বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
পাবনার চলনবিল অধ্যুষিত ভাঙ্গুড়া উপজেলার দাসবেলাই গ্রামে একটি খাস পুকুর দখলকে কেন্দ্র করে গত ১৪ অক্টোবর সংঘর্ষে প্রায় ৩০ জন আহত হয়। এদের মধ্যে গুরুতর আহত আবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় তোরাব আলী (৬৫) ও তার ছেলে মো. ফজলু (৩৫) দু’ব্যক্তি মারা যায়।
মৃত্যুর সংবাদ গ্রামে পৌঁছা মাত্রই আসামিদের বাড়িতে বাদী পক্ষের লোকজন হামলা করে বাড়িঘর ভাঙচুরসহ প্রায় কোটি টাকার সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। জীবন বাঁচাতে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায় আসামি পক্ষের লোকজন। নিরাপত্তাহীনতায় একটি পক্ষের ৫০টি পরিবার প্রায় দু’মাস ধরে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তারা বাড়ি ফিরতে না পারায় চলতি বোরো মৌসুমে অনাদি থাকছে প্রায় তিনশ বিঘা কৃষি জমি। তাদের দাবি গ্রামে পুলিশি নিরাপত্তায় নিরাপরাধ লোকজনদের কে গ্রামে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া হোক।
মামলা ও পুলিশ সূত্র জানায়, পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের দাস বেলাই গ্রামের একটি খাস পুকুর কে কেন্দ্র করে গ্রামবাসী কয়েক বছর আগে থেকেই দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ অপর পক্ষকে মসজিদে নামাজ পড়তে বাঁধাও দেয়। এরই মাঝে ওই গ্রামের আব্দুল মুমিনের স্ত্রী রত্মা খাতুন (২২) কুপ্রস্তাব দেয়ার অভিযোগ আনে অপর পক্ষের মৃত. আহসান আলীর ছেলে মো. মফিদুলের বিরুদ্ধে। এ পরিস্থিতিতে ঘটনার সত্য-মিথ্যা নিয়ে উভয়পক্ষ উত্তেজিত হয়ে পরে। এবং ১৪ অক্টোবর বিকেলে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ৩০ ব্যক্তি আহত হয়। ঘটনার রাতেই মোছা. রত্মা খাতুন ভাঙ্গুড়া থানায় বাদী হয়ে ১৮ জন কে আসামিকে একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে পুলিশ মামলাটি হত্যা মামলায় রুপান্তরিত করে। এবং ভাঙ্গুড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ৭ আসামিকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে আসামিরা জেল হাজতে রয়েছে।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে নিহত তোরাব আলীর গ্রুপের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিপক্ষের ৫০টি পরিবারে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। লুটে নেয় ধান, চাল, আসবাবপত্র, স্বর্ণালঙ্কার, গরু ছাগল, হাঁস মুরগিসহ প্রায় কোটি টাকার সম্পদ। পুড়িয়ে দেয় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সনদও। প্রাণ বাঁচাতে নারী শিশু ও বৃদ্ধরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। লুটপাটের ঘটনায় ২৮ অক্টোবর গাজী আব্দুর রহমান বাদী হয়ে ১৩ জনকে আসামি করে পাবনার জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আমলী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। উভয় মামলা রেকর্ডভূক্ত করে ভাঙ্গুড়া থানা।
এ প্রসঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুর রহমান বলেন, মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ আমি একজন বয়োবৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা হয়েও বাড়িতে ফিরতে পারছি না। আমার মতো ৫০টি পরিবারের নিরাপদ লোকজনও তাদের বাড়িতে ফিরতে পারছে না। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের বিচার হোক। কিন্তু নিরাপরাধ লোকজন কে বাড়ি ফিরতে না দেয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন। নিরাপরাধ লোকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না নিলে চলতি বোরো মৌসুমে আনাবাদি থাকবে তাদের প্রায় তিনশ বিঘা জমি। পাশ্ববর্তী তাড়াশ উপজেলায় আশ্রয় নেয়া সীমা খাতুন বলেন, তিন দিনের শিশু সন্তান কে নিয়ে পালিয়ে এসেছি। এই শীতের রাতে পরের বাড়িতে সীমাহীন কষ্ট করছি। একই কথা জানালেন, ইসমত আরা ও সোনেকা খাতুনও।
এ প্রসঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) মো. নাজমুল হক বলেন, উভয় মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। ইতিমধ্যেই ৭ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে আসামি না হলে তাদের বাড়ি ফিরতে কোন বাঁধা নেই। এ প্রসঙ্গে চাটমোহর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সজিব সাহরিন বলেন, এ বিষয়ে কেউ কোন অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।