Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বরূপকাঠীতে নৌকার ভাসমান হাট

প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পিরোজপুর জেলা সংবাদদাতা : ধান, নদী, খাল-এই তিনে বরিশাল। জালের মতো ছড়ানো-ছিটানো নদী আর খালের প্রাধান্য থাকায় এ অঞ্চলে আজও চলাচলের প্রধান যান নৌকা। আর বর্ষার সময় নদী-খালের পানি বেড়ে যাওয়ায় নৌকার ব্যবহারও যায় বেড়ে। বসে নৌকার হাটও। পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার কুড়িয়ানা হাটে নৌকা নিয়ে যাচ্ছেন কারিগররা। স্বরূপকাঠির সন্ধ্যা নদীর শাখা খাল ‘কুড়িয়ানা’তে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার বসে এ নৌকার হাট। প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পানিতে ও ডাঙ্গায় বসা এ হাট এই অঞ্চলের ঐতিহ্যেরও ধারক। স্বরূপকাঠি উপজেলার ১১টি গ্রামের প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি পরিবারের প্রধান পেশা নৌকা তৈরি করা। উপজেলার আটঘর, কুড়িয়ানা, আদমকাঠি, জিন্দাকাঠি, ইন্দুরকানি, দলাহার, আতাপাড়া, শেখেরহাট, চামির, গাগর, গগন প্রভৃতি গ্রামের নৌকার কারিগররা সপ্তাহজুড়ে ব্যস্ত থাকেন নৌকা তৈরিতে। আর তারপর শুক্রবার সেই সব নৌকা নিয়ে বিক্রি করেন কুড়িয়ানা নৌকার হাটে। আটঘর বাজারে সাধারণত বিক্রি হয় কোষা ও ডিঙ্গি নৌকা। এ বাজারের নৌকার কারিগর আশুতোষ জানান, তার বাপ-দাদারা নৌকা তৈরি করতেন সুন্দরী কাঠ দিয়ে। সে সময়ে সুন্দরী কাঠের সবচেয়ে বড় মোকাম ছিল স্বরূপকাঠি। তবে দিনে দিনে সুন্দরী কাঠ দুর্লভ হয়ে ওঠায়, তারা এখন নৌকা তৈরি করছেন মেহগনি, চাম্বল, রেইনট্রি, গাব, গুলাব, আমড়া, বাদাম প্রভৃতি কাঠ দিয়ে। ইন্দুরকানি গ্রাম থেকে আসা নৌকা বিক্রেতা আমজাদ মোল্লা জানান, দু’জন মিস্ত্রী দিনে একটি ছোট নৌকা তৈরি করতে পারেন। আকার আর কাঠের রকম ভেদে একেকটি নৌকা বিক্রি হয় দেড় হাজার থেকে চার হাজার টাকায়। তবে নৌকায় গাব, আলকাতরা কিংবা অন্য কোনো কারুকাজ থাকলে দামের তারতম্য তো হয়-ই। দিনের প্রথমভাগে নৌকা বিক্রেতারা হাটে এসে অলস সময় কাটান। এই ফাঁকে কেউ কেউ আবার একটুখানি জিরিয়ে বা ঘুমিয়েও নেন। তবে শুক্রবারের জুম্মার নামাজের পর বাজার জমে উঠলে বিক্রেতাদের ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়। কুড়িয়ানা নৌকার হাটে ক্রেতার অপেক্ষা করছেন বিক্রেতারা। তবে সব সময় এ সব বিক্রেতাকে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকতে হয় না। মোবাইল নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ ও মুঠোফোন সহজলভ্য হওয়ায় অনেক ক্রেতাই আজকাল কারিগরদের কাছে আগাম চাহিদার কথা জানান। পরে হাটের দিনে এসে যাচাই বাচাই করে সে নৌকা বুঝে নেন। কুড়িয়ানা হাটে ক্রেতারা নৌকা কেনার আগে ভালো করে যাচাই-বাছাই করে নেন। স্বল্প আয়ের এ সব মানুষদের প্রতিটি নৌকা দিয়ে কমপক্ষে দুটি মৌসুম পার করতে হয়। প্রত্যেক ক্রেতাই তাই তাদের টাকার সর্বোচ্চ মূল্য পেতে সচেষ্ট থাকেন। তারপর নৌকা কিনে আনন্দে ঘরে ফেরেন। নৌকা চালানোর জন্য দরকার বৈঠা। কুড়িয়ানা বাজারে কোনো কোনো বিক্রেতা তাই শুধু নৌকার বৈঠা বিক্রি করেন। আর ক্রেতারা নৌকা কেনার পর আকার অনুযায়ী বৈঠা কিনে নেন বাজার থেকে। কুড়িয়ানা নৌকার হাটে সাধারণত একেকটি বৈঠার দাম ৮০-২০০ টাকা। বলা বাহুল্য, কাঠের ধরন ও আকার অনুযায়ী বৈঠার দামের তারতম্য হয়।
কুড়িয়ানা বাজারে বিক্রি হওয়া নৌকাগুলো এ অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন কাজে বহুল ব্যবহৃত হয়। সাধরণত মাছ ধরা, কোথাও বেড়াতে যাওয়া, বাজারে পণ্য সরবাহ, পেয়ারা ধরা, হাট-বাজারে যাওয়াসহ নানা কাজে এ সব নৌকার ব্যবহার হয়। স্বরূপকাঠির পার্শ্ববর্তী ঝালকাঠি জেলার ভিমরুলি গ্রামের কৃত্তিপাশা খালে বসে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ভাসমান হাট। বর্ষা ও শরতে এ হাটে শত শত নৌকা বোঝাই পেয়ারা আর আমড়া বিক্রি হয়। আর এ সব নৌকার বেশিরভাগেরই যোগান আসে কুড়িয়ানার নৌকার হাট থেকে। কুড়িয়ানার পাশেই আরেকটি হাট ‘আটঘর’। ভাসমান এ হাটেও ছোট ছোট নৌকায় কৃষিপণ্য নিয়ে জড়ো হন বিক্রেতারা। এ বাজারেও কুড়িয়ানা হাটের নৌকারই প্রাধান্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বরূপকাঠীতে নৌকার ভাসমান হাট
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ