Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ডেইরী উন্নয়ন প্রকল্পে গাড়ি কিনে বছর পার

বাস্তয়নে অনিয়ম ও ধীরগতিতে সংসদীয় কমিটির অসন্তোষ | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

৪২৮ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি শুরু হয়। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের দুই বছরে অগ্রগতি মাত্র হয়েছে ৬ শতাংশ। আর ব্যয় ১৯৩ কোটি ৭৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা, যা মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রকল্পের জন্য একটি ফোর হুইলার, ৫টি ডাবল কেবিন পিকআপ, একটি মাইক্রোবাস এবং ৪১৮টি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে। তবে এসব গাড়ির বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই।
মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন ধীরগতি ও আর্থিক অনিয়ম নিয়ে সংসদীয় কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সংসদীয় কমিটি বলেছে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণ হচ্ছেনা। ব্যর্থ হচ্ছে সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ। গতকাল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩৮টি প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৩৮টি প্রকল্পের মধ্য ২৫ শতাংশের নিচে কাজের অগ্রগতি হয়েছে ১৩টি প্রকল্পের, ৫০ শতাংশের নিচে ৮টি, ৫১-১০০ শতাংশের ১৬টি, আর একটি প্রকল্প শতভাগ কাজ করেছে।
৪২৮ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি শুরু হয়। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের দুই বছরে অগ্রগতি মাত্র হয়েছে ৬ শতাংশ। আর ব্যয় ১৯৩ কোটি ৭৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকা, যা মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রকল্পের জন্য একটি ফোর হুইলার, ৫টি ডাবল কেবিন পিকআপ, একটি মাইক্রোবাস এবং ৪১৮টি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আব্দুস শহীদ বলেন, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যয় সঠিক না হলে সরকারের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয় না। কোনও প্রকল্পে শম্বুক গতি হলে এবং আর্থিক সুশাসন না থাকলে লক্ষ্য অর্জন পূরণ হয় না। মৎস্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সরাসরি জনগণের সঙ্গে সম্পর্কিত। এ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের দুরবস্থার কারণে আস্থা কমেছে। এরকম গাফিলতি হলে কীভাবে হবে?
এলডিডিপি প্রকল্প নিয়ে সভাপতি বলেন, ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা যে প্রকল্প, দুই বছরে তার কাজ হয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। গাড়ি কেনা ছাড়া আর কোনও কাজই করেনি। প্রকল্পের টাকায় ৪৯১টি মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে। তারা জানিয়েছে, মোটরসাইকেলগুলো উপজেলা কার্যালয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমি কোনও উপজেলায় এই প্রকল্পের কোনও মোটরসাইকেল দেখিনি। এগুলো কোথায় তাহলে? আমরা আগামী এক মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের সার্বিক কাজ নিয়ে কমিটিতে প্রতিবেদন দিতে বলেছি।
এই প্রকল্পের অধীনে করোনাভাইরাস মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের প্রণোদনা দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি বলে জানান আব্দুস শহীদ। তিনি বলেন, কমিটি জানতে চাইলে তারা বলেছে, অর্থ ছাড় হয়নি ইত্যাদি নানা অজুহাত। আমরা জানতে চেয়েছি, কেন প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। এখনও না দিলে কবে দেওয়া হবে?
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পে গাড়ি কেনা বাদে প্রকল্পটির আর কোনও বাস্তব অগ্রগতি না থাকায় এবং প্রকল্পের গাড়ি ও মোটরসাইকেল প্রকল্পের কাজের বাইরে ব্যবহার নিয়ে কমিটির পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এদিকে মৎস্য অধিদফতর থাকার পরেও মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সংসদীয় কমিটি।
কমিটির সভাপতি বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এত অধিদফতর। তার ওপর আবার করপোরেশনের কাজ কী? তারা জানিয়েছে, ১০ কোটি টাকা লাভ করেছে। কিন্তু ওই করপোরেশনে ২৯৭ জন লোকবল। তাহলে লাভ কীভাবে হলো? লোকবলের বেতন-ভাতা কত? সরকারের কাজ কী ব্যবসা করা? সরকার তো সেটা করে না।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, পিপিআর রোগ নির্মূল এবং ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প শুরু হয় ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি। ২০২২ সালে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ২ শতাংশ। ৩৪৫ কোটি ২ লাখ ৯৯ টাকার এই প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৬ কোটি ৬১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।
সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প শুরু হয়েছে ২০১৮ সালের জুন মাসে। ২০২৩ সালের জুনে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ১০ শতাংশ। এক হাজার ৮৬৮ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ের এই প্রকল্পে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩৮ কোটি ৬৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
এদিকে অধিদফতর থাকার পরেও মন্ত্রণালয় ই-সেবা কার্যক্রম নিয়ে প্রকল্প কেন নিয়েছে, তা জানতে চেয়েছে কমিটি। আব্দুস শহীদ বলেন, মন্ত্রণালয় নিজে প্রকল্প নিতে পারে কিনা, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। প্রকল্প নেওয়ার যে নীতিমালা সেখানে এটি পারমিট করে কিনা, তা জানাতে বলেছি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৫টি প্রকল্পের কাজে আর্থিক ও বাস্তব অগ্রগতি সমান থাকায় বিষয়টি তদারকি করে মন্ত্রণালয়কে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ থাকার সময়ে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করে সমুদ্রসম্পদ আহরণের সম্ভাব্য ক্ষেত্র খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। করোনাভাইরাস মহামারিকালে খামারিদের সাহায্য প্রদানে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা প্রণয়ন কীভাবে করা হয়েছে এবং হালদার উন্নয়ন নিয়ে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, সে বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হয়।
আব্দুস শহীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, এ বি তাজুল ইসলাম, বজলুল হক হারুন, আহসান আদেলুর রহমান, ওয়াসিকা আয়শা খান ও খাদিজাতুল আনোয়ার অংশ নেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ