Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইভারমেকটিন মৃদু সংক্রমণে কার্যকর

আইসিডিডিআরবি’র গবেষণা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআর,বি’র গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব রোগীর করোনার মৃদ্যু সংক্রমন রয়েছে তাদের সুস্থতায় আইভারমেকটিন কার্যকর। অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক ওষুধ আইভারমেকটিনের পাঁচ দিনের কোর্স এসব রোগীদের ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স এবং রক্তের বিভিন্ন বায়োমার্কারের উন্নতি দেখা গেছে। ঢাকার তিনটি হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৬৮ জন কোভিড-১৯ রোগীর ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়।

গতকাল আইসিডিডিআর,বি আয়োজিত একটি সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এই সেমিনারে ‘হাসপাতালে ভর্তি নিশ্চিতভাবে মৃদু কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আইভারমেকটিন অথবা আইভারমেকটিনের সাথে অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিন ব্যবহারের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা বিষয়ে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।

সেমিনারে জানানো হয়, আইসিডিডিআর,বি এই র‌্যান্ডোমাইজড, ডাবল-ব্লাইন্ড, প্লাসিবো-কন্ট্রোলড ট্রায়াল, যা একটি দৈবচয়ণ ভিত্তিক গবেষণা। যেখানে প্রয়োগকৃত ওষুধ বিষয়ে পরীক্ষক ও অংশগ্রহণকারীর কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা থাকে না। ওষুধের পরিবর্তে ওষুধ সদৃশ বস্তু ব্যবহার করা হয়। এরকম একটি গবেষণার আওতায় ঢাকার তিনটি হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৬৮ জন কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে ২২ জনকে শুধুমাত্র মুখে খাওয়ার আইভারমেকটিন (১২মিগ্রা দিনে একবার ৫ দিন), ২৩ জনকে এক ডোজের আইভারমেকটিনের (১২মিগ্রা) সাথে ডক্সিসাইক্লিন (২০০মিগ্রা ডক্সিসাইক্লিন প্রথম দিন এবং পরবর্তীতে ১০০মিগ্রা দিনে দু’বার ৪ দিন) এবং ২৩ জনকে প্লাসিবো (ওষুধ সদৃশ বস্তু) দিয়ে চিকিৎসার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা তুলনা করে দেখেছে। গবেষণাটি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অংশগ্রহনে সম্পন্ন হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ১৪ দিনের মাথায় ৫ দিন ধরে শুধুমাত্র আইভারমেকটিন পাওয়া রোগীদের ৭৭ শতাংশ রোগীর সার্স-কোভ-২ এর ক্লিয়ারেন্স হয়েছে। অর্থাৎ আরটি-পিসিআর টেস্টে তারা কোভিড-১৯ মুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছেন। অন্যদিকে আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন পাওয়া ৬১ শতাংশ এবং প্লাসিবো পাওয়া ৩৯ শতাংশ রোগীর ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স দেখা যায়। এছাড়াও দেখা যায়, ৩য় দিনে শুধু আইভারমেকটিন পাওয়া দলে ১৮ শতাংশ রোগীর ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স হয়েছে। অন্যদিকে আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন পাওয়া ৩ শতাংশ এবং প্লাসিবো দলে ৩ শতাংশ রোগীর ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স হতে দেখা যায়, এবং ৭ম দিনে এটি ছিল যথাক্রমে ৫০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ এবং ১৩ শতাংশ।

গবেষণায় দেখা গেছে, আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন এবং প্লাসিবো চিকিৎসার তুলনায় ৫ দিনের আইভারমেকটিন চিকিৎসায় রোগীর ক্লিনিক্যাল অবস্থার উন্নতি ছিল সম্ভাবনাময়। যেখানে রক্তের বিভিন্ন বায়োমার্কারের উন্নতির মাধ্যমে নির্দেশিত সংক্রমণের তীব্রতার মাত্রা কমার লক্ষণ দেখা যায়। শুরু থেকে ৭ দিনের মাথায় শুধুমাত্র ৫ দিন আইভারমেকটিন প্রাপ্ত দলে অন্য দু’টি দলের তুলনায় সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন (সিআরপি) ও ল্যাকটেইট ডিহাইড্রোজিনেস (এলডিএইচ) এবং ফেরিটিন লক্ষণীয় ভাবে কমতে দেখা যায়। মৃদ্যু কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক এবং এর ব্যবহার নিরাপদ বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এই গবেষণার ফলাফলের ওপর একটি প্রবন্ধ ২ ডিসেম্বরের ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইনফেকশাস ডিজিজেসে (আইজেআইডি) প্রকাশিত হয়েছে।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বিশেষ অতিথি হিসেবে অনলাইনের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন। আইসিডিডিআর,বি’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ও নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. তাহমিদ আহমেদ এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।

আইসিডিডিআর,বি-র এন্টারিক অ্যান্ড রেসপিরেটরি ডিজিজিস-এর সিনিয়র ফিজিশিয়ান সায়েন্টিস্ট ড. ওয়াসিফ আলী খান গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, যদিও কোনো সুদৃঢ় উপসংহারে পৌঁছানোর বিবেচনায় এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কম। পরবর্তীতে আইভারমেকটিন নিয়ে বড় ধরণের ট্রায়ালের জন্য এই গবেষণালব্ধ জ্ঞান নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাজমুল হাসান বলেন, আইভারমেকটিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সহায়তা করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এটি কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যয় সাশ্রয়ী সমাধান খুঁজে বের করার একটি প্রয়াস। এটি সত্যিকার অর্থেই কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরো শক্তি যোগাবে।

ড. তাহমিদ আহমেদ এই গবেষণায় সহায়তা করার জন্য বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিঃ, স্বাস্থ্য অধিদফতর, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানের সকলেই কোভিড-১৯ আক্রান্তদের রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, এই গবেষণায় ব্যবহৃত সব ওষুধ সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লি.।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ