Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণে কেলেঙ্কারি

দেড়যুগ পর ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

৩০ জানুয়ারি বগুড়া সদরের দশটিকা গ্রামে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে গুচ্ছ গ্রামের খাস জমিতে ৪৫টি পাকা ঘর নির্মাণে দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন সময় টেলিভিশনের দুই সাংবাদিক মাজেদ রহমান ও রবিউল ইসলাম রবি।
জানা যায়, হামলাকারী সন্ত্রাসীরা তাদের ভিডিও ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন ৩১ ডিসেম্বর সকালে বগুড়া শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় জড়ো হয়ে হামলার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার দাবি করেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। পরে দুপুরে এ ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় একটি মামলা করা হয়। ফলে পুলিশ তৎপর হয়ে উঠলে টনক নড়ে হামলার নেপথ্যের কুশীলবরা। ওই দিনই সাংবাদিকদের মানববন্ধনকে কাউন্টার দিতে তড়িঘড়ি করে দশটিকা গ্রামে প্রকল্পস্থলে পাল্টা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
এ ছাড়া বিকেলে বগুড়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান শফিক বগুড়া সদরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজুর রহমান ও উপজেলা প্রকৌশলী মেহেদী হাসানকে ডিফেন্ট করে কৌশলী সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন। উপজেলা পরিষদের নিজস্ব সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলন উপজেলা চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হামলাকারীদের জাস্টিফায়েড করতে বলেন, ওই সাংবাদিক দুজন প্রকল্পের একটি পিলার ধাক্কা দিয়ে ভেঙে ফেললে কে বা কারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরি করে।
অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে অনুষ্ঠিত এই সাংবাদিক সম্মেলনের পর অনেকেই দেড় যুগ আগে বগুড়ার খাদ্য বিভাগের পঁচা ও নিম্নমানের ভারতীয় গম সংগ্রহের সংবাদ মিডিয়ায় প্রচার হলে নাটকীয়ভাবে তৎকালীন এমপি হেলালুজ্জামান লালু খাদ্য বিভাগের গোডাউনে মজুদ পঁচা গমকে ভালো বলে সার্টিফিকেট দিলে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। গম কেলেঙ্কারির সাথে এমপি লালুর বিজনেস পার্টনার টেলুর সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ হয়ে পড়ে। ২০০২ সালের ওই ঘটনাটি তৎকালীন ৪ জোট সরকারের ভাবমুর্তি দারুণভাবে ক্ষুন্ন হয়।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, বগুড়ার ১২ উপজেলায় ১,৪৫২টি পাকা বাড়ি ভ‚মিহীনদের বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। প্রতিটি ঘর নির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এই প্রকল্প সম্পর্কে প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, সরাসরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণই উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছে। এর পরিপত্র বা নিয়মকানুন সম্পর্কে জনপ্রতিনিধি বা মিডিয়াকেও কিছুই জানানো হচ্ছে না। প্রকল্পটির সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বগুড়ায়।
বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, করতোয়া নদীসহ বিভিন্ন বালু মহাল থেকে বেআইনি বালু উত্তোলনসহ সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের বহু অভিযোগ মিডিয়ায় প্রকাশ হলেও কর্তৃপক্ষ তাদের কোনো অভিযোগই আমলেই নেয়নি। কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য জানিয়েছেন, সরকারি প্রকল্পের অনিয়ম ও দুর্নীতি খোলাখুলিভাবে চলছে। অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার না হওয়ায় সবাই হতাশ।
একাধিক জনপ্রতিনিধি বলেছেন, বগুড়া সদরের দশটিকা গ্রামের প্রকল্পের ঘর নির্মাণে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকাও খরচ করা হয়েছে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। মূলত সে কারণেই গত ৩০ ডিসেম্বর সরেজমিনে সংবাদচিত্র ধারণ করতে গেলে সময় টিভির ২ সাংবাদিককে মারপিট করে টেলিভিশন ক্যামেরা ও মোবাইল ছিনতাই করা হয়। এই ঘটনায় দোষীদের শাস্তির পদক্ষেপের বদলে উল্টো সাংবাদিকদের ভিক্টিমাইজ করতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিক সাংবাদিক সম্মেলনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ