Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আবুলের বাঁশকলেই ইঁদুর নিধন

রক্ষা পাচ্ছে আবাদি জমির ফসল

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫৬ পিএম

আবুল হোসেন জোয়ার্দার পেশায় পল্লী পশু চিকিৎসক, বয়স হয়েছে ৮২। কৃষকবান্ধব এই মানুষটি তার নিজ পেশার সাথে সাথে বিগত প্রায় ৫০ বছর ধরে মানুষের ফসলের শত্রু ইঁদুর নিধন করে এ পর্যন্ত প্রায় ২ লক্ষাধিক ইঁদুর নিধন করেছেন। এ কাজে ব্যবহার করেন নিজের তৈরী বাঁশকল বা (ফাঁদ) মৃত ইঁদুরের লেজ জমা দিয়ে সরকারী ইদুর নিধন দিবসে উপজেলা থেকে কয়েকবার সন্মাননাও পেয়েছেন। বয়োবৃদ্ধ আবুল হোসেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের জামাল ইউনিয়নের উল্ল্যা গ্রামের বাসিন্দা।

সরেজমিনে আবুল হোসেনের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, তার বাড়িতে বাঁশ দিয়ে তৈরী করা রয়েছে প্রায় শতাধিক বাঁশকল বা ফাঁদ। বাড়ির অন্যপাশে তৈরী করা হচ্ছে আরও অনেকগুলো। বসতবাড়ি ও ফসলী ক্ষেতে ইদুরের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে এলাকার কৃষকেরা তার বাড়িতে এসে বিনামূল্যে বাঁশকল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। টিনের তৈরী একটি চালা ঘরে বেশ কিছু টিনের কৌটার মধ্যে সংরক্ষণ করা হচ্ছে মরা ইদুরের অসংখ্য শুকনো লেজ। যা তিনি উপজেলাতে জমা দেয়ার অপেক্ষায় আছেন।

আবুল হোসেন জোয়ার্দার জানান, ১৯৬৯ সালে চট্রগ্রামের বাবুনগর মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাশ করে তিনি পল্লী পশু চিকিৎসক হিসেবে বিশেষ কোর্স শেষ করেন। এরপর বিস্তর এলাকায় শুরু করেন পশু চিকিৎসা সেবা। এ কাজের পাশাপাশি অবসর সময়ে শুরু করেন কৃষকের কষ্টার্জিত ফসল নিধনের শত্রু ইদুর নিধন। তিনি আরও বলেন, কৃষকেরা অনেক কষ্ট করে পয়সা খরচ করে ্ফসল উৎপাদন করেন। সেই ফসল ইঁদুরে বিনষ্ট করে। এটা তাদের জন্য বড় ধরনের এক ক্ষতি। তাই কৃষকদের উপকারে তিনি শুরু করেন ইঁদুর নিধন। যা এখন নেশায় পরিণত হয়েছে। প্রথমে বাজারের কেনা কল বা ফাঁদ ব্যবহার করতেন। এ ফাঁদে তেমন একটা কাজ করে না। তাছাড়াও ব্যয়বহুল হওয়ায় পরে মাথা খাটিয়ে বাড়িতে বাঁশ দিয়ে তৈরী করেন বিশেষ ফাঁদ বাঁশকল। তার এ চেষ্টা আজ সফল হয়েছে। এলাকায় এটা আবুলের বাঁশকল হিসেবে ব্যপক পরিচিত। ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষের সময় এ ফাঁদগুলো নিজের উদ্যোগে মাঠের বিভিন্ন ক্ষেতে নিজ উদ্যোগে পেতে রাখেন। কয়েক দিন পরে দেখেন অনেক ইদুর ফাঁদে আটকা পড়েছে। অনেকগুলো মারাও গেছে। ক্ষেতে বেশি ইঁদুর বাসা করলে অনেক কৃষক তার বাড়িতে এসে বলে যান । সময় বুঝে অনেকগুলো কল নিয়ে বসে থেকে তিনি চালান বিশেষ অভিযান।

আবুল হোসেন আরও জানান, এখনও বিভিন্ন গ্রামের মাঠে তার কয়েক হাজার বাঁশকল পাতা আছে। এখন আমন ধানের মৌসুম চলছে। মৌসুম শেষ হচ্ছে প্রত্যেক মাঠ থেকে বাঁশকলগুলো বাড়িতে আনা শুরু করেছেন। আবার রবি শস্য পাকলে দেয়া হবে। এ মৌসুম শেষ হতে না হতেই আবার বোরো মৌসুমের ধান পাকা শুরু হবে। তখন আবার সেখানে ফাঁদগুলো পাতা হবে। তিনি আরও বলেন, শুধু পেতে আসলেই হয় না। মাঝে মধ্যে আবার মাঠের ফাঁদগুলো দেখে আসতে হয়। বাঁশকলের মধ্যে খাবার ফুরিয়ে গেলে আবার খাবার দেয়া লাগে। আর আটকা পড়া ্ইঁদুরগুলো বের করে নিয়ে লেজ কেটে নিয়ে দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা ও পরিবেশ সুরক্ষায় মাটি খানিকটা গর্ত করে মরা ইঁদুরের দেহাবশেষ পুতে রাখেন। লেজগুলো বাড়িতে এনে প্রথমে রোদে শুকান। পরে এগুলোকে জ্বলন্ত আগুনে বিশেষ প্রক্রিয়্য়া ছেকে জীবানুমুক্ত করে শুকিয়ে বিশেষ কৌটায় ভরে রাখেন। বছরের ইঁদুর নিধন সপ্তাহে ইউ এনও অফিসের মাধ্যমে কৃষি অফিসে জমা দেন। লেজ জমা দিয়ে এ পর্যন্ত তিনিই প্রতিবছর সেরা হন

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিকদার মুহাম্মদ মোহায়মেন আক্তার জানান, ইঁদুর পাকা ধান,গম, রবিশস্য, সবজি, বাসা বাড়ির কাগজপত্র,কাপড় চোপড়সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট করে। কৃষি জরিপে দেখা গেছে, ইঁদুর বেশিরভাগ সেচনালা গর্ত করে পানির অপচয় ঘটায়। ফসল কাটার পূর্বে ধান ক্ষেত ৫ থেকে ১৭ ভাগ পর্যন্ত নষ্ট করে। অবাক তথ্য দিয়ে বলেন, ১০০ টি ইদুর বছরে ১ টন খাদ্য খেয়ে ফেলতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ