Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিলেট নগরীতে উন্নয়নযজ্ঞে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাঝুঁকিতে পথচারীরা

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:১২ পিএম

বছর জুড়েই চলছে সিলেটে নগরীতে উন্নয়নযজ্ঞ। পরিকল্পিত না অপরিকল্পিত তা বলা বাহুল্য। তবে উন্নয়নযজ্ঞের পূর্বে স্বাস্থ্য বা পথচারী চলাচলের দিকে মোটেই খেয়াল রাখেনি কর্তৃপক্ষ। উন্নত বিশে^র বিভিন্ন শহরের আদলে সিলেট নগরীকে সাজানোর স্বপ্ন্ও আওড়াচ্ছেন তারা। এমনকি স্মার্ট নগরী হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গিরকার করেছেন সিসিক মেয়র আরিফুল হকে চৌধুরী। কিন্তু নগরীর দাম বাড়াতে যেয়ে নগরবাসীকে একেবারের কমদামীতে পরিগণিত করেছেন এ কর্তৃপক্ষ। উন্নত বিশে^ উন্নয়নযজ্ঞের পূর্বে পথচারীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। একান্ত পরিকল্পিতভাবেই গড়ে তোলা হয় নিরাপত্তা ব্যুহ। সেই সাথে একাধিক স্থানে সর্তকতামুলক সাইনবোর্ড টানিয়ে রাখা হয়। কিন্তু এর কোনটিই নিশ্চিত করা হচ্ছে না এ সিটির উন্নয়নযজ্ঞের সাথে। ধুলোবালিতে একাকার নগরীবাসী, স্থাস্থ্য নিরাপত্তা নেই। একই সাথে নেই ড্রেনগুলো আগলে রাখার ব্যবস্থা। খোলামেলা পরিবেশে মরণ ফাঁদ বানিয়েই যেমন খুশি তেমন কাজ চলছে সিটি এলাকায়। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সহ কর্মের আনুষ্টাঙ্গিক তথ্য তুলে ধরেই সাটনো হয়না কোন সাইনবোর্ড। তাহলে জনগনের নিকটও একটি জবাবদিহিতার মধ্যে পড়তো সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্টান। সেকারনে তারা কাজ করছে কেবল সিটি কর্তৃপক্ষকে প্রলোভনের চাদরে জড়িয়ে। মাসের কাজ বছর গড়াচ্ছে সংশ্লিষ্ট তদারকি প্রতিষ্টানকে ম্যানেজ করে। এতে করে উন্নয়নের নামে, ব্যাহত হচ্ছে মানুষের মৌলিক অধিকার। স্বাস্থ্য ও নিরাপদ পথচলা এখন চরম হুমকিতে। প্রতিদিনই নির্মাণাধীন অরিক্ষিত খোলা ড্রেনে দূর্ঘটনায় পতিত হচ্ছেন সাধারন মানুষ। ছোটখাট দূর্ঘটনায় পড়লেও দায় নেই কারো। উদাসীন কর্তৃপক্ষ, কপালের লেখন মনে করছেন ভাগ্যবঞ্চিত নগরবাসী। উন্নয়নের নামে নিরাপত্তা ঝুঁকির বাস্তবতার শেষ কোথায় বলতে পারছে না কেই। এরকম অবস্থায় একটি নির্মাণাধীন ড্রেনের গর্তে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছিলেন সিলেটের বিশিষ্ট কবি ও ছড়াকার ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল বাসিত মোহাম্মদ। বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। গত সোমবার সন্ধ্যায় সিলেট নগরীর আম্বরখানার হুরায়রা ম্যানশনের সামনে সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্মাণাধীন ড্রেনে পড়ে কবি আব্দুল বাসিত মোহাম্মদের পেটের মধ্যে রড ঢুকে যায়। এসময় গুরুতর আহত হন তিনি। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুদিন এমএজি ওসমানী হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) ভোরে তিনি ইন্তেকাল করেন। যদিও, কবি-ছড়াকার আব্দুল বাসিত মোহাম্মদের এমন মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তড়িঘড়ি করে নগরীর বিভিন্ন রাস্তার পাশে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে থাকা রডগুলো ঢাকতে শুরু করে সিসিক। বৃহস্পতিবার বিকেলে যে স্থানে কবি-ছড়াকার আব্দুল বাসিত মোহাম্মদের দূর্ঘটনা ঘটে সে স্থানে গিয়ে দেখা যায় দিনে দিনে তড়িগড়ি করে সেই স্থানটি সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে দেয়া হয়েছে। তবে এখনও অনেক জায়গায় এমন রড বের হয়ে আছে। এ বিষয়ে কবি-ছড়াকার আব্দুল বাসিত মোহাম্মদের জানাযায় অংশ নিয়ে কবি ও এডভোকেট আব্দুল মুকিত অপি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এরকম দূর্ঘটনা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না, এর দায় অবশ্যই সিসিকের। সুষ্টু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি দেয়ার পাশাপশি সিসিক কতৃক মরহুমের পরিবারকে ক্ষতিপুরণ দেয়ার দাবীও জানান এ আইনজীবি। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এমন ঘটনার দায় সিসিকেরই, আমরা সঠিক নিরাপত্তা দিয়ে কাজ করতে পারিনি। তিনি আরো জানান, সিসিকের পক্ষ থেকে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে দেয়া হয়েছে। কমিটি আগামী ৩ দিনের ভেতর রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এদিকে, বৃহস্পতিবার বিকেলে কবি-ছড়াকার আব্দুল বাসিত মোহাম্মদের জানাযায় অংশ নিয়ে জানাযাপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, দূর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে, দায়ীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেট নগরীতে উন্নয়নযজ্ঞের নামে সংশ্লিষ্টদের পকেট ভারীই চলছে মুলত। তদারকির নামে চলছে বেআইনী কাজের অনুমোদন। উন্নয়ন কাজ শুরুর পূর্বে চলমান বাস্তবিক চিত্র অনুযায়ী বিকল্প পথ তৈরী বা কাজের চারিপাশে নিরাপত্তামুলক বেষ্টনী দেয়ার প্রয়োজনবোধ করেনি কর্তৃপক্ষ। অতীতের চলমান পথেই চলছে কর্মযজ্ঞ। পরিবেশ প্রতিবেশ যে নাগরিকদের জন্য উন্নত করা হচ্ছে, সেই নাগরিকদের মৃত্যুঝঁকিতে ফেলেই সিটি কর্তৃপক্ষ এমন উন্নয়ন কাজে নেমেছে। একটি সূত্র জানায়, প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে, প্রতিদিনই সিলেটে আসছে বেড়াতে। কিন্তু তারা ঝুঁকি এ পরিবেশ দেখে বিস্মৃত হচ্ছে, দ্রুত অনেকে ফিওে যাচ্ছে, এমনকি অন্যকে দেশে না আসতে বার্তাও দিচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ