Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মানবিক বিশ্বের প্রত্যাশা

বিদায় ২০২০

স্টালিন সরকার | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:১০ এএম

২০২০ সালকে নাড়িয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ভাইরাসটিই ছিল সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু। একটি অদৃশ্য ভাইরাস গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছে; স্থবির করেছে অর্থনীতির চাকা। এ ভাইরাসে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৭৩১ জন। বাংলাদেশে মারা গেছেন ৭ হাজার ৫৩১ জন। বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৮ কোটি ১৯ লাখ ৬০ হাজার ১৪ জন। বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ ১২ হাজার ৪৯৬ জন। বিশ্বের যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল এ অচেনা ভাইরাস। ভাইরাসটি কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন, লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব, হাত ধোঁয়া ইত্যাদি শব্দগুলোকে মানুষের কাছে নতুন করে অর্থবহ করে তুলেছে।

সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশও করোনাভাইরাসের ছোঁবলে আক্রান্ত। বছরছুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কপাট খোলেনি। অফিস আদালত দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সীমিত পরিসরে খুলেছে। এ ভাইরাসের হাজারো নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যে ডিজিটালের ব্যবহার মানুষকে ‘নতুন চোখ’ দান করেছে। অনলাইনে কেনাবেচা, পড়াশোনা, মানুষের জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এমনকি ভার্চুয়ালি বিচার প্রক্রিয়া চলেছে। সবকিছুতেই স্থবিরতা নেমে এলেও দুর্নীতি-লুটপাটে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। দেশের দুর্নীতিবাদরা বছরজুড়ে দাপট দেখিয়েছে, নৃত্য করেছে করোনার নেগেটিভ-পজেটিভ সার্টিফিকেট নিয়েও। বিনিয়োগ, অর্থনীতিতে অস্থিরতা, কলকারখানার চাকা বন্ধ, বেকারত্ব মানুষকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। তবে আশার কথা উন্নয়নের মেগা প্রকল্পগুলো ধীর গতিতে হলেও এগিয়ে চলছে। বিনিয়োগ কমলেও রেমিট্যান্স ও রিজার্ভ বেড়েছে। অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখা এবং মানুষকে খেয়েপড়ে বাঁচানোর জন্য সরকার থেকে নানা প্রণোদনা প্যাকেট দেয়া হয়েছে।

সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্র সংকুচিত হলেও করোনায় ধর্ষণ, খুন, সীমান্ত হত্যা, বিদেশে টাকা পাচারের মতো অপরাধগুলো থেমে ছিল না। করোনা মানুষকে একাকিত্ব করে তুলেছে, স্বার্থবাদী করেছে আবার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দিয়েছে। বিশ্বের সুপার পাওয়ার দেশগুলোর ক্ষমতাধর নেতাদের যেমন চুপসে দিয়েছে; তেমনি স্বার্থবাদিতার স্বরুপ উন্মোচন করেছে। হিন্দুত্ববাদী ভারত করোনার মধ্যেই ‘পেঁয়াজ’ নিয়ে বন্ধু বাংলাদেশকে ‘খেল’ দেখিয়েছে। গতিহীন রাজনীতিতে গণতন্ত্র চর্চার কথা বলা হলেও মানুষ নির্বাচন বিমুখ হয়ে গেছে। টিকে থাকার চেষ্টায় গণমাধ্যমে ‘সেলফ সেন্সরশীপ’ বেড়েছে। করোনা প্রশাসনের বার্ষিক কর্মসূচি ওলোটপালটপ করে দিয়েছে। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর প্রভাবশালী দেশগুলো সবগুলো ভ্যাকসিন পেতে আগাম বুকিং দিয়ে নিজেদের অমানবিকতার মুখোশ উন্মোচন করেছে। তাই সারাবিশ্বে আওয়াজ উঠেছে নতুন বছরে চাই বিশ্ব হোক মানবিক।

মাস্ক, হাত ধোয়া : হাসপাতালে অপারেশন করার সময় সাধারণত চিকিৎসকদের মাস্ক পরতে দেখা যেত। ২০২০ সালে করোনার কারণে বিশ্বের সব মানুষের জন্যই বাধ্যতামূলক হয়ে যায় মাস্ক। করোনা ঠেকাতে মাস্কের ব্যবহার করা হয়, মাস্ক নিয়েও চলছে গবেষণা, আজকাল ফ্যাশনেরও অংশ করা হচ্ছে মাস্ককে। সার্জিক্যাল মাস্ক বা কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করা হলেও, দু’একজন স্বর্ণ-রুপার মাস্কও তৈরি করেছেন।

হাত ধোঁয়া নিজেদের জীবাণুমুক্ত রাখার যে চেষ্টা- এটা আগের চেয়েও অনেক বেড়ে গেছে এবছর। সাবানের ব্যবহার যেমন বেড়েছে, তেমনি যোগ হয়েছে স্যানিটাইজারের ব্যবহারও।

কোয়ারেন্টিন : একেবারেই নতুন ধারণা নিয়ে এসেছে কোয়ারেন্টিন শব্দটি। সঙ্গে আইসোলেশন, লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব শব্দগুলো। কেউ কোথাও গিয়ে সরাসরি বাইরে ভ্রমণের সুযোগ বন্ধ-আগে ১৪ দিন ঘরবন্দি থাকে। এই ঘরবন্দি সময়কেই বলা হয় কোয়ারেন্টিন। করোনার শুরুর দিকে সবচেয়ে ভয়াবহ শব্দ হয়ে দাঁড়ায় আইসোলেশন। কারো মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই তাকে সবার থেকে আলাদা করে রাখা হয়। রোগের কষ্টের চেয়ে সবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে একা থাকার মানসিক চাপ যেন তীব্র কষ্টের কারণ হয়। এটাকে বলা হয় আইসোলেশন। মহামারি করোনা শিখিয়েছে কীভাবে সবার থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বারবারই প্রচার করা হয় অন্যজনের সঙ্গে অন্তত তিন থেকে ছয় ফিট শারীরিক দূরত্ব রাখতে। লকডাউন হলো বাইরে বের হওয়া বন্ধ। শুধুমাত্র হাসপাতাল ছাড়া আর কিছুই যেন খোলা হয়নি সারাদিন, রাস্তায় নেই কোনো গাড়ির শব্দ, সবকিছু বন্ধ করে রাখাকে লকডাউন বলা হয়।

ভ্যাকসিন : পুরো একটা বছরে আট কোটি মানুষ আক্রান্ত হয় মহামারি করোনায়। মৃত্যু হয় ১৭ লাখের বেশি মানুষের। আর করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন সাড়ে পাঁচ কোটির বেশি মানুষ। এ ভয়াবহ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মানুষ অপেক্ষার প্রহর গুনেছে। করোনা থেকে মানুষকে বাঁচাতে আবিষ্কার করা হয় ভ্যাকসিন বা টিকা। বিশ্বের কয়েকটি দেশ টিকা আবিষ্কার করেছে; আমেরিকাসহ কয়েকটি দেশে টিকার ব্যবহারও শুরু হয়ে গেছে। কবে পাওয়া যাবে সেই কাক্সিক্ষত ভ্যাকসিন-টিকা সে প্রত্যাশায় বাংলাদেশ-ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশ।

টেস্ট-পজিটিভ-নেগেটিভ : জ্বর-কাশি-শ্বাসকষ্টসহ যে কোনো করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই করোনা টেস্ট করা হয়। যাদের করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ আসে তাদেরকে চিকিৎসকের পরামর্শমতো চলতে হয়েছে। শুরুর দিকে করোনা পজিটিভ হওয়া মানে তার ও তার পরিবারের সবার জীবনেই যেন অভিশাপ নেমে আসে। পেয়ে বসে মরণআতঙ্ক। তবে পরবর্তীতে চিকিৎসার জন্য গড়ে ওঠে বিশেষায়িত হাসপাতাল। চিকিৎসকদের দেওয়া হয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ও পিপিই (বিশেষ পোশাক, করোনার জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে পারে না) ধীরে ধীরে মানুষের আতঙ্কও কমে যায়। করোনা পজিটিভ এলে, ১৪ দিন আইসোলেশনে থেকে তারপর আবার পরীক্ষা করাতে হয়। করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলেই বন্দি জীবন থেকে মুক্তি। ফিরতে পারেন সবার মাঝে স্বাভাবিক জীবনে।

মুজিববর্ষ : ২০২০ সালের মার্চ মাসেই বাংলাদেশ সরকারের ঘোষণা করা মুজিববর্ষ বিপুল আয়োজনে শুরু হওয়ার কথা ছিল। ২০২০ ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ ঘোষণা করে সরকার। দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে আয়োজনের প্রস্তুতি ছিল। সাবেক সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে প্রধান সমন্বয়ক জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। ব্যাপক প্রস্তুতির পর করোনাভাইরাসের কারণে সেটাকে সংক্ষিপ্ত করে পুনঃবিন্যাস করা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার মুক্তি : বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ এবং ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ সম্পর্কিত দু’টি দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছরের সাজা নিয়ে কারাভোগ করছিলেন। দুইবছরের বেশি সময় কারাভোগের পর করোনাভাইরাস সংক্রমণকালে তাকে কারাভোগ স্থগিত করে মুক্তি দেয়া হয়।

ধর্ষণ : বছরজুড়ে বেশ কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় হয়েছে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে সেপ্টেম্বর মাসে। অক্টোবরে সোশাল মিডিয়াতে দেড় মিনিটের একটা ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে আলোড়ন শুরু হয়। মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ঘটনার বিচার দাবি করে। সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে এক তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় সিলেটসহ সারা দেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সাধারণ মানুষ। সিলেটের টিলাগড় এলাকার এমসি কলেজের গেটের সামনে থেকে এক তরুণীকে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন। ওই তরুণী স্বামীর সাথে একটি গাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। তরুণীর স্বামী এজাহারে উল্লেখ করেন, তার স্ত্রীকে যখন জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন দুই ব্যক্তি তাকে গাড়িতে আটক করে রাখে।

বছরের শুরুতেই রাজধানী ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। সন্ধ্যায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে চড়ে বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছিলেন। উদ্দেশ্য একসাথে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবেন। সন্ধ্যায় কুর্মিটোলা এলাকায় অজ্ঞাত এক ব্যক্তি তার মুখ চেপে ধরে পাশের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে। ঘটনার আকস্মিকতায় জ্ঞান হারান ছাত্রীটি। নির্যাতনের এক পর্যায়ে জ্ঞান ফিরে পান বান্ধবির বাসায় গিয়ে ঘটনা প্রকাশ করেন।

মেজর সিনহা হত্যা : বছরের আলোচিত ঘটনার মধ্যে একটা হত্যাকান্ড পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে ব্যাপক রদবদল ঘটায়। সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান ৩১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। বছরের অনেকটা সময়জুড়ে আলোচিত ছিল কক্সবাজারে এ সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা হত্যাকান্ড। এই হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে ‘ক্রসফায়ার’ ব্যবহারের পক্ষে-বিপক্ষে নানা ধরনের বিতর্ক হয়।

এ ছাড়াও ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় মাসুদ রানা নামের এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ করে তার পরিবার। এরপর ১১ অক্টোবর সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে মাত্র ১০ হাজার টাকা ঘুষের জন্য পুলিশ সদস্যদের নির্মম-নির্যাতনে রায়হান আহমেদ নামে যুবকের হত্যার অভিযোগ ওঠে।

প্যাকেজ ঘোষণা : করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে স্কুল-কলেজ-মাদরাসা-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব অফিস-আদালত বন্ধ করে দেয়া হয়। অফিস-আদালত, গণপরিবহন, রেল, লঞ্চ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ঘরে বসে থাকতে হয় লাখ লাখ নিম্নআয় ও মধ্যবৃত্ত কর্মজীবীকে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে খেতমজুর, পরিবহন শ্রমিক, কলকারখানার শ্রমিকদের ঘরে বসে থাকতে হয়; আবার গার্মেন্টস শিল্প বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়া করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করায় কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন, লকডাউন ইত্যাদির কারণে অবর্ণনীয় দুর্দশায় পড়েন সাধারণ মানুষ। এ কর্মহীন মানুষদের সহায়তার লক্ষ্যে দুই দফায় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। ২৫ মার্চ ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। অতপর দ্বিতীয় দফায় ৫ এপ্রিল ৬৭৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। ২১ দফা প্রণোদনা প্যাকেজে বিতরণে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশলান, সিপিডি, সুজনসহ কয়েকটি সংগঠন। প্রধানমন্ত্রী ৫০ লাখ পরিবারকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২৫শ’ করে টাকা সহায়তা করেন।

পাটকল-চিনিকল বন্ধ : বছরজুড়ে ছিল পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলন। পরে যুক্ত হয় চিকিকল শ্রমিকদের আন্দোলন। পহেলা জুলাই সরকার ২৫টি রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধ করে দেয়। এ সব পাটকলে কর্মরত প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিককে তাদের পাওয়া পরিষদের ঘোষণা দেয়। শ্রমিকরা বন্ধের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন। অতঃপর ডিসেম্বর মাসের প্রথম সাপ্তাহে রাষ্ট্রীয় ৬টি চিনি কল বন্ধ করে দেয়া হয়। কলগুলো বন্ধের প্রতিবাদে সারা দেশে শ্রমিকরা আন্দোলনে মাঠে নামে।

অর্থনীতির হালচাল : বছরজুড়ে অর্থনীতিতে মিশ্রভাব দেখা গেছে। বেসরকারি বিনিয়োগ কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। করোনার কারণে বিদেশে কর্মরত প্রবাসী শ্রমিকদের বিশাল অংশ দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। আবার যারা ছুটিতে দেশে এসেছেন তারাও আটকে পড়েন। এ নিয়ে রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে সরকার রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দেয়ায় বছরের শেষদিকে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে এসেছে ২০ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৯ সালের পুরো সময়ের চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। এর আগে এক বছরে দেশে এতো রেমিট্যান্স আর কখনও আসেনি।

শেয়ারবাজার : করোনার কারণে দেশের শেয়ারবাজার টানা ৬৬ দিন বন্ধ ছিল। এ সময় ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুই শেয়ারবাজারে কোনো লেনদেন হয়নি। তবে শেয়ারবাজারের দরপতান ঠেকাতে শেয়ার বাজারে শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দেয়া হয়। নতুন এ পদ্ধতির নাম দেয়া হয় ফ্লোর প্রাইস। এতে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধনে একের পর এক রেকর্ড সৃষ্টি হয়। গত ২৮ ডিসেম্বর দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডিএসইর বাজার ম‚লধন ৪ লাখ ৪১ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

আশা জাগাচ্ছে রফতানি আয় : করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল রফতানি। গার্মেন্টস পণ্যের রফতানি কমে গেছে। বিদেশি বায়াররা বিপুল পরিমাণ রফতানি অর্ডার বাতিল করেছেন। ব্যবসায়ীদের মতে মহামারি করোনার কারণে যে ধাক্কা লেগেছে রফতানি খাতে। তৈরি পোশাক রফতানিতে বড় উল্লম্ফন ঘটতে পারে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, কারোনা ধাক্কার মধ্যেই নভেম্বরে ফের প্রবৃদ্ধিতে ফিরেছে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক রফতানি আয়। করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ায় গত এপ্রিলে বাংলাদেশের রফতানি আয় তলানিতে ঠেকে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর মাসে ৩০৭ কোটি ৮৯ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) এক হাজার ৫৯২ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ।

ব্যাংকিং সেক্টর : করোনায় ব্যাংকিং খাত সচল থাকলেও ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে এ সময়ে খোলা ছিল কিছু ব্যাংকের শাখা। ব্যাংকের সুদের হার বেঁধে দেয়া হয় সর্বোচ্চ শতকরা ৯ শতাংশ। তবে ব্যাংকিং সেক্টরে করোনার প্রভাব ব্যাপকভাবে লেগেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভের রেকর্ড হয়েছে। বর্তমানে ৪৩ বিলিয়ন ডলার জমা হয়েছে।

উত্থান-পতনে প্রবৃদ্ধি : করোনার কারণে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পতন হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসেবে ২০১৯-২০ সালে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। তবে মহামারি করোনাকালে যেখানে বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতির দেশে কোনও প্রবৃদ্ধিই হচ্ছে না। তখন টানা তিন মাস লকডাউনের কারণে সব কিছু বন্ধ থাকার পরও বাংলাদেশে এ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের সিঁড়িতে পা দেবে ২০২৪ সালে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, ২০২০ সালে পঞ্জিকাবর্ষে মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) এর সর্বশেষ রিপোর্টের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বিকাশ অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২১’ নামের ওই রিপোর্টটি গত ২৫ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩৫ সাল নাগাদ ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বহু ধাপ ওপরে উঠে পৌঁছে যাবে ২৫ নম্বরে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

তবে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর তথ্য মতে করোনার মধ্যে দেশে এক কোটি ৬৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের নগরগুলোতে শতকরা ৭২ শতাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। ৮ শতাংশ মানুষ দিনে এক বেলা খেতে পারেন না।

ধীরগতি মেগা প্রকল্প : লকডাউন আর বিদেশি শ্রমিক-প্রকৌশলীদের ফিরে যাওয়ায় এ বছর সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেলের মতো বড় প্রকল্পের কাজ এগোতে পারেনি কাক্সিক্ষত দ্রুততায়। তবে বছরের শেষ দিকে এসে গতি পেয়েছে অধিকাংশ প্রকল্প। স্বপ্নের পদ্মা সেতু এ ডিসেম্বরেই পেয়েছে পূর্ণ অবয়ব। একইভাবে দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩১ শতাংশের বেশি ভৌতকাজ এ পর্যন্ত শেষ হয়েছে। মহামারির মাঝেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু করার নতুন লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে এখন। অন্যসব মেগা প্রকল্পের কাজও চলছে দ্রুতগতিতে।

বিপর্যস্ত শিক্ষা খাত : করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের শিক্ষা খাত। এ পরিস্থিতিতে কমপক্ষে ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়বে বলে শিক্ষাবিদদের আশঙ্কা। পাশাপাশি বেড়ে গেছে শিশু শ্রম, বাল্যবিয়ে ও পুষ্টিহীনতা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশে অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে লাখ লাখ খেটে খাওয়া, দিনমজুর মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কর্মহীন দরিদ্র সেসব শ্রেণির মানুষ তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতে বিদ্যালয়ে পাঠাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর এবং মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক অধিদফতর এবং ব্যানবেইস এর তথ্য অনুযায়ী দেশে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ কোটি ১৯ লাখ ৩২ হাজার ৬৩৮ জন শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৭৫ লাখ ১০ হাজার ২১৮ জন। আর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী ২৯ লাখ ১৫ হাজার ৮৫১ জন। মাদরাসা শিক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ৭০ হাজার ৯৯৮ জন। তবে কওমী মাদরাসায় পড়ছেন ১০ থেকে ১২৩ লাখ শিক্ষার্থী। টিচার অ্যাডুকেশনে পড়ছেন ৩৮ হাজার ৬৯১ জন শিক্ষার্থী। কারিগরি শিক্ষায় পড়ছেন ৫ লাখ ৬ হাজার ৫৫৬ জন শিক্ষার্থী। বাকিরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে। ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরীক্ষা না হওয়ায় সারা দেশের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের ১২ লাখ শিক্ষার্থী হোঁচট খেয়েছে। তাদের অটোপাস দেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত রেজাল্ট ঘোষণা হয়নি। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের আরো ১২ লাখ শিক্ষার্থীর সব ধরনের পরীক্ষা আটকে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় টেলিভিশন, রেডিওতে পঠনপাঠন এবং অনলাইনে ক্লাসে ব্যবস্থা করলেও যা ছিল খুবই অপ্রতুল।

ধর্ম অবমাননার গুজব : লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করে তার মরদেহ পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় হতবাক করে মানুষকে। পাটগ্রামে শহীদুন নবী জুয়েল নামে এক ব্যক্তির নামে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে শত শত মানুষ তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলে এবং লাশ আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই নৃশংস ঘটনার ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে। ঘটনাটি নিয়ে প্রশাসন তৎপর হওয়ার পর স্থানীয় আলেম সমাজ অপরাধীর বিচারের দাবি জানান। অতঃপর অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়।

ভাস্কর্য বিরোধ : বছরের শেষদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বসানোর নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। ঢাকা টু মাওয়া হাইওয়ের সম্মুখে ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। হেফাজতের ইসলাম সেটাকে মূর্তি হিসেবে অবিহিত করে বঙ্গবন্ধুর মূর্তি বসানোর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন। সারা দেশের আলেম সমাজ সেই আন্দোলনে শরীক হলে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। প্রচার করা হয় মূর্তি আর ভাস্কর্য এক জিনিস নয়। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বসানোর সিদ্ধান্তে সরকার অটোল থাকে। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে হেফাজতের আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর পরিস্থিতি কিছুটা থিতিয়ে যায়।

রোহিঙ্গা : মিয়ানমারের সামরিক সরকারের জুলুম ও নির্যাতনে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেনি। তবে এ বছর তাদের ভাসানচরে নেয়া শুরু হয়েছে। ৫ ডিসেম্বর প্রথম ১৬৪২ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ভাসানচরে নেয়া হয়। অতপর দ্বিতীয় দফায় গত ২৯ ডিসেম্বর কয়েকশ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ভাসানচরে নেয়া হয়।

দেশের মানুষের প্রত্যাশা ২০২১ সাল হবে করোনামুক্তের বছর। প্রশাসন থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের সম্পদশালী ও ক্ষমতাশালীরা হবেন আরো মানবিক। দেশ-বিদেশে বইবে মানবিকতার শ্রোতধারা। সে প্রত্যাশায় বুক বাঁধছেন দেশের ১৭ কোটি মানুষ।



 

Show all comments
  • Morshed Anam ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৫৭ এএম says : 0
    আল্লাহ রহম করো।আমরা তোমার দিকে তাকিয়ে। তুমি পালনকর্তা নিশ্চয় তুমি ভালো কিছু করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jalal Uddin Anc ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৫৮ এএম says : 0
    ২০২০ সালটা যেন বিষের মতোই পোয়াতে হচ্ছে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ,
    Total Reply(0) Reply
  • Md Syed Alam ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৫৮ এএম says : 0
    বিশ বিশ নয় এ বছর টা খেটে খাওয়া মানুষের জন্য বিষ বিষ সাল।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Owakil ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৫৯ এএম says : 0
    বিভিন্ন রকমেত নাটকীয় দিয়ে ২০২০ সাল শেষ হয়ে যাবে। করোনাভাইরাস থেকে সকল মানুষ কে আল্লাহ হেফাজত করুক।
    Total Reply(0) Reply
  • Roza Moni ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৫৯ এএম says : 0
    হে আল্লাহ আপনি সহায় হন আপনি আমাদের ভরসা
    Total Reply(0) Reply
  • Sarowar Sohel ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৫৯ এএম says : 0
    আল্লাহ্ সবাইকে হেপাজত করুক..
    Total Reply(0) Reply
  • সজল মোল্লা ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
    আগামী বছর হোক আশার ভরসার।
    Total Reply(0) Reply
  • গাজী ওসমান ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:০১ এএম says : 0
    ইনশায়াল্লাহ, এই সংকট কেটে যাবে। নতুন বিশ্ব দেখবো আমরা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ