পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আগামীকাল সুন্দরবন স্কোয়ার সুপার মার্কেট থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ মার্কেটে মোট ৬৬৯টি অবৈধ দোকান রয়েছে। এছাড়া মার্কেটটিতে ৫ম তলা নকশার বাহিরে অবৈধভাবে করা হয়েছে। ৫ম তলাটি নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। অসহায় ব্যবসায়ীরা দোকান কেনার পরও কয়েক দফায় টাকা দিয়ে দোকান বৈধ করতে পারেনি। অবৈধ দোকান থেকে প্রায় ৮২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেট। সেই দোকানগুলো আগামীকাল উচ্ছেদ করা হবে। তাই খুবই অসহায় অবস্থায় রয়েছে অবৈধ দোকানের মালিকরা। অথচ যারা তালা মেরে অসহায় দোকান মালিকদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে তারা ধরা ছোয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
মার্কেটটিতে নকশা বহির্ভূত অবৈধ দোকান বানিয়ে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ রতন, যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা জামাল উদ্দিন, ২০ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সদ্য অব্যহতি পাওয়া সভাপতি শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে। শাহাবুদ্দিন ফরিদ উদ্দিন রতনের ঘনিষ্ঠ। রতন তার সকল কর্মকান্ড শাহাবুদ্দিন, ২০ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ, যুবলীগের নেতা শাহজালাল রিপনের মাধ্যমে পরিচালিত করেন। তাদের সাথে আরো রয়েছে, মার্কেট কমিটির নেতা-বিএনপি নেতা শাহ মো. বাদল, বিএনপি নেতা শাহ আলম চৌধুরী, জামায়ত নেতা ফিরোজ আলম, জেডিএল এর কর্মচারী লোকমান, লিটন, মাজু, মনির প্রমুখ। সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রোকসানা চামেলি ইনকিলাবকে বলেন, শাহাবুদ্দিন, হাসান মাহমুদ, শাহজালাল রিপনের মাধ্যমে সকল কাজ পরিচালনা করেন কাউন্সিলর রতন।
সূত্র মতে, ২০১২ সালে মার্কেটটি দখল করেন কাউন্সিলর রতন, জামাল, শাহাবুদ্দিন। সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের সময় অবৈধ দোকান বানানো হয়। পরবর্তীতে ৪ তলা মার্কেট করা হয় ৫ তলা। সে সময় মার্কেটটির জেনারেটর, এক্সেলেটরও বিক্রি করে সে জায়গায় দোকান বানান শাহাবুদ্দিন। এছাড়া হাটার জায়গা, টয়লেট ভেঙেও দোকান বানানো হয়। মোট ৬৬৯টি অবৈধ দোকান বানিয়ে বিক্রি করা হয়। সে সময় প্রশাসকের কাছ থেকে লিজও নেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে সাঈদ খোকন মেয়র নির্বাচিত হলে সব লিজ বাতিল করে অবৈধ দোকান ভেঙে দেয়ার নির্দেশ দেন। পরে ওই সিন্ডিকেট উচ্চ আদালত থেকে পুনর্বাসনের আদেশ নিয়ে আসেন। রায়ের পরে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে ৭ বছরের ভাড়া জমা দেয়া সাপেক্ষে ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় সিটি করপোরেশন। ওই সিদ্ধান্তের অপব্যাখ্যা দিয়ে দোকানে দোকানে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন তিনি। জামাল, শাহাবুদ্দিন, খোকন ও গুসুর নেতৃত্বে চাঁদাবাজি চলছে। মার্কেটে গিয়ে এই ক্যাডার বাহিনী চাঁদা দাবি করে। না দিলে দোকানে তালা মেরে দেয় তারা, করে নির্যাতন। দোকান প্রতি ১২ থেকে ২৫ লাখ টাকা আদায় করা হয়। এই পুরো ঘটনার সাতে জড়িত ছিলেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন ও চাকুরিচ্যুত প্রধান রাজস্ব কর্মকতা ইউসুফ আলী সরদার।
মেয়র তাপস বরাবর দেয়া একটি অভিযোগে বলা হয়, সুন্দরবন স্কোয়ার মার্কেটটি চারতলা হলেও সিটি করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে আরও একতলা নির্মাণ করেন শাহাবুদ্দিন। এ ছাড়া মার্কেটের প্রতিটি ফ্লোরের বিভিন্ন কমন স্পেস, ফ্লোরপ্রতি দুটি করে টয়লেট, ওজু করার স্থান ছিল। কিন্তু এসব ভেঙে নির্মাণ করা হয় দোকান। ব্যবসার স্বার্থে মার্কেটটির ব্যবসায়ীরা সম্মিলিতভাবে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করেন ১২টি এস্কেলেটর (চলন্ত সিঁড়ি)। শাহাবুদ্দিন এসব সিঁড়ি ভেঙে ভাঙাড়ির দোকানে বিক্রি করে দেন। বেসমেন্টের জেনারেটর রুমটিও দোকান বানিয়ে বিক্রি করে দেন তিনি।
সুন্দরবন স্কোয়ার মার্কেটের সাবেক সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, ২০১২ সালে ঢাকা মহানগর যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের নাম দিয়ে ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদউদ্দিন রতন, যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা জামাল উদ্দিন, ২০ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন মার্কেটের বৈধ কমিটিকে তাড়িয়ে দিয়ে মার্কেট দখল করে। তাদের সাথে আরো ছিল, বিএনপি নেতা শাহ মো. বাদল, বিএনপি নেতা শাহ আলম চৌধুরী, জামায়ত নেতা ফিরোজ আলম, জেডিএল এর কর্মচারী লোকমান, লিটন, মাজু, মনির।
তিনি বলেন, মার্কেট দখল করে ফরিদ উদ্দিন রতন তার বিল্ডার্স কোম্পানি দিয়ে অবৈধভাবে ৫ তালা করে। এক্সেলেটর, জেনারেটর বিক্রি করে দেয় শাহাবুদ্দিন। রতন, শাহাবুদ্দিন লিফটের জায়গা, বাথরুম ভেঙে দোকান বানায়। পুরো মার্কেটে ৬৯৫টি অবৈধ দোকান বানিয়ে একশো কোটি টাকা বেশি হাতিয়ে নিয়েছে তারা। নুরুল ইসলাম আরো জানান, তার নিজের দোকান শাহাব্ুিদ্দন মালিক সেঁজে আরেকজনের কাছে ভাড়া দিয়ে দেয়। থানায় মামলা করতে চাইলে সম্রাটের ইশারায় মামলা নেয়নি পুলিশ।
সাবেক ৩৪ নং কাউন্সিলর মীর সমীর ইনকিলাবকে বলেন, যুবলীগের জামাল, ২০ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন অবৈধ দোকান বানিয়ে বিক্রি করার মূল হোতা। দোকান বিক্রি করে প্রায় ৮০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এই মার্কেট ৩৪ নং ওয়ার্ডের মধ্যে হলেও ২০ নং ওয়ার্ডের লোকজন নিয়ন্ত্রণ করতো। সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের সাথে যোগসাঁজস করে তারা এসব করেছে। মেয়র যেহেতু তাদের পাশে ছিল তাই কাউন্সিলর হিসেবে আমাকে কোন পাত্তা দিত না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়, যুবলীগের প্রভাব খাটিয়ে শাহাবুদ্দিন এখন শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তার নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া ও বঙ্গবাজারের ৫টি মার্কেট। গুলিস্তানের ব্যবসায়ীদের কাছে যুুবলীগ নেতা শাহাবুদ্দিন এখন এক আতঙ্কের নাম। বিভিন্ন মার্কেটের অবৈধ জায়গায় দোকান স্থাপন করে তিন-চারজনের কাছে বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। প্রভাবশালী বিধায় শাহাবুদ্দিনের কাছে কেউ টাকা চাইতে সাহস পান না। শূন্য হাতে গুলিস্তানের ফুটপাতে ব্যবসা করা শাহাবুদ্দিন এখন কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করেন গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া ও বঙ্গবাজার থেকে। মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্রের আলী আহম্মেদের ডান হাত হওয়ায় ওই ক্লাবের ক্যাসিনো কারবারের টাকার ভাগও যেত তার পকেটে। প্রতিদিন শাহাবুদ্দিন ২০ হাজার টাকা পেতেন মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্রের ক্যাসিনোর বোর্ড থেকে।
অভিযোগের বিষয়ে ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন ইনকিলাবকে বলেন, আমি সিটি করপোরেশনের কোন কাজ করিনি। যারা অভিযোগ করে আমার প্রতিষ্ঠান এনএন বিল্ডার্স ৫ তলা টি বানিয়েছে তাদের কাছে কাজের জন্য ওয়ার্ক পারমিট বা টাকা দেয়ার ডকুমেন্ট দিতে বলেন।
এ বিষয়ে ২০ নং ওয়ার্ড যুবলীগের অব্যহতি প্রাপ্ত সভাপতি শাহাবুদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, কোন চুক্তির মাধ্যমে কাজ হয়নি। দোকানদাররা নিজেরা নিজেরা ৫ তলা টি বানিয়েছে। জেনারেটর ও এক্সেলেটর বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, মার্কেটে তো সবই আছে, তা না হলে মার্কেট চলে কিভাবে?
দোকান তালা মেরে টাকা নেয়ার বিষয়ে ফরিদ উদ্দিন রতন বলেন, আমি কখনো সিটি করপোরেশনের কোন মার্কেটে যাইনি। মার্কেটের টাকা অভিষপ্ত। আমি হারাম খাই না। তিনি আরো বলেন, সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের সাথে এবং যুবলীগ দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের সাথে আমার দ্ব›দ্ব ছিল। তাই সিটি করপোরেশনের কাজ বা মার্কেটে আমার যাওয়ার সুযোগ ছিল না। শাহাবুদ্দিন আমার রাজনৈতিক পরিচিত।
এ বিষয়ে সংরক্ষিত কাউন্সিলর রোকসানা চামেলি ইনকিলাবকে বলেন, ফরিদ উদ্দিন রতন নিজে কখনো মার্কেটে যেত না। রতনের হয়ে শাহাবুদ্দিন, ২০ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ, রতনের চাচাতো ভাই পরিচয় দেয়া শাহ জালাল রিপন সব নিয়ন্ত্রণ করে। সুন্দরবন স্কোয়ার মার্কেটের ৫ তলা ও গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের কাজ শাহ জালাল রিপন করেছে।
তালা মেরে টাকা নেয়ার বিষয়ে শাহাবুদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, এ বিষয়ে ইতোমধ্যে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন মিডিয়াতে কথা বলেছেন। আমরা টাকা তুলে তাকে দিয়েছি। দোকান প্রতি ১২ থেকে ২৫ লাখ টাকা নিয়েছেন কিন্তু মেয়রকে কত টাকা দিয়েছেন এমন প্রশ্নে শাহাবুদ্দিন বলেন, চেকের মাধ্যমে টাকা দিয়েছি, কত দিয়েছি তা মনে নেই।
কাউন্সিলর রতন বলেন, দোকান মালিকরা আসলেই অসহায়। মার্কেট কমিটি তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, পরিচ্ছন্নতা বিল, সার্ভিস চার্জের নামে দোকান মালিকদের উপর অত্যাচার চালায়। এখন আবার দোকানও উচ্ছেদ করা হবে। তবে আমি মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথা বলেছি, আমি উচ্ছেদের সাথে আছি। আমরা সর্বাত্ম সহযোগীতা করবো।
এ বিষয়ে প্রায় বিশ জন দোকান মালিকের সাথে কথা হলে তারা জানান, তাদের উপর অত্যাচার করা হয়েছে। দোকান বৈধ বলে বিক্রি করা হয়েছে। সেই দোকান তালা মেরে নেতারা আবার টাকা নিয়েছে। এখন আবার সেই দোকান ভেঙে দেয়া হবে। আমরা অসহায়, আমাদের সাথে যে অত্যাচার করা হচ্ছে আমরা তার বিচার চাই। যারা টাকা নিয়েছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। কারা দোকান বানিয়েছে, কারা বিক্রি করেছে, কারা তালা মেরে টাকা আদায় করেছে এসব কিছুই মেয়র সাহেব জানেন। আমরা এর বিচার চাই।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।