পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে চলতি বছর শিক্ষা কার্যক্রম ছিল স্থবির। বন্ধ ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লাস, পরীক্ষা। প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকে (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি), উচ্চমাধ্যমিকের এইচএসসি-আলিমে পরীক্ষা ছাড়াই দেয়া হয়েছে অটো পাস। এরই মধ্যে শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাবর্ষ, বই বিতরণ, ঘোষণার অপেক্ষায় এইচএসসি-আলিম পরীক্ষার ফল, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, অন্যান্য শ্রেণিতে পুনঃভর্তি। আবার নতুন বছরে এসএসসি-দাখিল ও এইচএসসি-আলিম পরীক্ষা। বিষয়গুলো নিয়ে নানা প্রশ্ন ছিল শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সার্বিক বিষয় তুলে ধরে গতকাল মঙ্গলবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
চলতি বছর অটোপাস দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই এইচএসসি-আলিম পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার কথা বলেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ফল প্রকাশের জন্য প্রস্তুত। এখন অপেক্ষা অধ্যাদেশের। কারণ পরীক্ষার ফল সংক্রান্ত আইন রয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে ফল প্রকাশের জন্য একটি অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। তবে ডিসেম্বরে যে ফলাফল দেওয়া যাচ্ছে না, সে কথা জানিয়ে দীপু মনি বলেন, এইচএসসির ফল তৈরি আছে, অধ্যাদেশ জারি করা প্রয়োজন, এটি জারি করা মাত্রই ফল দিয়ে দিতে পারব। আশা করি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এটি জারি করতে পারব, এটি জারি করতে পারলেই ফল দিয়ে দেব। এইচএসসি-সমমানের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল যে প্রাধান্য পাবে। জেএসসি-জেডিসির ফলাফলকে ২৫ এবং এসএসসির ফলকে ৭৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষিত হবে।
জুনে এসএসসি-দাখিল জুলাই-আগস্টে এইচএসসি-আলিম পরীক্ষা: করোনার কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেয়েছে। দফা দফায় এই ছুটি বাড়িয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে টেলিভিশন ও অনলাইনে ক্লাস সম্প্রচারিত হলেও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ছিলো এই সুবিধার বাইরে। একারণে ২০২১ সালের এসএসসি-দাখিল ও এইচএসসি-আলিম পরীক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে সামনে তাদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে হবে। এজন্য বেশ কয়েকবছর ধরে চলে আসা রীতি ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি-দাখিল ও এপ্রিলে এইচএসসি-আলিম পরীক্ষা পিছিয়ে দিচ্ছে মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রী জানান, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এই সময়কালে ক্লাসরুমে পড়ানোর উদ্যোগ নেব, সেই চেষ্টা করছি। পরিস্থিতি যদি অনুক‚লে থাকে, ২০২১ সালের জুন নাগদ এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা হবে। সেজন্য স্কুল খুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে, যাতে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষেই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ক্লাস নিয়ে পরীক্ষার জন্য তৈরি করা যায়। আর এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ক্লাসরুমে নিয়ে ক্লাস করানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। জুলাই-অগাস্ট নাগাদ এইচএসসি পরীক্ষা গ্রহণের আশা প্রকাশ করছি।
নম্বর থাকছে না জেএসসি-জেডিসিতে: করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার পরীক্ষা ছাড়াই জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার্থীদের পরের ক্লাসে তোলা হচ্ছে। এজন্য এবার তাদের সনদপত্রে কোনো জিপিএ থাকবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এ বছর জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা গ্রহণ করতে পারিনি, সম্ভব হয়নি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন সম্পন্ন করেছে। ইতোমধ্যে শিক্ষাবোর্ডগুলো জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের কাজও সম্পন্ন করেছে। বোর্ডগুলো সকল শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ সদন দেবে, কিন্তু কোনো নম্বরপত্র দেওয়া হবে না শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা যদিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে কিছুটা মূলায়ন করেছি, সে মূল্যায়নপত্রও আমরা সংগ্রহ করব। কিন্তু আমরা কোনো নম্বরপত্র এবার দিচ্ছি না, এ কারণে জেএসসি-জেডিসির সনদপত্রে জিপিএ উল্লেখ থাকবে না। এদিকে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষাও এবার হয়নি। পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীরা সবাই পরের ক্লাসে উঠে যাবে। তবে শিক্ষার্থীদের কোথায় দুর্বলতা তা বোঝার জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে সাপ্তাহিক অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
থাকছে না শ্রেণি রোল: করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার মাধ্যমিকের নতুন ক্লাসে ওঠা শিক্ষার্থীদের চিরাচরিত প্রথায় রোল নম্বর দেওয়া হবে না। এজন্য বার্ষিক পরীক্ষার মেধাক্রমের ভিত্তিতে আগে যে রোল নম্বর দেওয়া হত, তার বদলে শিক্ষার্থীদের এবার আইডি নম্বর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা আগের ক্লাসের রোল নিয়ে পরের ক্লাসে উঠবে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন জানিয়েছেন।
দীপু মনি বলেন, রোল নম্বর নিয়ে একটা সমস্যা হয়। প্রত্যেক শ্রেণিতে যে রোল নম্বর থাকে, আমাদের রোল নম্বরের যে প্রথা রয়েছে, তার কারণে একটা অনভিপ্রেত প্রতিযোগিতা হয় এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক সময় যে সহযোগিতার মনোভাব, যেটি থাকার দরকার, অনেক সময় সেটির অভাব ঘটে রোল নম্বরের কারণে, সামনে আসতে চায় সবাই। আমরা চেষ্টা করছি ২০২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের শ্রেণির রোল নম্বরের এই বিষয়ের পরিবর্তে আইডি নম্বর প্রদান করতে, এতে পুরানো রোল নম্বর প্রথার বিলুপ্তি হবে এবং অনভিপ্রেত প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা সৎ প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হবে বলে আশা করছি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক থেকে সব শিক্ষার্থীর ইউনিক আইডি দেওয়া হবে। পুরো শিক্ষা জীবনে সে ওই আইডি নম্বর নিয়ে থাকবে, তাতে তাকে ‘ট্র্যাক’ করা যাবে, সে ঝরে পড়ছে কি না।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন বলেন, (প্রাথমিকে) আমাদের আইডি নম্বর দেওয়ার পরিকল্পনা নেই। আগের (বছরের) রোল নম্বরই (নতুন ক্লাসে) দেওয়া হবে।
দীপু মনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমতা আনা এবং গুণগত মান অর্জনে সরকার কাজ করছে। এবার লটারির মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, আমরা আশা করছি, তাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোর মধ্যে কিছুটা হলেও হয়ত সমতা আসবে। কিছু স্কুলে খুব ভালো ফলাফল করে তেমন শিক্ষার্থীরা যায়, কিছু স্কুল থাকে একেবাইরে ভালো ফল করছে না তেমন শিক্ষার্থীরা যায়, এই যে একটা বিরাট রকমের বৈষ্যম্য তৈরি হয়ে যায়, এই বৈষম্যটা তারা স্কুল-কলেজ পার হওয়ার পুরো সময়টায় বয়ে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, লটারির মাধ্যমে যেটা হচ্ছে, এই বৈষম্যের জায়গাটা অনেকখানি নিরসন হবে এবং কিছুটা হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমতা আসবে। মিক্সঅ্যাবিলিট ক্লাসের কারণে ২০২১ সালে আমাদের গুণগত শিক্ষা অর্জন কিছুটা হয়ত সহজতর হব।
বই উৎসব ১২দিন: করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বছরের প্রথম দিন স্কুলে স্কুলে বই উৎসব না করে এবার ১ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেবে সরকার। অন্যবারের মত এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ ডিসেম্বর বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, বছরের প্রথম দিন সারা দেশে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বই উৎসবে অংশ নেয়। এটি একটি বড় উৎসবে পরিণত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার কথা ভেবে এবার একই দিনে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেব না। কারণ জনসমাবেশ কিছুতেই আমরা করতে পারি না। তার বদলে প্রতিটি শ্রেণির বই বিতরণের জন্য তিন দিন করে সময় রাখা হচ্ছে। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১২ দিনে আমরা বই বিতরণ করব। একেকটি ক্লাসের শিক্ষার্থীরা তিন দিন (স্কুলে) আসবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বলে দেবে- এত থেকে এত তারিখ পর্যন্ত তোমরা আসো, সে রকম একটি ব্যবস্থা করে একই ক্লাসের শিক্ষার্থীরা তিন দিনে ভাগে ভাগে এসে বইগুলো নিয়ে যাবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন জানান, আগামী ৩১ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। বই বিতরণে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আমি সবাইকে আহ্বান জানাই। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে তিন দিনে বই তুলে দেয়ার কথা জানান গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।