পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাঁচ বছরের নাশমিয়া। বাবা-মায়ের হাত ধরে হাঁটছে। ওর চোখে মুখে এক অন্যরকম আনন্দ উচ্ছ্বাস খেলা করছে। ছোট্ট শিশুটির পরনে লাল সবুজ সেলোয়ার-কামিজ। বাবা পরেছেন লাল সবুজ পাঞ্জাবি আর তার মাও লাল সবুজ শাড়ি পরে বিজয়ের রঙে নিজেদের সাজিয়েছেন।
নাশমিয়ার মতো এমন শত শত শিশু মা-বাবার হাত ধরে গতকাল হাতিরঝিলে এসেছে বিজয় দিবসের আনন্দ উপভোগ করতে। গোটা হাতিরঝিল লোকে লোকারণ্য। হকাররা বেলুন, পতুল, বাঁশির আর খেলনা ঢোলের তালে শিশুদের মাতিয়ে তুলছে। দুপুরের পর থেকে লাল-সবুজ পোশাকে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে হাতিরঝিলে। হালকা শীতের মিষ্টি রোদে তার ঘুরে বেড়ায় মনের আনন্দে। স্বামী-স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, পরিবারের সব সদস্য, বন্ধুরা বিজয়ের রঙে আনন্দ উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা। এদিনটি ও স্থানকে স্মরণীয় করে রাখতে বেশিরভাগই মেতে ওঠে সেলফি তোলায়। অনেকে ব্যস্ত সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করায়। কেউবা ওয়াটার বোট বা নৌকা ভ্রমণ করে হাতিরঝিলের বাড়তি আনন্দ উপভোগে ব্যস্ত।
করোনা মহামারির বন্দি দশা থেকে বের হয়ে রাজধানীবাসী একটু নির্মল আনন্দের জন্য পরিবার-পরিজন নিয়ে হাতির ঝিলের মনোরম পরিবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই আনন্দ উচ্ছ্বাসের মধ্যে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। সে দিকে অনেকের তেমন খেয়াল নেই। ছেলে বুড়ো সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছেন মনের আনন্দে। কেউ পরিবার, কেউবা বন্ধুদের নিয়ে উপভোগ করছেন লেকের সৌন্দর্য। অনেকে লেকের পাশ দিয়ে রিকশা ভ্রমণ করে কাটাচ্ছেন মজার সময়। মোটর সাইকেল আরোহীদের ঘুরাফেরাও বেশ চোখে পড়ার মতো। রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন হাতিরঝিল এলাকায় দেখা যায়, দুপুরের হালকা রোদে লোকে লোকারণ্য। আর তাদের বিনোদনকে আরো রঙিন করতে রাস্তার পাশে ব্যস্ত সময় পার করছে নানান দ্রব্যের পসরা সাজিয়ে বসা দোকানীরা।
প্রায় আড়াই কোটি মানুষের বসবাস মহানগরী ঢাকাতে। জীবনের তাগিদে প্রতিদিনই ছুটে চলা এসব মানুষের নেই পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা। বায়ুদূষণ, যানজট, শব্দদূষণ, খোঁড়াখুঁড়ি আর ধুলাবালিতে অতিষ্ট নগরজীবন। এ অবস্থায় রাজধানীবাসীর অনেকের কাছেই একটু শান্তি ও স্বস্তিতে নিঃশ্বাস ফেলার জায়গার নাম হাতিরঝিল। তাইতো বিজয় দিবসে আনন্দ উপভোগ করতে অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে হাতির ঝিলে ছুটে যান। গতকালও রামপুরা, বাড্ডা, গুলশান, তেজগাঁও, মগবাজার, ইস্কাটন, মালিবাগ, কারওয়ান বাজার এ অংশগুলোকে এক সুতোয় গেঁথেছিল হাতিরঝিল। করোনা মহামারির বন্দি দশা থেকে বের হয়ে এসে খানিকটা ঘুরে বেড়ানোর জন্য, বুক ভরে নিশ্বাস নেয়ার হাজার হাজার মানুষ হাতিরঝিলে ভিড় করেছে। বেলা গড়িয়ে বিকেল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতিরঝিলে মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করে।
সন্ধ্যা নামার পর আরেক রূপে দেখা যায় হাতিরঝিলকে। পরিকল্পিত আলোক সজ্জার কারণে অনেকটা ইউরোপ আমেরিকার মতো দেখা যায় এসময় হাতিরঝিলকে। হাতিরঝিলের সড়কগুলোর পাশাপাশি ব্রিজেও আছে আলোক সজ্জার ব্যবস্থা। দূর থেকে এসব ব্রিজকে দেখতে তখন লন্ডনের টাইমস ব্রিজ বা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ব্রিজের মতই লাগে। হাতিরঝিলে বেড়াতে আসা লোকজন এই নন্দনিক দৃশ্য প্রাণ ভরে উপভোগ করেন।
চিড়িয়াখানায় উপচেপড়া ভিড়
রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় গতকাল বিজয় দিবসে সকাল থেকে ছিল দর্শনার্থীদের ঢল। শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ সব বয়স এবং শ্রেণি-পেশার মানুষের আগমনে মুখর ছিল চিড়িয়াখানা। তবে উপেক্ষিত ছিল স্বাস্থ্যবিধি। করোনা মহামারির মধ্যে সকাল থেকেই চিড়িয়াখানায় ভিড় বাড়তে শুরু করে। সরকারি ছুটির এই দিনে লাল-সবুজের বাহারি পোশাকে অনেকেই আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসেন। ছুটির দিনে খোলামেলা প্রাকৃতিক পরিবেশে আসতে পেরে দর্শনার্থীরা ছিলেন ভীষণ উচ্ছ¡সিত। শিশু-কিশোরদের আনন্দ ছিল চোখেপড়ার মতো। দর্শনার্থীদের অনেকেই মাস্ক ছাড়া ভেতরে ঢুকেছেন। অনেকে সেলফি তুলছেন। বাইরে থেকে খাবার এনেও খেয়েছেন অনেকে।
এ ছাড়া মহান বিজয়ের দিনটিতে রাজধানী জুড়েই ছিল উৎসবের নানা আয়োজন। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বিজয়ের লাল-সবুজ রং ধারণ করেছে বসনে ও হৃদয়ে। সব বয়সী মানুষ দিনভর মেতে থাকে উৎসবের আমেজে। রাজধানীর খোলা জায়গাগুলোতে ভিড় ছিল বেশি। সংসদভনের পাশে মানিকমিয়া এভিনিউতে ছিল মানুষের ঢল। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্থাপনাসহ সড়কগুলোও জাতীয় পতাকা ও বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়। বিজয় দিবস উপলক্ষে কয়েকদিন ধরেই লাল-সবুজের আলোয় উদ্ভাসিত হচ্ছে রাজধানীর গুরুত্বপ‚র্ণ স্থান, সু-উচ্চ ভবন ও স্থাপনা। সন্ধ্যা নামতেই বর্ণিল আলোক ছটায় মুর্ত হয়ে উঠছে লাল সবুজের পতাকার অবয়ব।
আতশবাজি ও ফানুস উড়িয়ে ৪৯তম বিজয় দিবস উদযাপন শুরু করল নতুন প্রজন্ম। বিজয়ের প্রথম প্রহরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ধর্মনিরপেক্ষ ও অসা¤প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে শপথবাক্য পাঠ করার মধ্যদিয়ে শুরু হয় নতুন প্রজন্মের বিজয় দিবস। এসময় নানা বয়সী মানুষ এক হয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করে শ্রদ্ধাভরে। সবার কণ্ঠেই ছিল অসা¤প্রদায়িক শক্তিকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়। জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ প্রতিহত করার ঘোষণাও দেন তারা। পরে দেশাত্ববোধক গান পরিবেশন করে প্রজন্ম একাত্তর। বিজয় দিবস উপলক্ষে টিএসসি, শাহবাগ এসব এলাকায় দিনভর ছিল মানুষের ঢল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।