। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতারা কাবাঘর নির্মাণ করেন। কাবাঘরকে লক্ষ করে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সুরা আল-ইমরানের ৯৬ আয়াতে বলেন, “নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের ইবাদত গাহ রূপে নিরূপিত হয়েছে, তা ঐ ঘর যা মক্কাতে অবস্থিত”। কাবাঘরটি আল্লাহর আরশে মুয়াল্লাহর ছায়াতলে সোজাসুজি বাইতুল মামুরের আকৃতি অনুসারে স্থাপন করা হয়েছে। হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.)-এর পৃথিবীতে মিলন হলে তারা উভয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ইবাদতের জন্য একটি মসজিদ হযরত আদম (আ.) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। আল্লাহ তাদের দোয়া কবুল করেন এবং বাইতুল মামুরের আকৃতিতে পবিত্র কাবাঘর স্থাপন করেন। এখানে হযরত আদম (আ.) সন্তুÍষ্টচিত্তে আল্লাহর ইবাদত করতে থাকেন (শোয়াব-উল-ইমান, হাদিসগ্রন্থ) অনেক তফসিরবিদের মতে, মানব সৃষ্টির বহু আগে মহান আল্লাহতায়ালা কাবাঘর সৃষ্টি করেন। তফসিরবিদ মুজাহিদ বলেন, “আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাইতুল্লাহর স্থানকে সমগ্র ভূপৃষ্ঠ থেকে দু’হাজার বছর আগে সৃষ্টি করেন”। মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে হযরত আবুযর গিফারী হতে বর্ণনা হয়েছে, রাসূল (সা.) তার একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, “বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ হলো মসজিদে হারাম। এর পরের মসজিদ হলো মসজিদে আকসা। মসজিদে হারাম নির্মাণে ৪০ বছর পর মসজিদে আকসা নির্মিত হয়”।
হযরত আদম (আ.) কাবাঘর আল্লাহর আদেশে পুনঃনির্মাণ করেন। এরপর বহুদিন অতিক্রম হলো। শত শত বছর অতিবাহিত হলো। আল্লাহর বান্দারা কাবাঘর জিয়ারত করতঃ আল্লাহর কাছে হাজিরা দিত এ কাবাঘরে সমবেত হয়ে মহান আল্লাহর পবিত্রতা ও অংশীদারহীনতা ঘোষণা দিত। “লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নেয়ামাতা, লাকাওয়াল মুলক, লাশারিকা, লাকা লাব্বইক”। এভাবে চলতে চলতে দিন গত হতে থাকল। এরপর হযরত শীস (আ.) কাবাঘর পুনঃনির্মাণ করলেন। দিন দিন একাত্ববাদের সংখ্যা বাড়তে থাকল। এরপর কাবা শরীফ নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ করেন হযরত ইব্রাহিম (আ.)। হযরত ইব্রাহিম (আ.) হযরত ইসমাইল (আ.)-কে সাথে নিয়ে কাবাঘর নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণ করেন। কাবাঘর সংস্কার করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন। “হে আমার প্রতিপালক। আমাদের উভয়কে আজ্ঞাবহ কর। আমাদের বংশ থেকে একটি অনুগত দল সৃষ্টি কর, আমাদের হজের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা কর। নিশ্চয়ই তুমি দয়ালু। হে আমাদের প্রতিপালক। তাদের মধ্যে থেকেই তাদের কাছে একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুন। যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াত তেলাওয়াত করবেন। তাদেরকে বিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন এবং পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই তুমি মহাপরাক্রমশীল”।
আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত হযরত ইব্রাহিম (আ.) ও হযরত ইসমাইল (আ.)-এর বংশ হতে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে শেষ নবী ও রাসূল হিসাবে আল্লাহ পৃথিবীতে প্রেরণ করেন, এরপর কয়েকশ’ বছর গত হলো। পবিত্র কাবাঘর সংস্কার করল আমালিকা সম্প্রদায়। তারপর আরো শত শত বছর কিংবা হাজার হাজার বছর গত হলো। পবিত্র কাবাঘর সংস্কার করল মক্কার জুরহাস সম্প্রদায়। আরবের অর্থাৎ মক্কায় যে সকল গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতিপত্তি ছিল, তাদের দায়িত্ব থাকত কাবা শরীফ রক্ষণাবেক্ষণের। এ দায়িত্ব পালনকে তারা সম্মানিত ও গর্বের মনে করত। শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিবাহিত হলো। কাবা শরীফ ও কাবাঘরকে সংস্কার করল মোযার সম্প্রদায়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) নবুয়ত প্রাপ্তির ৫ বছর আগে কাবাঘর সংস্কার করে মক্কার বিখ্যাত কোরাইশ বংশ। এ কোরাইশ বংশেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ৫৭০ খ্রি. জন্মগ্রহণ করেন। কোরাইশরা কাবা শরীফ সংস্কারের পর হাযরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। সকলের সম্মতিক্রমে আল্লাহর রাসূল কাবাগৃহে হাযরে আসওয়ান কাবা শরীফে স্থাপন করেন।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) জীবিত অবস্থায় ৬৪ হিজরিতে আব্দুল্লাহ ইবনে জোবায়ের (রা.) কাবা শরীফ সংস্কার করেন। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ৭৪ হিজরিতে কাবা শরীফ সংস্কার করেন। সুদীর্ঘ ১৪শ’ বছরে কাবাগৃহে আর কোনো সংস্কারের প্রয়োজন হয়নি। শুধুমাত্র কাবাঘরের চারপাশে অবস্থিত মসজিদে হারামের পরিবর্ধন, সংস্কার বা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। কাবাঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সৌদি রাজপরিবারের। সৌদি সরকারের প্রধান (বাদশাহ) কাবা শরীফের মুতওয়াল্লির দায়িত্বে থাকেন। ভৌগোলিক দিক দিয়ে মক্কা ও আরব উপদ্বীপ এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার মধ্যস্থলে অবস্থিত। মক্কানগরী পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে হওয়ায় মহান আল্লাহ কাবাঘর মক্কাতেই স্থাপন করেন। পবিত্র হজ পালন করতে লাখ লাখ মুসলমান মক্কা শরীফে গমন করেন। জিলহজ্ব মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে মূল হজ অনুষ্ঠিত হয়। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ঈদুল আজহার দিন। এ দিন কোরবানি দিতে হয়। যা হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর ও হযরত ইসমাইল (আ.)-এর স্মৃতি বহন করে চলছে হাজার হাজার বছর ধরে। যমযম কূপও ঠিক তেমনি হযরত ইসমাইল (আ.) ও তার মা বিবি হাজেরা (আ.)-এর স্মৃতি বহন করে চলছেন। এ যমযম কূপ মহান আল্লাহর কুদরতের অপরূপ ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। হজ মুসলমানদের ঈমানের অন্যতম স্তম্ভ। আরবের মক্কা নগরীর পবিত্র কাবাঘর হেফাজতের মালিক মহান আল্লাহ নিজে। বিশ্ব মুসলমানদের মিলন মেলা ঘটে হজের মাধ্যমে পবিত্র কাবা শরীফে। পবিত্র কাবাঘরকে ঘিরে মসজিদের হারামের অবস্থান। মসজিদে হারাম ৮৮.২ একর জমির উপরে নির্মিত। নয় লক্ষ মুসল্লি একসাথে নামাজ পড়তে পারেন। মসজিদে হারামের আয়তন তিন লক্ষ ছাপ্পান্ন হাজার আটশত বর্গমিটার।
লেখক : সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।