Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

পরীক্ষার আগে হল খুলে দেয়ার দাবি আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ থেকেই দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি আবাসিক হলগুলোও বন্ধ রেখেছে প্রশাসন। এরই মধ্যে আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে স্নাতক ফাইনাল ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগ ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে পরীক্ষা নেওয়ার রুটিন প্রকাশ করেছে। পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণায় শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বসিত হলেও আবাসিক হল বন্ধ থাকায় ঢাকায় এসে কোথায় থেকে পরীক্ষা দেবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। শিক্ষার্থীদের অসুবিধার কথা উল্লেখ করে এর আগে অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন আবাসিক খুলে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসব দাবিতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।এছাড়া দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানায়, পরীক্ষার আগে আবাসন নিশ্চিত করতে হবে, অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রয়োজনে শুধু পরীক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খুলে দিতে হবে, পরীক্ষা নেওয়ার পূর্বে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে, প্রয়োজনে মেকাপ ক্লাসের ব্যাবস্থা করতে হবে, একসাথে দুই সেমিস্টার ফাইনাল নেওয়া যাবে না, একটি সেমিস্টার শেষ করে পরবর্তী সেমিস্টারের প্রস্তুতির জন্য নির্দিষ্ট সময় দিতে হবে, যেসব বিভাগের পরীক্ষার রুটিন ঘোষণা করা হয়েছে তা বাতিল করে পুনরায় তারিখ ঘোষণা করতে হবে এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বাসে যাতায়াত নিশ্চিত করতে হবে।

মানববন্ধনে স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আবিদ খান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের পরীক্ষ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা, এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কারণ আমরা অনেকে হলে থেকে পড়ালেখা করতাম। এখন হঠাৎ করে ঢাকা শহরে কোথায় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব? পরীক্ষা নেওয়ার পূর্বে আমাদের এই বিষয়টা চিন্তা করা উচিত ছিল।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত। বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীর জন্য ঢাকায় থাকার জায়গা ব্যবস্থা করা দুরূহ। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য রীতিমত একটি ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়া অনুরোধ জানাচ্ছি।

অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুমানিক ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী হলে থেকে পড়াশোনা করে। এরা সবাই নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। এসব শিক্ষার্থীর অধিকাংশই টিউশনি করে চলত। এখন কারও টিউশনিও নাই। সবাই এখন গ্রামে অবস্থান করছে। অনেকের পিতামাতার আয় উপার্জনও একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় আবাসিক হল না খুলে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত অমানবিক।

তাছাড়া শুধুমাত্র মাস খানেকের জন্য ঢাকা শহরে বাসা ভাড়া কোনো মালিক দেয় না এবং এভাবে ভাড়া নেওয়ার সামর্থ্যও শিক্ষার্থীদের নেই। আবাসিক হল যদি করোনার ঝুঁকিমুক্ত না হয়, পরীক্ষার হল কিভাবে করোনার ঝুঁকিমুক্ত? সুতরাং পরীক্ষা যদি নিতেই চান, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে আবাসিক হল খুলে পরীক্ষা নিন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানেই অবস্থান করব।

এ বিষয়ে প্রফেসর মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এই মহামারী পরিস্থিতিতে হল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই জাতীয় কনসেন্ট লাগবে। বিচ্ছিন্নভাবে আমাদের এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। অনেক জায়গায় পরীক্ষা হচ্ছে। শিক্ষাথীদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই অনার্স ফাইনাল ও মাস্টার্সের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা পিছিয়ে না থাকে।
পরীক্ষা দিতে এলে অনেক শিক্ষার্থীরই আবাসিক সমস্যা হবে স্বীকার করে তিনি বলেন, এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে হলে থেকে পড়ালেখা করত। তাদের জন্য ঢাকায় থাকাটা একটু কষ্ট হবে। তবে এই মহামারীতে শিক্ষার্থীদের এই কষ্টের চেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ