মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
আর কে চৌধুরী
হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ফসল ফলানোর পরেও ন্যায্য দাম পাচ্ছে না কৃষকরা। কারণ ফসল বিক্রি করে উৎপাদন খরচ ওঠানোই তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। আর এ দাম না পাওয়ার পেছনে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যের কারণই দায়ী বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অনেক কৃষক চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ফসলে বিনিয়োগ করায় বাধ্যতামূলকভাবে লোকসান দিয়ে হলেও ধান বিক্রি করে সেই ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে তাদের। এ ছাড়া সার ও বীজের দাম বেশি হওয়ায় তারা উৎপাদন খরচের সাথে ধানের বাজার মূল্যের সমন্বয় করতে পারছে না। বিশেষ করে সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয় না হওয়ায় দালাল ফড়িয়া ও চাতাল মালিকদের কাছে কৃষকেরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা নিজেদের ইচ্ছে মতো দামে ধান ক্রয় করছে। ফলে বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। দেশের অর্থনীতির মেরুদ- হিসেবে বিবেচিত কৃষকরা যেভাবে ধান চাষ করে বঞ্চিত হচ্ছে তাতে কৃষকদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। তাই ভর্তুকি দিয়ে হলেও কৃষকদের বাঁচাতে হবে। কৃষক না বাঁচলে দেশের অর্থনীতিকেও বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।
কৃষি খাত এদেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় জোগানদার। দেশের কৃষকরা নানা প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করছে। বহু কষ্টে ফসল ফলালেও কৃষক উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। এমনিতেই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল সিংহভাগ কৃষক। এর মধ্যে যদি তারা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পায় তাহলে তাদের মেরুদ-টা পুরোপরি ভেঙে যাবে। কৃষি ও কৃষক যদি বিপন্ন-বিপর্যস্ত হয় তাহলে দেশের সামগ্রিক ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে তা নতুন করে বলা নিষ্প্রয়োজন।
একদিকে খাদ্যদ্রব্যের বাজার ঊর্ধ্বগতি অন্যদিকে ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা। অধিকাংশ কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসল বিশেষ করে ধান, গম, পাট ও আলুর নায্য মূল্য পায় না। এরও মূল কারণ সেই সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটই সম্পূর্ণ বাজার ব্যবস্থাকে গ্রাস করে রাখে। কৃষকরা দিন রাত পরিশ্রম করে মাঠে ফসল ফলায়। কৃষকের উন্নতি মানে দেশের উন্নতি। তাই যে দেশ কৃষিতে যত উন্নত সেই দেশ তত অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। অথচ কৃষক সমাজ আজ সবচেয়ে বেশি অবহেলিত।
দেশের কৃষি ও কৃষক আজ চরম অবহেলার শিকার। কৃষকরা খাদ্যশস্য উৎপাদন করে সারাদেশের মানুষের জন্য খাদ্যের সংস্থান করে থাকে। অথচ সেই কৃষক প্রতি বছর খাদ্য উৎপাদন করে লোকসানের শিকার হচ্ছে। আমার মতে, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতি বছর ধান চালের এমন মূল্য নির্ধারণ করতে হবে যাতে করে কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পায়।
একটি বিষয় স্পষ্ট করে বুঝতে হবে, শুধু কৃষিতে ভর্তুকি, সার, বীজ সরবরাহ করলেই হবে না, একইসঙ্গে কৃষিপণ্য বিশেষ করে ধান চালের উপযুক্ত মূল্য যেন কৃষক পায় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কৃষক কৃষিকাজ করে যে খাদ্যশস্য উৎপাদন করে তা থেকে যদি সে লাভবান হয় তাহলেই কৃষি উৎপাদন বাড়বে। কৃষিকাজ করে কৃষক যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে কৃষি উৎপাদন তথা খাদ্যশস্য উৎপাদন কমবে। খাদ্যশস্য উৎপাদন কমলে দেশ খাদ্যের উপর আমদানিনির্ভর হয়ে পড়বে। একপর্যায়ে দেশে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিবে। তাই দেশে যথাযথ খাদ্যের সংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষক ও কৃষিকে বাঁচাতে হবে। আর তাদের বাঁচাতে হলে কৃষিতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে এবং এ ভর্তুকি যাতে প্রকৃত কৃষক পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও কৃষকের স্বার্থরক্ষা করতে না পারলে ক্রমাগতভাবে কৃষিখাতে যে ধস নেমে আসবে যা দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কৃষি খাতকে বাদ দিয়ে বা কৃষকের স্বার্থকে উপেক্ষিত করে কোনোক্রমেই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
ষ লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সভাপতি বাংলাদেশ ম্যাচ ম্যানুফ্যাকচারার এসোসিয়েশন, সদস্য এফবিসিসিআই এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।