Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিলেট জেলা বিএনপিতে প্রকাশ্যে বিশৃংখলা

চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে : আহবায়কের অপসারণ দাবী

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ৪:৫২ পিএম

নতুন করে বিশৃংখলতা দেখা দিয়েছে সিলেট জেলা বিএনপির কাঠামোতে। এর মধ্যে দিয়ে চেইন অব কমান্ড বলতে অবশিষ্ট কিছু থাকছে না স্থানীয় নেতৃত্বে। চাপা কোন্দল এখন প্রকাশ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন জেলা আহবায়ক কমিটির ৯ যুগ্ন আহবায়ক। সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অপসারন দাবী করেছেন জেলা আহবায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদারের। এতে করে স্থানীয় নেতৃত্ব এখন ভেঙ্গে পড়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন
আহবায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য এডভোকেট আশিক উদ্দিন আহমদ। এসময় তিনি বলেন, হয়, দেশ যখন এক মহাসংকটকাল অতিক্রম করছে। বেগম খালেদা জিয়া যখন স্বৈরশাসকের রোষানলে পড়ে দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতিত হচ্ছেন। অসুস্থ থাকা স্বত্বেও তাঁকে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করতে দেওয়া হচ্ছে না। তারেক রহমানকে আজ নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হচ্ছে। বি.এন.পির হাজার হাজার নেতা-কর্মী হাজার হাজার মামলা নিয়ে কঠোরতম সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন, ঠিক সেই সময় অনিচ্ছা স্বত্বেও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সিলেট জেলা বি.এন.পি’র পরস্পর বিরোধী এবং হঠকারী কিছু সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরেছেন তিনি। জেলা বি.এন.পি’র আহবায়ক কমিটি গঠনের প্রায় ১ বৎসরেরও উপর হলো, সাংগঠনিক কাজ কর্মে অত্যন্ত অদক্ষ একজন ব্যক্তিকে জেলা আহবায়ক হিসাবে মনোনীত করার পর দলের এই দুর্দিনের কথা চিন্তা করে আমরা তাকে সহযোগিতার মাধ্যমে একটি কার্যকর সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলার আশা করেছিলাম। কিন্তু তিনি আহবায়ক হওয়ার পর থেকেই নিরপেক্ষ ভূমিকার পরিবর্তে সাবেক জেলা সভাপতি আবুল কাহের শামীম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদের নির্দেশ অনুযায়ী চলতে থাকেন। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গুলি তার পরিবর্তে সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকে নিয়ে উনার মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করেন। সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের এহেন ভূমিকায় দীর্ঘদিন ধরে। জেলা বিএনপির কার্যক্রম ভাটা পড়ে আছে। এমনকি বিভিন্ন সময় জেলা আহবায়ক তার অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করেছেন। সাবেক সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে জেলা আহবায়ক এক পেশে ২১ সদস্যের বিভিন্ন উপজেলা কমিটি গঠিত করেন। তখন বিভিন্ন উপজেলা ও দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের প্রতিবাদের ফলে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল সিলেট এসে মরহুম এম.এ. হক এর বাসভবনে জেলা আহবায়ক কমিটি আমাদের সাথে আলোচনা করে উপজেলা কমিটিগুলোর কার্যক্রম স্থগিত করেন। এরপর তারেক রহমানের দৃষ্টি গোচরীভূত হলে তিনি প্রতিটি উপজেলায় ৬ জন করে আমাদের পক্ষের নতুন সদস্য দেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই মোতাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন আমাদের ৬ জন করে প্রতিটি উপজেলার ও পৌর কমিটির তালিকা দিতে বলেন। তারপর আমরা ৬জন করে তালিকা দেই। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই তালিকা দেওয়ার পরও চক্রান্তকারী সাবেক সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদক আবার আহবায়ক এবং কলিম উদ্দিন মিলনকে ব্যবহার করে এই ৬ জনের নামও তাদের পক্ষের লোকজনকে দিয়ে ঘোষণা দেয়। এমতাবস্থায় সিলেট জেলা বি.এন.পি আজ এক মহাসংকটের মুখোমুখি হয়েছে। এছাড়াও সাবেক জেলা সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদক একতরফা বিভিন্ন সমন্বয় কমিটি গঠন করে বিভিন্ন উপজেলায় বিতরণ করেছেন অথচ জেলা আহবায়ক কমিটির বেশীর ভাগ নেতৃবৃন্দই অবগত নন। তাছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায় তাদের গ্রুপের লোকদের দিয়ে ঘরে বসে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন যাতে করে তারা আগামী কাউন্সিলে নিজেদের গ্রুপকে জয়লাভ করাতে পারে। এমনকি, বিভিন্ন ইউনিটে কমিটি ঘোষণার পরেও হাত দিয়ে একজনকে কেটে আরেকজনকে সুবিধামত সদস্য বানিয়ে দিচ্ছে। সংগঠনের নিয়ম শৃংখলা তারা ধার ধারছে না। এমনকি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে বিষয়টি বার বার জানানো স্বত্বেও তারাও রহস্যজনক নীরবতা পালন করছেন।
এমতাবস্থায় যেখানে একটি কাউন্সিল হচ্ছে দলকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালিত করা। কিন্তু বর্তমানে সাবেক সভাপতি/ সাধারণ সম্পাদক গংরা চাচ্ছে পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করে, চক্রান্তের মাধ্যমে আবারও নেতৃত্বে আসার প্রয়াস চালাচ্ছে। এতে করে দলের সাংগঠনিক কাঠামো সম্পূর্ণ রূপে ভেঙ্গে পড়েছে। তাছাড়াও কেন্দ্রীয় বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃত্বের অত্যন্ত উদাসীনতা ও যথোপযুক্ত পদক্ষেপ না নেওয়ার ফলে এই সাংগঠনিক বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়েছে। সম্পূর্ণ সিলেট আজ নেতৃত্ব শূন্য। দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিতে প্রয়োজন দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দূরদর্শী ত্যাগী রাজনৈতিক নেতৃত্বে। বিভিন্ন সংগঠন থেকে আসা কিছু নেতৃত্ব আজ শীর্ষ পদে বসার ফলে এদের দলের প্রতি কতটুকু আন্তরিকতা নিয়ে নেতা-কর্মীদের কাছে প্রশ্ন উঠেছে।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, জেলা বি.এন.পি’র বর্তমান এই অচলাবস্থার যদি অবসান না হয় তবে সাংগঠনিক ভাবে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং আদৌ কোন কাউন্সিল অনুষ্ঠান সম্ভব হবে কি না সন্দেহ। শুধু তাই নয় ইতিমধ্যে অধিকাংশ উপজেলায় ইউনিয় পর্যন্ত পৌছে গেছে। যার ফলে আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। সুযোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির সমস্ত পথ অবরুদ্ধ করে চক্রান্তকারীরা আজ দলকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে আবেদন, কোন্দল সৃষ্টিকারীর মাধ্যমে এহেন পরিস্থিতি থেকে দলকে বাঁচানোর জন্য অবিলম্বে হস্তক্ষেপ কামনা করেন। জেলা বি.এন.পির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের শামীম গংরা যেনতেন প্রকারের একটি কাউন্সিল করে আবারও নেতৃত্বে আসার সর্বগ্রাসী তৎপরতায় জেলা আহবায়ককে সম্পূর্ণ পাকেটস্থ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার দোহাই দিয়ে যে কার্যক্রম চালাচ্ছেন যা দলকে মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সুতরাং অবিলম্বে সিলেট জেলা বি.এন.পিকে সংগঠনিক ভাবে শৃংখলা আনার লক্ষ্যে সুদৃষ্টি কামনা করছি। পাশাপাশি জেলা বি.এন.পির একপাশে এই কার্যক্রম অবিলম্বে স্থগিত করে একটি সুন্দর ও শক্তিশালী কাউন্সিল করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার আহবান জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বি.এন.পি), সিলেট জেলা শাখার আহবায়ক কমিটির সদস্য কাইয়ুম চৌধুরী, এডভোকেট আশিক উদ্দিন আহমদ, আব্দুল মান্নান, এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, আহমেদুর রহমান চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন লস্কর, ইশতিয়াক সিদ্দিকী, এডভোকেট হাসান আহমদ পাটোয়ারী রিপন, মাহবুবুল হক চৌধুরী।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ