Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৪০ হাজার নারীকর্মী খালি হাতে ফিরেছেন

সংবাদ সম্মেলনে বামসা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনাকালে (এপ্রিল-নভেম্বর) নানা কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ ২৭ হাজার প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। তার মধ্যে ৪০ হাজার নারী কর্মী (গৃহকর্মী) ফিরেছেন। যাদের মধ্যে শুধু সউদী আরব থেকেই ফিরেছেন ১৭ হাজার ৩ শ’ জন। এদের অধিকাংশই ফিরেছেন খালি হাতে। কিংবা বেতনের চেয়ে কম নিয়ে। অনেকে আবার নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরেছেন। গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন (বমসা)।

বিশ্ব অভিবাসী দিবস উপলক্ষে বিদেশে নারী গৃহকর্মীদের নিয়ে কাজ করা বমসা এই সংবাদ সম্মেলনে সউদী আরবসহ বিভিন্ন দেশে যারা গৃহকর্মী হিসেবে গেছেন তাদের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন সংগঠনের পরিচালক অ্যাডভোকেট ফরিদা ইয়াসমিন। এসময় সংস্থাটির চেয়ারম্যান লিলি জাহান, সাধারণ সম্পাদক শেখ রোমানা ও প্রবাসী শ্রমিক ফেডারেশনের উপদেষ্টা আবুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এতে সউদী আরব প্রবাসী (ছুটিতে আসা) খাদিজা এবং সউদী আরব থেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরা কারিমা বেগম বক্তব্য রাখেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, করোনার কারণে যে ৩ লাখ ২৭ হাজার প্রবাসী দেশে ফিরেছেন তাদের বেশিরভাগই সউদী আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরেছেন। কাজ না থাকা, চুক্তি বা আকামার মেয়াদ না বাড়ানো, অবৈধ হয়ে পড়া এবং অনেকেই কারাভোগ শেষে আউট পাস নিয়ে দেশে ফিরেছেন। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে করোনাকালে প্রবাসীদের দেশে ফেরার হার ৫ গুণেরও বেশি। দেশে ফিরে এসব রেমিট্যান্সযোদ্ধা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ফেরত আসা প্রবাসীদের ৭০ শতাংশই জীবিকা সঙ্কটে রয়েছেন। ৫৫ শতাংশ বলছেন তাদের উপর ঋণের বোঝা রয়েছে।

১৬টি বেসরকারি সংস্থার নেটওয়ার্ক বিসিএম-এর জরিপ মতে, করোনাকালে ৬১ শতাংশ পরিবারে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। ৭৪ শতাংশ অভিবাসী (ফেরত আসা) কোনো টাকা পয়সা নিয়ে আসতে পারেননি।
২০১৩ সালের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইনে নারী অভিবাসী শ্রমিকের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি উল্লেখ করে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, গন্তব্য দেশে নারী অভিবাসীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। মূল সমস্যা হলো, নারী শ্রমিক প্রেরণ প্রক্রিয়া। সচেতনতা এবং অজ্ঞতার কারণে দালাল বা প্রতারকের পাল্লায় পড়ে কিশোরী মেয়েরা অভিবাসনের নামে পাচার হয়ে যায় এবং কেউ কেউ লাশ হয়ে ফেরত আসে।

মহামারির মধ্যেও নির্যাতস থেমে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারী শ্রমিকেরা বিরতিহীনভাবে বেতন কম দেয়। সময়মতো বেতন দেয় না। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা, অবসর-বিনোদনের কোনো সুযোগ না থাকা, দেশে যোগাযোগ করতে না দেয়া, বাথরুমে আটকে রাখা, শারীরিক, মানসিক এবং কখনো কখনো যৌন নির্যাতনের শিকার কিংবা নিখোঁজ বা হত্যার শিকার হওয়ার খবর আসে।

বমসা’র সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৪ জন নারী অভিবাসীর লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। এর মধ্যে ২২টি সৌদি আরব থেকে, ১৪টি লেবানন, ১১টি জর্ডান, ৭টি ওমান এবং ৪টি আরব আমিরাত থেকে এসেছে। ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৪৭৩টি নারী অভিবাসীর লাশ এসেছে।
বমসা বলছে, সবচেয়ে বড় এবং ভয়ঙ্কর সমস্যা হলো, দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে স্পন্সরশীপ ব্যবস্থা বা প্রক্রিয়ায় কর্মীর সকল খরচ বহন করে নিয়োগকারী এবং চুক্তিপত্রে যথেষ্ট সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় এদেরকে (গৃহকর্মী হিসেবে যাওয়া) কৃতদাসীর মতো ব্যবহার করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ