পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কালের বিবর্তনে বরিশালের বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীতে দেড় শতাধিক বছরের ধান চালের ভাসমান হাট ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। সুদূর বৃটিশ-ভারত যুগে ধান চালের বেচাকেনা ও প্রক্রিয়াজাত করণের জন্য বানারীপাড়ার এ ভাসমান হাট দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম ব্যবসা কেন্দ্রের রূপ নিলেও সাম্প্রতিককালে তা আর ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারছে না। আধুনিকতার ছোঁয়ার সাথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা সীমাদ্ধতায় ধান-চালের ব্যবসা বিকেন্দ্রীকরণ হয়েছে গত এক দশকে। ফলে বানারীপাড়ার সন্ধ্যা নদীর ভাসমান হাটটি কালের পরিক্রমায় এখন হারিয়ে যাবার পথে।
জানা যায়, শতাব্দীকালেরও আগে থেকে ‘বরিশালের বালাম চাল’ এর যে সুখ্যাতি ছিল, তার বড় মোকাম ছিল এ ভাসমান হাট। এমনকি সেই বালাম চালই প্রক্রিয়াজাত করা হতো বানারীপাড়ায়। উচ্চ ফলনশীল ধানের নতুন জাতের আবাদ বাড়ায় ইতোমধ্যে বালাম চালের প্রচলন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। হাটের পরিধি সঙ্কুচিত হয়েছে। দূর দূরান্তের ব্যবসায়ী, কৃষক ও কুঠিয়ালরা ক্রমেই মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন এ ভাসমান হাট থেকে।
বালাম ছাড়াও অন্যান্য চালের চাহিদা ও সুনামের জন্য ঢাকা, ফরিদপুর, রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা, পটুয়াখালী, স›দ্বীপসহ বিভিন্ন এলাকার শত শত ফরিয়া এখানে এসে সপ্তাহে দুদিন চাল কেনাবেচা করতো। এমনকি সিলেট, ভৈরব, আশুগঞ্জ, ময়মনসিংহ, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝিনাইদহ ও যশোরের ব্যবসায়ীরা তাদের এলাকায় উৎপন্ন ধান বিক্রি করতেও নৌপথে বানারীপাড়ার ভাসমান হাটে আসতেন। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ধানচালের ব্যবসার ওপরই বানারীপাড়ার অন্যান্য ব্যবসাও নির্ভরশীল ছিল। অতীতে এ হাটে ধান থেকে চাল উৎপাদনকারী- কুটিয়ালদের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫ হাজার। নব্বই দশকের শেষ অবধি ৫ সহস্রাধিক পরিবার এ পেশার ওপর নির্ভরশীল ছিল। উপজেলায় যে শতাধিক ধান ছাটাই কল বা রাইচ মিল ছিল, তার সংখ্যা এখন হাতেগোনা। স্থানীয় ৭০ ভাগ মানুষ এ ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকলেও এখন সে সংখ্যা ১০ ভাগেরও কম। শনি ও মঙ্গলবার বানারীপাড়ায় ধান-চালের এ ভাসমান হাট বসলেও অগের দিনের রেশ ধরে রবি ও বুধবারেও বেচাকেনা চলে এ হাটে। তবে রবি ও বুধবারের হাটকে বলা হয় ‘গালার হাট’।
অতীতেও উপজেলার নলশ্রী, দিদিহার, দান্ডয়াট, বাইশারী, মসজিদ বাড়ী, আউয়ার, কালির বাজার, খোদ বখস, মলঙ্গা, চাখার, বাকপুর, ঝিরারকাঠী, ভৈৎসর, চালিতাবাড়ী, চাউলাকাঠী, কাজলাহার, নাজিরপুরসহ আশপাশের এলাকার ৯০ ভাগেরও বেশি মানুষের জীবিকা এ হাটের ওপর নির্ভরশীল ছিল। হাট থেকে ধান কিনে বাড়িতে নারী-পুরুষ সম্মিলিত শ্রমে তা প্রক্রিয়াজাত করে চাল তৈরি করে এ ভাসমান হাটে বিক্রি করতেন। তবে তাদেরকে স্থানীয় মহাজনদের হাতে শোষিত ও বঞ্চিত হওয়ায় ধীরে ধীরে বিকল্প পেশা খুঁজে নিয়েছেন অনেকেই।
নানা কারণে ১৯৮৯-৯০ সালে মহাজনদের সাথে ব্যাপক সংঘাত আন্দোলনের রূপ নেয়। যার প্রভাব পড়ে এ ভাসমান হাটের ওপরও। মহাজনদের সাথে কুটিয়ালদের দীর্ঘস্থায়ী বিরোধে সাধারণ ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বিভিন্ন জেলা উপজেলা সদরে বিকল্প হাটবাজার গড়ে তোলে। যাতে করে গত এক দশকে কুটিয়াল পরিবারের সংখ্যা ৫ হাজার থেকে কমে ১ হাজারে নেমে এসছে। বেশিরভাগ কুটিয়ালই তাদের মূলধন হারিয়ে ফেলায় গত দেড় দশকে বানারীপাড়ার ধানচালের ব্যবসা ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। অনেকেই নৌকা বিক্রি করে দিয়েছেন। আড়তদাররা তাদের ঐতিহ্যবাহী এ ব্যবসা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। বানারীপাড়ার আড়তদারপট্টির বহুঘর এখন ভাড়াটিয়াবিহীন অবস্থায় পড়ে আছে। এ ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত প্রায় ৪০ হাজার মানুষ এখন অর্থকষ্টে।
বানারীপাড়ার এ ব্যবসা বন্ধ হওয়ার কারণ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা আসতো ধানচাল কেনাবেচার জন্য সেসব স্থানে নতুন মোকাম গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে চাল উৎপাদন হওয়ায় খরচ অনেক কম। ব্যবসায়ীরা দলে দলে এখন আর এ ভাসমান হাটে আসছে না। প্রায় একই অভিমত স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও। তবে এ ভাসমান হাটটিকে বাঁচিয়ে রাখতে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ ব্যবসায়ীদের যৌথ উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।