বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
মোহাম্মদ গোলাম হোসেন
মাত্র নয় মাসের মাথায় গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির কথা আবারও আলোচনায়। তবে এবার ৫/১০ ভাগ এমন কি ৫০ বা ৭০ ভাগও নয়, বরং একবারেই দ্বিগুণ বৃদ্ধির প্রত্যাশা কর্তৃপক্ষের। গত সেপ্টেম্বরে মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কথা বলছিলাম এক কর্মকর্তার সাথে। তার মতে, ৭০ ভাগ মূল্য বৃদ্ধিতেও নাখোশ নয় জনগণ। প্রমাণ ‘এ জন্য কেউ তো রাস্তায় নামেনি।’ সুতরাং শতভাগ মূল্য বৃদ্ধির অদূরদর্শী তুঘলকি প্রস্তাবের উৎসটা বোধ করি এখানেই।
গত সেপ্টেম্বরে মূল্য বৃদ্ধির সমানুপাতিক হারেই যেন সরবরাহও কমিয়ে দেয়া হয়েছিল সাধারণ গ্রাহকদের জন্য, যা এখনও বহাল আছে। এতেও যে জনগণের আপত্তি নেই তার দলিল কেউ তো রাস্তায় নামেনি। বিশেষ বিশেষ অভিজাত এলাকার বাইরে ২৪ ঘণ্টায় ৪/৫ ঘণ্টাও গ্যাস থাকে না লাইনে। কখনো জ্বলে ক্ষীণ মোমবাতির মতো, যাতে অপচয় ছাড়া আর কিছুই হয় না। কোনো কোনো এলাকায় গ্যাস আসে রাতে তাহাজ্জুদের সময়, থাকে ফজর পর্যন্ত। তবে এই পরিস্থিতি অভিজাত ভাগ্যবানদের জন্য নয়। তারা গ্যাস সংকটের কথা কেবল মিডিয়াতেই দেখেন। তবে মূল্য নির্ধারণে অভিজাত-অনভিজাত নির্বিশেষে সমতার নীতি অনুশীলনে কর্তৃপক্ষ আপসহীন হলেও এহেন শ্রেণি বৈষম্যের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কেউ প্রতিবাদ করেনি। সুতরাং ধরে নেওয়া যায়, গণতন্ত্রের মতো নতুন ধারার সমাজতন্ত্র চর্চায়ও জনগণের না-রাজি নেই মোটেও। এহেন অসঙ্গত মূল্য বৃদ্ধির অঘোষিত উদ্দেশ্য প্রকাশ পেল অর্থমন্ত্রীর কথায়। তার মূল্যায়ন ‘গ্যাসে রান্না একেবারেই অপচয়’। অর্থাৎ সাশ্রয়ী সরকার রান্নাবান্নার জন্য গ্যাস ‘অপচয়’ করতে নারাজ। সুতরাং নীতিনির্ধারকদের ঘোষণা গৃহস্থালি কাজে পাইপ লাইনের গ্যাস আর নয়। বরং বহাল সংযোগগুলোই খুলে নেয়ার হুমকিযুক্ত ঘোষণাও খড়গের মতো গ্রাহকদের মাথার ওপর। তারপরও কেউ রাস্তায় নামেনি। অতএব, সরকার আপন সিদ্ধান্তে শতভাগ নির্ভুল! বিশ্বের অনেক দেশই আগামী দিনের জ্বালানি সংকট ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে নিজেদের তেল-গ্যাসের মজুদে হাত না দিয়ে আমদানিনির্ভরতাকেই শ্রেয় জ্ঞান করে থাকে। সুতরাং ‘মাটির নিচে গ্যাস রেখে লাভ কী’ এক সময়ের এমন ধারণা থেকে আমাদের অর্থমন্ত্রী যে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন এ জন্য আলহামদুলিল্লাহ’ই বলতে হয়।
লক্ষণীয়, দেশে গ্যাসনির্ভর শিল্পের যেমনি বিকাশ ঘটেছে তেমনি গৃহস্থালি কাজেও গ্যাসের ব্যবহার ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকৃত অর্থে গৃহস্থালি সংযোগের মধ্য দিয়েই এদেশে গ্যাসের ব্যবহার শুরু যার আওতায় রয়েছে এখন চার কোটিরও বেশি মানুষ। অন্য কথায় ১ কোটি পরিবার যা মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে গ্যাসনির্ভর শিল্পে কর্মসংস্থান হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষের। দেশটা কিন্তু সবারই। সুতরাং গ্যাসভিত্তিক শিল্প বিকাশে কোটি কোটি সাধারণ গ্রাহকের অধিকার ক্ষুণœœ করার একচোখা নীতির প্রতিবাদে কেউ যদি গ্যাসভিত্তিক শিল্প বন্ধ করার দাবি তোলেন তবে তাকে অযৌক্তিক বা অনৈতিক বলা যাবে কেমন করে? বিষয়টি অর্থনৈতিক নয় শুধু বরং পরিবেশগতও। সুবিধা বঞ্চিত প্রায় সোয়া কোটি পরিবারের ৯০ লাখ পরিবার পুনরায় কাঠখড়ির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন। এতে করে ৯০ লাখ পরিবারের জন্য প্রতিদিন ৫ কেজি হিসেবে বছরে ১ কোটি ৬৪ লাখ টনেরও বেশি কাঠখড়ির জোগান নিশ্চিত করতে হবে এ জন্য যে, গ্যাস ব্যবহারকারীদের ৯৫ ভাগই শহরের বাসিন্দা। এতদ্ভিন্ন বছর ঘুরতে এই চাহিদাও অন্তত ১০% চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকবে। কাঠভিত্তিক এই বিপুল জ্বালানির উৎসটা কী হবে তা আদৌ ভাবা হয়েছে কী? তাছাড়া আমদানিনির্ভর বোতল গ্যাসের ওপরও পুরোপুরি নির্ভরশীলতা কী বিচক্ষণতার কাজ হবে? দেশে প্রয়োজনের মাত্র অর্ধেক বনভূমি তাও দিন দিন কমে আসছে। সুতরাং গ্যাস বন্ধ করার আগে অন্তত বার্ষিক ২ কোটি টন কাঠখড়ির বর্ধিত সরবরাহ নিশ্চিত করা দরকার। এ জন্য বনায়ন বাড়ানোর বিকল্প নেই। কিন্তু কৃষিজমি এই ইঞ্চিও হ্রাস করার উপায় নেই। ওদিকে আজ গাছ লাগালে কালই তা কাঠখড়ির জোগান দেবে না।
অর্থমন্ত্রীর ভাষ্য থেকে বোঝা গেল দেশটা ‘গ্যাসের ওপর ভাসছে’ এমন আষাঢ়ে গল্পে এখন আর আস্থা নেই সরকারের। তা হলে গ্যাসনির্ভর শিল্পের কী হবে, ও গুলোতো আর কাঠখড়ি দিয়ে চলবে না। সন্দেহ নেই এটি এক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সমস্যা। যত জটিলই হোক আমাদের সমস্যা আমাদেরকেই উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করতে হবে, দিল্লি বা ওয়াশিংটন করে দেবে তেমনটি ভেবে বসে থাকলে চলবে না।
‘গৃহস্থালি কাজে গ্যাস আর নয়’ এটাই যদি নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে তাহলে কর্তৃপক্ষ গ্যাসবিমুখতা সৃষ্টির জন্য দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধি আর সরবরাহ হ্রাস জনিত অনৈতিক ও অমানবিক পথটায় না হেঁটেও পারতেন। ‘মূল্য বাড়বেই, মানসিক প্রস্তুতি নিন’ এটাই যখন শেষ কথা তখন ঘটা করে গণশুনানির নামে প্রহসনটা না করলেও চলে। গ্রাহকের পকেট যখন দায়বদ্ধ তখন কর্তৃপক্ষের ইচ্ছাটাই কী যথেষ্ট নয়? কেন হাত-পা বাঁধা মজলুম গ্রাহকদের প্রতি এমন রূঢ় উচ্চারণ? মূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে জনগণের আপত্তি থাকলেও ‘সিস্টেমলসের নামে চুরি-অপচয় আর প্রতিষ্ঠিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে না।’ এমন দাবি তো গ্রাহকরা কখনো তোলেনি। ক’দিন পরপরই যেনতেন অজুহাতে মূল্য বৃদ্ধির শানিত খড়গটার এস্তেমাল রেওয়াজ হয়ে গেলেও তিতাসের অর্ধশতাব্দীর ইতিহাসে দুর্নীতিবিরোধী আপসহীন ভূমিকায় তাকে কেউ দেখেছে কী? তাহলে তলা ছেঁড়া থলের দায় জনগণ নেবে কেন? স্থায়ী আমানতের ওপর ৫/৬ পারসেন্ট মুনাফা দিতেই ব্যাংকগুলো যখন গলদগর্ম তখন ২০/২৫ পারসেন্ট ডিভিডেন্ড দেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জনগণের পকেট তিতাসেরই পকেট না ভাবা হলে এক বছরেরও কম সময়ে দুই দফায় ৪৫০ টাকা থেকে ১৩০০ টাকায় নির্ধারণের চিন্তা কীভাবে সম্ভব?
বাংলাদেশে কোন কোম্পানি এক বছরে তাদের পণ্যের মূল্য ৩০০% বৃদ্ধি করেছে? কোনো ব্যবসায়ী তার পণ্যের মোড়কে ৫ কেজি লিখে ভেতরে ১ কেজি মাল দিয়ে বাজারজাত করলে বিজ্ঞ তিতাস কর্তৃপক্ষ তাকে কী বলবেন? অথচ সরবরাহ ৭০ থেকে ৯০ ভাগ কমিয়ে দিয়ে এই অনৈতিক কাজটাই করছে তিতাস দক্ষতার সাথে! তিতাস যদি কোম্পানিই হয়ে থাকে তবে আর দশটি কোম্পানির মতোই সেবা, সততা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মতো গুণাবলীর চর্চ্চার মধ্য দিয়েই তাদের অস্তিত্ব ও উন্নতি নিশ্চিত করতে হবে, জনগণের পকেট দায়বদ্ধ রেখে নয়। তাই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় আমাদের অভিমত পরামর্শ আকারে নি¤েœ তুলে ধরছি। তবে গ্যাস সমস্যা সমাধানে কেবল গ্যাস নিয়েই ভাবলে চলবে না। বরং বিকল্প জ্বালানির জোগান বৃদ্ধি নিয়েও ভাবতে হবে।
(ক) গ্যাস জাতীয় সম্পদ বলে এর থেকে উপকৃত হওয়ার অধিকার শিল্প মালিকদের চেয়ে সাধারণ মানুষের কম নয়। সুতরাং কোটি কোটি মানুষের স্বার্থবৈরী সিদ্ধান্তের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বিষয়টিকে কোনোক্রমেই যেন উপেক্ষা করা না হয়। (খ) অনেকে মনে করেন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি, চুরি ও অপচয়ের বিরুদ্ধে ‘জিরোটলারেন্স’ নীতি কার্যকর করা গেলে বর্তমান চাহিদা পূরণ করেও ৪০ থেকে ৫০ ভাগ গ্যাস সাশ্রয় হবে। সুতরাং চুলোর লাইন কর্তনের আগে দুর্নীতির মূলোৎপাটনে মনোযোগই ইনসাফ ও যুক্তির দাবি। এতে সফল হলে যুগপৎ মূলবৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রা অপচয়পূর্বক বোতল জাত গ্যাস আমদানির কথা না ভাবলেও চলবে। (গ) গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারের নিমিত্তে গত ৫০ বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা তিতাস ও গ্রাহকের পক্ষ থেকে বিনিয়োগ হয়েছে। গ্যাস বন্ধ হলে এগুলো সবই অপচয়ের শামিল হবে। পরিত্যক্ত অবস্থার পরিণতি হিসেবে চুরি আর অপচয় হবে, সাধারণের বাড়বে ব্যয় ও ভোগান্তি। সঙ্গত কারণেই গ্যাস লাইন পাওয়ার জন্য গ্রাহকের নিকট হতে যে অর্থে নেয়া হয়েছে তাও ফেরত দেয়া নৈতিক দায়িত্ব হয়ে পড়বে। অন্যদিকে বাড়বে দূষণ, নিধনযজ্ঞ জোরদার হবে সবুজ প্রকৃতির ওপর। সুতরাং বহাল সংযোগগুলো বন্ধ না করে পারা যায় এমন পথে হাঁটাই হবে সুবিবেচকের কাজ। (ঘ) গ্যাস অফুরন্ত নয় বলে ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া জরুরিÑ এ লক্ষ্যে নি¤েœ উল্লিখিত দুটি ব্যবস্থার যে কোনোটি গ্রহণ করা যেতে পারে। (১) রেশনিং সিস্টেম। এতে করে কোনো নির্দিষ্ট এলাকার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সুবিধা বিবেচনায় সকাল, দুপুর ও রাতে গ্যাস সরবরাহের সময়সূচি নির্দিষ্ট করে দেয়া যেতে পারে। (২) সকল গ্রাহকের জন্য মিটার নিশ্চিতকরণ। এ ক্ষেত্রেও দৈনিক অন্তত ৯/১০ ঘণ্টা সরবরাহ বন্ধ রাখার বিষয় ভাবা যেতে পারে।
(ঙ) বর্তমানে ব্যবহৃত চুলার কারণে তাপ শক্তির ৭৫ ভাগই অপচয় হচ্ছে। এটা আরো কাজে লাগানো যায় এমন চুলা সহজলভ্য করার দিকে নজর দেয়া যেতে পারে। (চ) তেল-গ্যাস অনুসন্ধান জোরদার করার সাথে সাথে ¯্রােতনির্ভর জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর জোর দেয়া আবশ্যক। এতে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা যেমনি থাকবে না তেমনি থাকবে না জ্বালানির প্রয়োজনও। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে তা বন্যা প্রতিরোধেও সহায়ক হবে। (ছ) গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারের জন্য সুলভ মূল্যে সৌর চুল্লি, আবর্জনা থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শহর এলাকায় প্রতিদিন যে লাখ লাখ টন আবর্জনা জমে এগুলো এ কাজে ব্যবহার করা হলে বিপুল জ্বালানি গ্যাস ছাড়াও পরিবেশ দূষণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া বায়ু চালিত টারবাইন থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয় ভাবা যেতে পারে। (জ) সন্ত্রাস ও জঙ্গি হামলার চেয়েও ‘পলিথিন হামলা’ এখন মারাত্মক যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এগুলো অন্যান্য পচনশীল আবর্জনা থেকে পৃথক রাখায় অভ্যস্ত করা গেলে পুনঃ প্রক্রিয়াজাতকরণসহ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব পরিত্যক্ত পলিথিন তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা যায় কিনা ভেবে দেখা যেতে পারে। (ঝ) প্রতিবেশী ভারতে প্রচুর গ্যাস ও কয়লা রয়েছে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে তাদের পর্বতশঙ্কুল ৭ প্রদেশে স্থল, নৌ এমনকি বিমানপথে পরিবহন সুবিধা তারা এরকম মুফতেই ভোগ করছে। সুতরাং যতদিন তারা এই সুবিধা ভোগ করবে তার বিনিময়ে আমাদেরকে পাইপযোগে গ্যাস সরবরাহ করবে। এ ক্ষেত্রে লেনদেনের হিসাবটা দু’প্রক্রিয়ায় হতে পারে। এক টন মাল গন্তব্যে পৌঁছাতে ঘুরা পথে তাদের যে খরচ হতো তার সমপরিমাণ রেভিনিউ আমাদেরকে দেয়া হবে। এক্ষেত্রে সময় ও নিরাপদ যাত্রাটাই তাদের লাভ। (২) আমরা নেপাল-ভুটান তাদের মালামাল পরিবহনে যে রেটে ভারতকে শুল্ক দিয়ে থাকি তার থেকে ৫০% বর্ধিত হারে বাংলাদেশকে পরিশোধ করবে এ জন্য যে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো নেপাল-ভুটানের মতো স্থলবেষ্টিত নয় যে, নেপাল-ভুটানের মতো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবিক অধিকার এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। (চ) ভূপালে দুর্ঘটনার জন্য ভারত আমেরিকান কোম্পানি কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে নিয়েছে আদালতের মাধ্যমে। বাংলাদেশের ‘মাগুরছড়া’ দুর্ঘটনার জন্য বাংলাদেশের গৃহীত ব্যবস্থা কী তা আদৌ জনগণ জানে না বললেই চলে। হাজার হাজার কোটি কোটি টাকার গ্যাস পুড়ে যাওয়া ছাড়াও এটি বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল পরিবেশ ও প্রকৃতির ওপর। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাদের থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়পূর্বক তা গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির কাজে বিনিয়োগ করা হোক। (ছ) সর্বোপরি বিমানবন্দর ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয় দেখভাল করার জন্য যেমনি বিশেষ কোম্পানি বা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠাকে নিয়োগ দেয়া হয় সেই আঙ্গিকে যুগপৎ তিতাস ও ভোক্তা উভয়ের সকল প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতি পর্যবেক্ষণ ও প্রতিকারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিশেষ কোম্পনি গঠন বা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। অনধিক এক বছরের জন্য এরা দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। প্রতিযোগিতামূলক তৎপরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এলাকাভিত্তিক ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানকেও দায়িত্ব বণ্টন করা যেতে পারে। তারা পাক্ষিক বা মাসিক ভিত্তিতে মন্ত্রণালয়কে তাদের তৎপরতার ফলাফল প্রতিবেদন আকারে অবহিত করবেন। কাজের পারফরমেন্স ও আউটপুটের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী বছরের জন্য তাদের দায়িত্ব নবায়ন ছাড়াও বোনাস প্রদানের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। তাদের কাজের সুবিধার জন্য তারা প্রয়োজনে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের সাহায্য নিতে পারবেন। তবে সরাসরি মন্ত্রণালয়ের অধীন হলেও তাদের যে কোনো দুর্নীতি, অবহেলা ও অদক্ষতার বিষয় এ তিতাস কর্তৃপক্ষ গ্রাহক, এমনকি জনসাধারণের পক্ষ হতেও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেশের সুযোগ ও এখতিয়ার থাকবে।
মূল কথা হলো শতভাগ দুর্নীতি ও অপচয়মুক্ত তিতাসের পক্ষেই কেবলমাত্র সঠিক ও গ্রহণযোগ্য তথ্য দেয়া সম্ভব যার ওপর আস্থা রেখে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নেয়া যায়। ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া গ্যাস বা অবৈধ সংযোগের ঘাটতি (সিস্টেমলস)-এর নামে সৎ ও বৈধ গ্রাহকদের ওপর অনৈতিকভাবে চাপানোর কাজটা অতীতের মতো আগামীতেও কী চলতেই থাকবে? সুতরাং সবার আগে চাই দুর্নীতিমুক্ত সেবক মনের উপযোগী তিতাস। তার পরই কেবল চাহিদা-জোগানের প্রকৃত অবস্থা পর্যবেক্ষণে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে যে, মূল্য বৃদ্ধি না হ্রাসই ইনসাফের দাবি।
য় লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।