Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সড়ক ঘেঁষে পুকুর খনন

আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

মো. আলতাফ হোসেন, বাগমারা (রাজশাহী) থেকে | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

রাজশাহীর বাগমারার পাকা সড়কগুলো ঘেঁষে পুকুর খননের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে। অনেক স্থানে পুকুরের পেটে সড়ক চলে যাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সড়কগুলো রক্ষায় উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় প্রকৌশলী দাবি জানানোর প্রেক্ষিতে এমপি আইনি পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
গত চার-পাঁচ বছর ধরে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ঘেঁষে পুকুর খনন করা হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সরকারি নির্দেশনা না মেনে এসব পুকুর খনন করছেন। গ্রামীণ সড়কের ধার ঘেঁষে পুকুর বা সেচ নালা তৈরি না করার নির্দেশ দিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি পরিপত্র জারি করেছে। বিভাগের উপসচিব জেসমিন পারভীনের স্বাক্ষর করা পরিপত্রে এটাকে ফৌজদারি অপরাধ বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত ছয়টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ওই পরিপত্রে।
উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ঘেঁষে প্রায় ২০-২৫টি পুকুর খনন করা হয়েছে। কোনো সুরক্ষা প্রাচীরও নির্মাণ করা হয়নি সড়কগুলো রক্ষায়। এর ফলে পুকুরের পেটে সড়ক চলে যাওয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে। সড়কগুলোকে বেশিদিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বছর না পেরুতেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়কগুলো। এর ফলে চলাচলে সমস্যা হওয়ার পাশাপাশি সরকারেও অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে। এসব কারণে প্রায়ই ছোট-খাটো দুর্ঘটনাও ঘটে।
উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এসব পুকুর দেখা যায়। উপজেলার ভবানীগঞ্জ-সইপাড়া, ভবানীগঞ্জ-কেশরহাট, শ্রীপুর-মোহনগঞ্জ, শিকদারী-তাহেরপুর, গোপালপুর-বালানগর, হাটগাঙ্গোপাড়া-দামনাশসহ কয়েকটি সড়কের পাশে পুকুর দেখা যায়। চার-পাঁচ বছরের মধ্যে এসব পুকুর খনন করা হয়েছে। এর মধ্যে রামরামা, মেন্দিপাড়া, দ্বীপপুর, সাঁইধারায় সড়কের পাশে পুকুর খনন করার জন্য বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই স্থানে সড়কের পেটে পুকুর প্রায় চলে গেছে। মেন্দিপাড়ায় আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তির পুকুরের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে তিনকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কটি। স্থানীয় প্রকৌশলীর দফতর ও লোকজনের উদ্যোগে সড়কগুলো রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে।
এসব সমস্যার কথা তুলে ধরে ও সড়কগুলো রক্ষার আহ্বান জানিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর উপজেলার মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় উপজেলা প্রকৌশলী বক্তব্য দেন। তিনি এই বিষয়ে সরকারি নির্দেশনাও তুলে ধরেন। উপজেলা প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর পাশে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র পুকুর খনন, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করা এবং মাটিভর্তি অবৈধ যান (ভটভটি, ট্রলি ও ট্রাক্টর) দেদারসে চলাচল করায় সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সড়ক নির্মাণের কিছুদিনের মধ্যেই সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এই বিষয়ে পুকুর মালিক ও অবৈধ যানবাহনের মালিকদের নিষেধ করলেও তাঁরা বিষয়টি আমলে নেন না। প্রভাবশালী হওয়ার কারণে ব্যবস্থাও নেয়া যায় না। পরে সভায় উপস্থিত সভার উপদেষ্টা স্থানীয় এমপি এনামুল হক এই বিষয়ে রেজুলেশনের মাধ্যমে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সভাকে জানান। তিনি যে কোনো মূল্যে সড়ক রক্ষায় শক্ত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
সড়ক ঘেঁষে পুকুর খননকারীদের মধ্যে আবুল হোসেন ও রফিকুল ইসলাম বলেন, নিজেদের জমিতে তারা পুকুর খনন করেছেন। তবে ওই সময়ে প্রশাসনের পক্ষে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও হুমকির মুখে পড়েছে বলে স্বীকার করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ বলেন, এর আগে কয়েকজন পুকুর মালিককে সড়ক ঘেঁষে পুকুর খনন করায় ধরে নিয়ে এসে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তারা এই ধরণের কাজে জড়াবেন না বলেও মুচলেকা দিয়েছেন। নতুন করে যাতে কেউ পুকুর খনন করতে না পারে এবং সড়কগুলো রক্ষায় এমপির নির্দেশনা মানা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ