বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ঠাকুরগাঁওয়ে ওয়াক্ফ এস্টেটে ভুল তথ্য দিয়ে মোতওয়ালি ও নিজেকে মালিক পরিচয় দিয়ে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে রেজেকুল ইসলাম (৩৫) নামে এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে।
এমনই অভিযোগ করেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের সেনিহারি সরকারপাড়া এলাকার প্রয়াত বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার সরকারের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।
অভিযুক্ত প্রভাবশালী রেজেকুল ইসলাম একই গ্রামের প্রয়াত এমদাদুল রহমানের ছেলে। তবে অভিযুক্ত রেজেকুল ইসলামের দাবী তিনি ২০০৩ সালে ওয়াকফ এস্টেটের কাছে আবেদন করে জমির মোতওয়ালি হয়েছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২০০৩ সালে সেনিহারি মৌজার ওয়াক্ফ এস্টেটের প্রায় ৪০ বিঘা জমি দখল করে প্রভাবশালী রেজেকুল ইসলাম। তিনি ওই জমির কিছু অংশে বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ করেছেন। এছাড়াও কিছু জমি অন্যদের আবাদ করার জন্য বন্ধক হিসেবে দিয়েছেন।
জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই সেনিহারি গ্রামের ওয়াকফ এষ্টেটের ৮০ বিঘা জমি সমান ভাবে বীরমুক্তিযোদ্ধা মৃত জব্বার সরকার ও রেজেকুল সহ সকল ওয়ারিশগন সমানভাবে ভোগদখল করে আসছে। এরপর ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল মারা যায় মুক্তিযোদ্ধা জব্বার। গত ২৪ অক্টোবর ভোরে কাউকে না জানিয়ে জোড়পূর্বক মৃত আব্দুল জব্বারের সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে মহেন্দ্রট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ করে রেজেকুল। তাকে বারণ করতে গেলে সে উল্টো ওই মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের স্বজনদের নানা ভাবে হুমকি প্রদান করেন। এঘটনায় মৃত আব্দুল জব্বারের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম স্থানীয় চেয়ারম্যান ও রুহিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার সরকারের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, রেজেকুল ভুয়া কাগজ বানিয়ে নিজেকে জমির একক মোতওয়ালি ও মালিক হিসাবে দাবী করেন। কিন্তু বাংলাদেশ ওয়াকফ এ্যাষ্টেট এর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মোতওয়ালী একজন এ্যাষ্টেটের ম্যানেজার মাত্র। এরপরেও আমাদের ২৬ বিঘা জমির ধান জোড় পূর্বক কেটে নিয়ে যায় রেজেকুল। বিষয়টি জানা যানি হওয়ার পর পরিবারের সকলে মিলে বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার সরকারের ছেলে বড় ছেলে হুমায়ুন কবির বিপ্লবকে ইব্রাহিম সরকার ওয়াকফ এষ্টেটের একক মতোওয়ালি করার জন্য সকলে মিলে একটি সুপারিশ করেন। কিন্তু রেজেকুল জমিতে কাউকে যেতে না দিয়ে ও জমির বিভিন্ন অংশ একাধিক মানুষের কাছে বন্ধক দেয়।
বীরমুক্তিযোদ্ধার ছেলে হুমায়ুন কবির বিপ্লব বলেন,ওয়াক্ফ এস্টেট আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রেজেকুল ইসলাম ১৭ বছর আগে ৪০ বিঘা জমি করে এবং সে জমির কোন হিসেব নিকেশ ওয়ারিশগণের কাছে দেয়নি। যদিও ওয়াকফ দলিলে উল্লেখ আছে প্রতিবছরেই সমস্ত ওয়ারসিদের হিসাব নিকাশ বুঝিয়ে দিতে হবে। এই জমির বর্তমান মতোওয়ালি রেজেকুল ইসলামের মতোওয়ালী বাতিলের জন্য একটি আবেদন করা হয় ওয়াকফ এ্যাষ্টেটে। ২৪ নভেম্বর ঢাকা ওয়াকফ এ্যাষ্টেট থেকে জেলা প্রশাসক বরাবরে পূর্ন তদন্ত করার জন্য একটি আবেদন আসে।
তিনি আরো বলেন,রেজেকুল নিজেই নিজের জমিতে হাল চাষ দিয়েছে। আমাদের ওয়ারসিদের মধ্যে কেউ তার জমিতে হালচাষ দেয়নি। কিনবা তার জমির কোন ফসল নষ্ট হয়নি। এরপরেও সে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। এদিকে ওয়াক্ফ এস্টেট থেকে বিষয়টি তদন্তের জন্য ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেওয়ার পর থেকে প্রভাবশালী রেজেকুল ইসলাম তার ওয়ারিশদের নানা ধরনে হুমকি দিয়ে আসছে।
সেনিহারি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল রহমান বলেন, ২০১৬ সালে প্রায় এক লাখ টাকা দিয়ে রেজেকুলের কাছে ১৮ কাঠা জমি বন্ধক নেয়ার পর থেকে সেখানে ফসল আবাদ করে আসছি। কিন্তু কিছুদিন আগে আমার বন্ধক নেয়া জমিতে হালচাষ করে রেজেকুল। বাঁধা দিলে সে উল্টো হুমকি প্রদান করে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রেজেকুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ২০০৩ সালে ওয়াকফ এষ্টেটে আবেদন করেই জমির মোতওয়ালি হয়েছি। এখন সেই মোতওয়ালি বাতিল করার জন্য আমার ওয়ারিশরা নানা ধরনের মিথ্যা কথা ছড়াচ্ছে। তাদের সমস্ত অভিযোগ মিত্যা।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, রুহিয়ার ওয়াক্ফ এস্টেটের জমি নিয়ে একটি তদন্ত এসেছে। ইতিমধ্যে আমরা তদন্তের কাজ শুরু করেছি। অপরদিকে রুহিয়া থানা থেকে আলাদা ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে সেজন্য প্রশাসনকে বলা হয়েছে। আশা করি দ্রæত বিষয়টির সমাধান হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।