Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কৃষিতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

শৈত্যপ্রবাহ বাড়াচ্ছে কৃষকের দুশ্চিন্তা

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

চলমান শৈত্য প্রবাহে বোরো বীজতলা ও রোপা ধানের কোল্ড ইনজুরি এবং আলুর লেটব্লাষ্টইট রোগে আক্রান্ত হবার দুুঃশ্চিন্তায় কৃষক ও মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদরা। এ ধরনের আবহাওয়া গম উৎপাদনে সহায়ক হলেও বৃষ্টি নামলে ছত্রাকবাহী ‘ব্লাষ্ট’ রোগের সংক্রমণ ছড়াতে পারে। চলতি রবি মৌসুমে দেশে ৫৬ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৩ কোটি ৮১ লাখ টন বোরা, গম, ভুট্টা ও আলু উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষকরা কাজ করছেন।

ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে হ্রাস পেয়েছে। ফলে রোপা বোরোর বীজতলা এবং আলু নিয়ে কৃষকের দুঃশ্চিন্তা ক্রমশ বাড়ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) থেকে ইতোমধ্যে শৈত্য প্রবাহ থেকে ফসল রক্ষার কৌশল কৃষকদের কাছে পৌছে দেয়ার লক্ষ্যে জেলা-উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি যেহেতু বোরো বীজ রোপন মাত্র ১%-এর বেশি নয়, সেহেতু খুব বেশি ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলেও বীজতলা নিয়ে কিছুটা দুঃশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। পাশাপাশি আলু নিয়েও শঙ্কা বাড়ছে।
সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে আমন আবাদ লক্ষ্য ছুয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় চলতি মৌসুমে বোরো, গম, ভুট্টা, আলুসহ সব ধরনের রবি ফসলের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে। সে হিসেব মাথায় রেখেই এবার লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

চলতি মৌসুমে দেশে বোরো আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে ৪৭ লাখ ৮৪ হাজার ৭১৬ হেক্টরে। গত বছর ছিল ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৪৭ হেক্টর। আর গত বছর বোরো চালের উৎপাদন ২ কোটি ১ লাখ ৮১৩ টন। এবার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে ২ কোটি ৫ লাখ ৩১৪ টন। চলতি মৌসুমে ২ লাখ ২৫ হাজার ৪শ’ হেক্টরে বোরো বীজতলার লক্ষ্য থাকলেও ইতোমধ্যে ২ লাখ ৩০ হাজার ৮শ’ হেক্টরে তা সম্পন্ন হয়েছে। ফলে চলতি মৌসুমে বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম সম্ভব হতে পারে বলেও আশা করছেন ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্র।
অপরদিকে, গত কয়েকটি বছর ছত্রাকবাহী ব্লাষ্ট রোগের কারণে সরকার কিছু এলাকায় গম আবাদ নিরুৎসাহিত করলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। দুর্যোগ কাটিয়ে চলতি মৌসুমে গম আবাদ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। গত বছরের ৩ লাখ ৪২ হাজার হেক্টরের স্থলে চলতি মৌসুমে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৪ হেক্টর জমিতে গম আবাদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্য গত বছরের ১২ লাখ ৪৬ হাজার টনের স্থলে ১২ লাখ ৯৮ হাজার টন। ডিএই’র হিসেব মতে গতকাল পর্যন্ত দেশে গম আবাদের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ১৪ হাজার হেক্টরের কিছু বেশি। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮৯%।

এদিকে চলতি মৌসুমে আলুর উৎপাদন গত বছরের তুলনায় অন্তত সাড়ে ৪ লাখ টন বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। গত বছর দেশে ৪ লাখ ৬৪ হাজার জমিতে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৯ লাখ ১৮ হাজার টনের মত। চলতি মৌসুমে দেশে ১ কোটি ১৩ লাখ ৭১ হাজার টন উৎপাদনের লক্ষ্যে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ লাখ হেক্টর বা লক্ষ্যমাত্রার ৯৬% জমিতে আলুর আবাদ সম্পন্ন হয়েছে বলে ডিএই সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে সাম্প্রতিককালে দেশের পোল্ট্রি ফিডসহ বিভিন্ন সম্পূরক খাদ্য হিসেবে ভুট্টার ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে এর আবাদও বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত বছর দেশে প্রায় ৪ লাখ ৬৩ হাজার জমিতে ৪৭ লাখ ২১ হাজার ৫শ’ টনের মত ভুট্টা উৎপাদিত হলেও এবার ৪ লাখ ৭১ হাজার ৫৪৭ হেক্টর জমিতে ৪৮ লাখ ৮৭ হাজার মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত বছর দেশে হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয়সহ বোরো ধানের উৎপাদন ছিল হেক্টর প্রতি ৩.৬৫ টন। এবার ৪.২৪ টনে পৌছাতে কাজ করছে ডিএই। গত বছর গমের উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৩.৬৪ টন থেকে চলতি মৌসুমে ৩.৬৫ টনে পৌছাতে চাচ্ছে সরকার। ভুট্টার উৎপাদনও হেক্টর প্রতি ১০.৩৬ টনে পৌঁছার লক্ষ্যে কাজ করছে ডিএই। আলুর ক্ষেত্রেও গত বছরের ২৩.৫০ টন থেকে হেক্টর প্রতি ২৪.২৭ টন নির্ধারণ করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শৈত্যপ্রবাহ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ