Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাসূলপ্রেম এবং আমাদের ঈমানের দাবি

মোঃ শিবির আহমেদ তাশফিক | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

মুসলমান হওয়ার পূর্বশর্ত স্বয়ং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই বলে দিয়েছেন। আল্লাহর প্রতি কারো ভালবাসা ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ বা পূরণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাঁর প্রিয় রাসূলকে (সা.) পরিপূর্ণভাবে ভালবাসবে। অর্থাৎ রাসূল (সা.)-কে ভালবাসলে আল্লাহকে ভালবাসার শর্ত পূরণ হবে, তা না হলে নয়। রাসূলে করিমও (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার মাতা-পিতা, স্ত্রী-পুত্র-পরিজন তথা পৃথিবীতে প্রিয় বলতে যা কিছু আছে, সবকিছু অপেক্ষা সবচেয়ে তাঁকে বেশি ভালবাসবেনা, তার সেই ভালবাসার দাবি কখনো পূর্ণ হবে না। কিন্তু আমরা সেই ভালবাসার দাবি কতটুকু পালন করি? তাছাড়া তাঁকে তো আদম সন্তানদের জন্য আদর্শ হিসেবেও পাঠানো হয়েছে। আদর্শ কি? আদর্শ হলো তাই, যা অনুকরণযোগ্য ও অনুসরণযোগ্য। এই যে একদিকে ভালবাসার দাবি, অপরদিকে অনুকরণযোগ্য একমাত্র আদর্শ এগুলো যদি পালন বা বাস্তবায়ন না করি, তাহলে আমাদের মুসলমানিত্বের দাবি কি মিথ্যে হয়ে যায় না?

সাহাবায়ে কেরামরা তাদের ঈমানের দাবী আদায়ে তো প্রতিযোগিতায় লেগে যেতেন কে কার চেয়ে বেশি ভালবাসেন নবীজি (সা.)-কে। নবীজি (সা.)-এর জন্য নিজেদের জান-মাল কোরবানি দিতে সদা প্রস্তুত থাকতেন তাঁরা। সেই ভালবাসায় কোনো কপটতা বা কৃপণতা ছিলো না। যুদ্ধের ময়দানে হোক, কিংবা যেখানেই হোক, নবীজি (সা.)-এর জানের ওপর কোন হুমকি এসেছে, তাঁরা জান দিয়ে সেই হুমকির মোকাবেলা করেছেন, কোনো কাফের কবি সরদারে কায়েনাতের (সা.) বিরুদ্ধে কটূক্তি করে কবিতা লিখেছে, সাহাবা কবি যারা ছিলেন, তারা তার জবাবে এমন কবিতা লিখেছেন, যার প্রতিটি শব্দ শর হয়ে শত্রুর শীর ও শরীরে তীব্রভাবে আঘাত হেনেছে। অর্থাৎ কি শারীরিক আক্রমণ, কি শব্দের আক্রমণ, উভয় ক্ষেত্রে তাঁরা নবীজি (সা.)-এর নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চে স্থান দিয়েছেন। এককথায় নবীজি’র (সা.) নিরাপত্তার ব্যাপারে তাঁরা ছিলেন নির্ভীক ও নিরাপোষ।

কিন্তু আফসোসের বিষয় বর্তমানে কিছু মুসলমান নামধারী তো এমন আছে, যাদের রাসূলপ্রেম রবিউল আউয়াল মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ, আওলাদে রাসূলপ্রেম মহররম মাসে মাতমের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু প্রকৃত রাসূল প্রেমের বা প্রমাণের প্রশ্ন বা প্রসঙ্গ যখন আসে, যেমন কেউ রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করলো, তার প্রতিবাদ করতে হবে, প্রতিবাদ না করলে ঈমানের বা ভালবাসার দাবি ভূয়া বলে প্রমাণিত হবে, তখন সেই মৌসুমি মওলানাদেরকে বাটি চালা দিয়েও পাওয়া যায় না। এটা কি রাসূলপ্রেম, নাকি প্রেমের নামে প্রহসন বা প্রতারণা?

কিছু বুদ্ধিজীবী আছে, যারা নিজেদেরকে মুসলিম বলে পরিচয় প্রদান করলেও কাজেকর্মে উল্টোটাকেই উৎসাহিত করে। মুসলিম পরিচয়টা রাখে দোযখের ভয়ে নয়, বেহেশত লাভের লোভে। যদি বেহেশত থেকে থাকে, বিশ্বাস না করলে তো বঞ্চিত হতে হবে তা থেকে এ ধরণের একটা সন্দেহের বাতিকে সারাক্ষণ ভোগে তারা। অর্থাৎ দুনিয়াও ছাড়বে না, আবার বেহেশতের লালসাও লালন করবে। মোনাফেকি আর কাকে বলে! এই মোনাফেকদের বলি, যদি শরমই লাগে, মুসলমান পরিচয়টা পরিত্যাগ করলেই তো হয়! কারণ নবীজি (সা.)ই তো ইসলাম, ইসলামই তো নবীজি (সা.)। মঞ্জিলে মকসদে পৌঁছার পথ একটাই, সেটা হলো নবীজি (সা.)-এর প্রদর্শিত পথ সিরাতিম মুস্তাকিম। তাঁকে বাদ দিয়ে যে পথ, সেই পথ ভ্রান্তির, চির অশান্তির। সেই পথ চির অভিশপ্ত শয়তানের।
হে তথাকথিত মুসলমান নামধারী শোনো, “যে তুমি আজ আল্লাহ ও তাঁর হাবিবের (সা.) পক্ষাবলম্বন করতে পিছপা হচ্ছো, আল্লাহ ও তাঁর হাবিব (সা.)-এর কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে কথা বলতে ও কলম ধরতে কৃপণতার পরিচয় দিচ্ছ, সেই তুমি কীভাবে আখেরাতের কঠিন কষ্টের দিনে আল্লাহর অনুগ্রহ এবং রাসূলের (সা.) শাফায়াত আশা কর? মনে রেখ, তোমার এই লজ্জা সেদিন তোমাকে মহা লজ্জায় ফেলবে, তোমার এই কৃপণতা ও কপটতা সেদিন তোমার জন্য কঠিন কষ্ট ও দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যে তুমি আজ নবীজি’র (সা.) পক্ষে কথা বলতে পিছপা হচ্ছো, সেই তোমাকে শাফায়াত তো দূরের কথা, উম্মত হিসেবে তোমার পরিচয় দিতে নবীজি (সা.) ও লজ্জাবোধ করবেন।”

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অপমানকে যে মনে করেনা নিজের অপমান, সে কিসের মুসলমান? কবি নজরুল তাদের পরিচয় দিতে গিয়ে লিখেছেন,
রাসূলের অপমানে যদি না কাঁদে তোর মন, মুসলমান না মুনাফিক তুই রাসূলের দুশমন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) হলেন সারা সৃষ্টি জগতের জন্য সূর্যস্বরূপ। অন্ধকার যতই সূর্যের বদনাম করুক, সূর্য ঠিকই আলোর পয়গাম ছড়াবে আর এই আলোতে দূরীভূত হবে সকল অন্ধকার। রাসূলুল্লাহ (সা.) হলেন এমন এক পবিত্র ও পরিস্কার আয়না বা দর্পন, যার চিন্তা চরিত্র ও চেহারা যেমন, সেখানে হবে ঠিক তারি তেমন প্রতিফলন। যে ঈমানের দৃষ্টি দিয়ে সেই দর্পনে দৃষ্টি দেবে, সে তারি প্রতিফলন সেখানে প্রত্যক্ষ করবে; যে নিজে শয়তান, সে তার শয়তানি রূপেরই প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করবে।
লেখক : গবেষক বাংলাদেশ প্রোকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাসূলপ্রেম
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ