Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাড়ে ৩ কোটি মানুষের কাছে পদ্মা সেতুর সুফল মিলবে কবে ?

২১ জেলার জাতীয় মহাসড়কগুলোর উন্নয়ন বিলম্বিত হচ্ছে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:০৭ এএম

দেশবাসির স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মান কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌছলেও এ সেতুর সুবিধা দক্ষিন ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সাড়ে ৩ কোটি মানুষের কাছে পৌছতে সংযোগ সড়কগুলোর দুরবস্থা উন্নয়ন এখনো সুদুর পরাহত। এমনকি রাজধানী ঢাকা থেকে ৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের দুটি সার্ভিস লেন সহ ৬ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত পৌছলেও সেখান থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার মহাসড়কগুলো ৪ বা ছয় লেনে উন্নীতকরন প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। অথচ পদ্মা সেতু সহ ভাংগা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মানে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা ব্যায় হচ্ছে। ভাঙ্গা জংশন থেকে বরিশাল বিভাগের ৬টি, খুলনা বিভাগের ১০টি এবং ফরিদপুর অঞ্চলের ৫টি জেলার গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কগুলোর উন্নয়ন পরিকল্পনা কাগুজে গন্ডি পের হতে পারেনি এখনো। দেশের ইতিহাসে সর্বাধীক ব্যায়বহুল সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার ৫৫ কিলোমিটার ভাংগা-মাওয়াÑঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে গত ফেব্রুয়ারী মাসে উদ্বোধন হলেও তার সুবিধাও পদ্মা সেতুর সাথে সংযূক্ত এ অঞ্চলের ২১টি জেলায় কবে পৌছবে তা বলতে পারছেন না কেউ।
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু অতিক্রম করে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৬ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে পৌছলেও সেখান থেকে ৯০ কিলোমিটার দক্ষিনে বরিশাল, ৯৩ কিলোমিটার পশ্চিমে যশোর এবং ১৩৪ কিলোমিটার পশ্চিমে বেনাপোল স্থল বন্দর ছাড়াও ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে পায়রা ও ২০৩ কিলোমিটার দক্ষিণে কুয়াকাটায় পৌছার সড়ক-মহাসড়কের কোনটিই এখরনা মানসম্মত নয়। এসব মহাসড়ক এখনো মাত্র ১৮ফুট থেকে ২৪ ফুট প্রস্থ। ভাঙ্গা থেকে ১২৭ কিলোমিটার দক্ষিনÑপশ্চিমে খুলনা ও ৬৭ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিনে গোপালগঞ্জ মহাসড়কটিও ৩০ফুট প্রস্থ। ২০০৫ সালে এ মহাসড়কটি নির্মিত হয়। এমনকি ভাঙ্গাÑফরিদপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার মহাসড়কটিও মাত্র ১৮Ñ২৪ ফুট প্রস্থ। যশোর ও বেনাপোলকে সংযূক্তকারী ভাটিয়াপাড়া থেকে নড়াইল হয়ে যশোরের মহাসড়কটি এখনো মাত্র ১৮ ফুট প্রস্থ। বরিশালের লেবুখালী থেকে পটুয়াখালী হয়ে পায়রা বন্দর ও কুয়াকাটা মহাসড়কটিরও একই অবস্থা।
এসব মহসড়ক উন্নয়নে একাধীক প্রকল্প গ্রহন করা হলেও কোনটিই এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ফরিদপুরÑবরিশালÑপায়রা বন্দরÑকুয়াকাটা মহাসড়কটি ৪ লেনে উন্নয়নের লক্ষ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় ইতোমধ্যে একটি সম্ভাব্যতা সমিক্ষা সহ বিস্তারিত নকশা প্রনয়ন সম্পন্ন হলেও ভ’মি অধিগ্রহন সম্পন্ন হয়নি গত তিন বছরেও। যা গত জুনে সম্পন্ন হবার কথা থাকলেও আগামী জুনেও তা শেষ হবে কিনা সন্দেহ ওয়াকিবাহল মহেল। প্রস্তাবিত ঐ ৪ লেন মহাসড়কেটি বরিশাল মহানগরীকে বাদ দিয়ে বাইপাস নির্মানের সিদ্ধান্ত হলেও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে ভাংগা-বরিশাল রেলপথের এলাইনমেন্টের ওপর পরায়। এমনকি প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যায় সাপেক্ষ এ প্রকল্পটির কোন দাতা না মেলায় প্রাথমিক পর্যায়ে ফরিদপুর থেকে বরিশাল পর্যন্ত ১২৪ কিলোমিটার মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু পুরো প্রকল্পটিই এখনো অনেকটাই অন্ধকারে।
ভাঙ্গা থেকে ভাটিয়াপাড়া হয়ে যশোরÑবেনাপোল পর্যন্ত মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীতকরন প্রকল্পটিও এখনো পরিকল্পনায় আবদ্ধ। তবে সড়ক অধিদপ্তরের একটি দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, ‘ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিট’এর আওতায় বেনাপোল-যশোর-ভাটিয়াপাড়া-ভাংগা অংশের মহাসড়কটি উন্নয়নে সম্ভাব্যতা সমিক্ষা শেষ হয়েছে। বৈদেশিক অনুদান বা ঋন নিশ্চিত হলেই সমিক্ষা ও পথ নকসা অনুযায়ী ঐ মহাসড়কটিও ৬ লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ মহাসড়ক উন্নয়নে ভারতীয় ঋন পাবার সম্ভবনার কথাও জানিয়েছে দায়িত্বশীল মহলটি। কিন্তু কবে নাগাদ এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে তা বলতে পারছেন না কেউ। তবে ঐ মহাসড়কের গোপালগঞ্জ ও নড়াইলের মধ্যবর্তি মধুমতি নদীর ওপর কালনা’য় জাপানী অর্থায়নে প্রায় ৯শ কোটি টাকা ব্যায়ে একটি ৬ লেন সেতুর নির্মান কাজ এড়িগয়ে চলছে।
অপরদিকে ঢাকাÑখুলনা মহাসড়কের ভাটিয়াপাড়া-গোপালগঞ্জ-খুলনা অংশের প্রায় ৮৫ কিলোমিটার মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার লক্ষেও সম্ভাব্যতা সমিক্ষা সহ নকশা প্রনয়নের সরকারী সিদ্ধান্ত হলেও এ প্রকল্পেও কোন দাতা মেলেনি। খুব একটা অগ্রগতিও নেই। অথচ এ মহাসড়কটির ওপরই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্বম মোংলা সমুদ্র বন্দর ও ভোমড়া স্থল বন্দরের সাথে রাজধানী সহ প্রায় সারা দেশেরই সড়ক যোগাযোগ নির্ভরশীল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক অধিদপ্তরের একাধীক দায়িত্বশীল সূত্র, ফরিদপুর-বরিশাল-পায়রা-কুয়াকাটা ছাড়াও নড়াইল-যশোর-বেনাপোল এবং গোপালগঞ্জ হয়ে মোংলা ও খুলনা পর্যন্ত মহাসড়কগুলো ৬ লেনে উন্নীত করনে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। অন্যথায় পদ্মা সেতু সহ ঢাকা-মাওয়া-ভাংঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মানের সুফল দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষের ভাগ্যে নাও জুটতে পারে। এমনকি এলক্ষে জরুরী পদক্ষেপর গ্রহন করলেও পুরো বরিশাল ও খুলনা বিভাগ এবং ফরিদপুর অঞ্চলের ২১টি জেলার গুরুত্বপূর্ণ এসব জাতীয় মহাসড়কসমুহ উন্নয়নে কমপক্ষে ৭-৮ বছর লেগে যেতে পারে। তবে এলক্ষে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহন সহ ঢাকা-মাওয়া-ভাংঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের মত এসব জাতীয় মহাসড়ক উন্নয়নের কাজও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সম্পন্নের তাগিদ দিয়েছেন ওয়াকিবাহল মহল। কিন্তু সব কিছুর আগে এসব প্রকল্পের ডিপিপি প্রনয়নের পাশাপাশি তা অনুমোদন ও অর্থের সংস্থানে ক্রাস প্রগ্রাম গ্রহনেরও তাগিদ দিয়েছেন মহলটি।



 

Show all comments
  • Jack Ali ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:৫৯ এএম says : 0
    If our country ruled by the Law of Allah then we would have finished the Job properly. One of the Sign of Qiyammah is ignorant people will rule the country.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ