Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীমান্ত হত্যার জন্য ভারত নয়, সরকারকে দায়ী করছেন মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০২০, ৭:২০ পিএম

সীমান্ত হত্যার অবসান চাইলেও এই হত্যাকা-ের জন্য ভারতকে দায়ী করতে চান না বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এটার (সীমান্ত হত্যাকা-) আমরা অবসান চাই। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করার জন্য সরকার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এটাই আমাদের দাবি। কিন্তু আমরা ভারতকে দোষ দিতে চাই না, ভারতকে ব্লেইম করতে চাই না বা ভারত সরকারকেও ব্লেইম করতে চাই না। কারণ আমাদের সরকার দাবি করেন যে, তারা কোনো মতেই কখনোই বাংলাদেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেন না, বাংলাদেশের স্বার্থের মধ্যে তারা কাজ করেন তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন। আজকে কেন বাংলাদেশের স্বার্থে আপনারা সীমান্ত হত্যা সম্পর্কে কোনো রকম কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারছেন না? কেন বাংলাদেশের স্বার্থে আপনারা এখন পর্যন্ত অভিন্ন নদীগুলোর হিস্যার ব্যাপারে কোনো চুক্তি করতে পারছেন না।

সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশের সীমান্তে ১৯৭২ সাল থেকে এই পর্যন্ত নাগরিক নিহত হওয়ার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকেই সীমান্তে ভারতীয় রক্ষীবাহিনীর হাতে বাংলাদেশের নাগরিকেরা বিনা বিচারে হত্যাকা-ের শিকার হচ্ছেন। ১৯৭২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৫১০ জন নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তার মধ্যে ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৪৩৯ জন রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, জনসংখ্যার অনুপাতে এই ধরনের লোক নিহত হওয়া বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু না। তবে প্রশ্নটা হচ্ছে যে, সীমান্তে প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে যখন বাংলাদেশের নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়-এটা অবশ্যই জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং মানুষের যে ন্যূনতম অধিকার রয়েছে বিচার পাওয়ার সেটারও লঙ্ঘন। তবে আমাদের বক্তব্য ভারতের কোনো সরকার বা ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে না। আমার দেশের নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়ে বক্তব্য, তাদের জীবনের প্রশ্নে আমাদের বক্তব্য। এটা সবাই করছেন, দীর্ঘকাল ধরে করছেন। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময় সেগুলো তুলেছে।

তিনি বলেন, যদি কেউ অপরাধ করে আইন আছে। ভারতেও আইন আছে। যদি কেউ ই-লিগ্যাল ডেসপাস করে তাহলে তার ফরটেন ফরেন এ্যাক্টে বিচার হবে। যেটার মাধ্যমে এখনো আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আটকিয়ে রেখেছে। সেই আইনে তো সীমান্তে বেআইনিভাবে প্রবেশ করলে তাদের বিরুদ্ধে আপনারা (ভারত) ব্যবস্থা নিতে পারেন, আমাদের সরকার তাদের বিচার করতে পারে। এই বিষয়গুলো সমাধান হওয়া দরকার। একটা পারস্পরিক মর্যাদা ভিত্তিতে একটা মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠা খুব জরুরী। কারণ আমরা স্বাধীন সার্বভৌম জাতি। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, এই ধরনের মানসিকতা থেকে আমরা যেটা আশঙ্কা করছি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উনি কার পররাষ্ট্র মন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রর সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সীমান্তে হত্যাকা-ের বিষয়ে ভারতের দিক থেকে বলা হয় যে, চোরাকারবারীরা ভারতবর্ষে প্রবেশ করলে তাদেরকে বারণ করার পরও যখন হয় না, তখন গুলি করতে হয়। আর আমাদের বিজ্ঞ পররাষ্ট্র মন্ত্রী দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর যা বললেন, তিনি হতাশ করেছেন। আবর একটি গনমাধ্যমে তার সাক্ষাতকার পড়ার পর মনে প্রশ্ন জাগছে তিনি আসলে কার পররাষ্ট্র মন্ত্রী? তিনি কী বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী না কী ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী? পুরো ইন্টারভিউর মধ্যে তিনি ভারতকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এবার কী সামিটে সীমান্ত হত্যাকা- বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছিলো? তিনি উত্তর দিয়ে বলছেন, আমরা ভারত সরকারকে এই কথা বার বার বলে বিব্রত করতে চাই না। আমাদের মধ্যে এতো চমৎকার সম্পর্ক, এতো ভালো সম্পর্ক সেই সম্পর্ক আমরা নষ্ট করতে চাই না। এই বিষয়টা (সীমান্ত হত্যাকা-) নিয়ে তারা কথা বলারও এখন আর প্রয়োজনবোধ করছেন না সেটা তিনি বুঝাতে চেয়েছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ভারতের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব এখন সর্বোচ্চ পর্যায় এতে আশ্বস্ত হই। এটা ভালো কথা। এটা আমাদের জনগণকে একটা নিরাপদ বোধ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। কিন্তু ভারতের সাথে বন্ধুত্ব প্রমাণ করবো কি করে? প্রমাণ কী ভারতের সমস্ত চাহিদা সেগুলো মেটাব আর আমার যে সমস্যাগুলো সেই সমস্যার একটাও মিটবে না। পানির সমস্যা আমাদের জীবন মরণের, জীবন-জীবিকার সমস্যা। বার বার শুনছি যে, এই সমস্যার সমাধান হবে কিন্তু হচ্ছে না। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার, তাদের তিস্তা নদীর পানির হিস্যা না পেয়েও আমরা কিন্তু ফেনী নদীর পানি দিয়ে দিয়েছি। ১৫৪টা অভিন্ন নদী রয়েছে। ভারত প্রত্যেকটা নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে দিয়েছে এবং আমাদের সাথে কোনো আলোচনা না করেই। প্রশ্নটা হচ্ছে, বাংলাদেশ ছোট দেশ হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এ দেশের মানুষ একটা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, আমরা উন্নয়নের জন্য গলা ফাটিয়ে কথা বলছি। আমার যে ন্যূনতম স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা রক্ষা করার দায়িত্ব সেই সম্পর্কে উদাসীন থাকছি। অথবা সেই জায়গায় প্রতিবেশীর কাছে মাথা নুয়াচ্ছি।

সত্য কথা বললেই বিএনপি বানানো হয়:

কেউ যখন প্রকৃত সত্য কথা বলে তখন তাকে বিএনপি বানানো হয় মন্তব্য করে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, ৪২ জন নাগরিক প্রেসিডেন্টের কাছে বিবৃতি পাঠিয়েছেন। আর আমাদের তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, এটা বিএনপির অফিসে ড্রাফট হয়েছে। যারা বিবৃতি দিয়েছেন তারা একজনও বিএনপি করেন না। বরঞ্চ বিভিন্ন সময়ে তারা বিএনপির সমালোচনা করেছেন। প্রকৃত সত্য যখনই সামনে আসে এবং জনগন যখন সত্য কথা বলতে চায়, নাগরিকরা সত্য কথা বলতে চায় তখনই আপনার তাদের বিএনপি বানিয়ে ফেলেন। এটা হচ্ছে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার আরেক জঘন্যতম কৌশল।

তিনি বলেন, আমরা ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিককে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও কতৃজ্ঞতা জানাতে চাই যে, এতো দিন পরে তারা জনগণের মূল কথা নিয়ে এসছেন, কথা বলেছেন। তাদের যে দায়িত্ব আছে সেই দায়িত্ব তারা পালন করেছেন। এটাকে সমস্ত বুদ্ধিজীবীদের সমর্থন করা উচিত। ইটস নট ফর বিএনপি, নট ফর পলিটিক্যাল পার্টি। এটা দেশের জন্য, জাতির জন্য প্রয়োজন।

দুই ভাইস চেয়ারম্যানের শোকজ প্রসঙ্গ মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের ভাইস চেয়ারম্যান সবাই দলে আছেন। কোথাও যাওয়ার কোনো সমস্যা হয়নি। বিএনপি এখনো অত্যন্ত সুসংগঠিত আছে। উদারপন্থি, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলে ছোট-খাটো দুই একটা ঘটনা কোনো ঘটনাই নয়।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের মন্তব্যের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমার খুব দুঃখ হয় যখন দেখি আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বলছেন যে, বিএনপির মধ্যে গণতন্ত্র নেই, তারই এটা (হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও শওকত মাহমুদ শোকজ) প্রমাণ। আপনারা (আওয়ামী লীগ) দেশের গণতন্ত্রই খেয়ে ফেলেছেন, মানুষের অধিকারগুলো খেয়ে ফেলেছেন। আর আপনারা অন্যের গণতন্ত্র দেখে বেড়াচ্ছেন। তারা (আওয়ামী লীগ) মেজর হাফিজের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, নাশকতা, বাস-ট্রাক পুড়িয়ে দেয়ার মামলা করেছে। একটা নয় ১০টা মামলা। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মুখে মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কথা বলা শোভা পায় না। কোন মুক্তিযোদ্ধাকে তারা সম্মান দিয়েছেন? তারা কি জিয়াউর রহমানকে সম্মান দিয়েছেন? তাজউদ্দিন আহমদ (বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী) সাহেবকে সম্মান দিয়েছেন? দেননি। এমএজি ওসমানির (মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক) নাম একবারও স্মরণ করেন। একে খন্দকারকে বের করে দিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়া সর্বশ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধাদের একজন। কারণ উনি ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে যেদিন জিয়াউর রহমান সাহেব স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তারপর থেকে উনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, দুইটা শিশুকে নিয়ে লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন। তারপরে কারাভোগ করেছেন এখনো।

৩০ ডিসেম্বর সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে ৩০ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারাদেশের জেলা শহরে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে সকাল ১১টায় বিক্ষোভ সমাবেশ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর যৌথভাবে প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ১১টায় সমাবেশ অনুষ্ঠান করবে দলটি।



 

Show all comments
  • Nannu chowhan ২১ ডিসেম্বর, ২০২০, ৭:৪৫ পিএম says : 0
    Fokhrul shaheber shathe desher manush eakmot hobe je,eai shorkarer shimanto hotta konodin shotik drirotar shohit kono protibadei kore nai bjb prodhan emonki pororashtro montri khaddo montri shadhon chondro rai o bjb prodhan shimanto hotta nia amader shimante mritu bektider doshi shabbosto koria emon shob boktobbo den, tader boktobbe shonia mone hoy jenoo onara varotio montri ba kormo korta....
    Total Reply(0) Reply
  • এন ইসলাম ২১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৪০ পিএম says : 0
    ক্ষমতার লোভে আপনারাওতো ভারতের পদলহনে ব্যস্ত ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ