পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাস শনাক্তে অবশেষে দেশে শুরু হয়েছে অ্যান্টিজেনভিত্তিক পরীক্ষা। প্রাথমিকভাবে দেশের ১০ জেলায় এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গতকাল এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এ সময় তিনি বলেন, দ্রæত সময়ে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্তের জন্যই এই অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত। আমরা এরই মধ্যে কোভিড চিকিৎসায় বিশ্বের প্রশংসা পেয়েছি। পরীক্ষা ও চিকিৎসার বিষয়েও অগ্রগতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে চালু হওয়া ১০ জেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে পুরো দেশে কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে।
জাহিদ মালেক বলেন, অ্যান্টিজেন পরীক্ষা অবশ্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী করা হবে। অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় কোনো ব্যক্তির যদি নেগেটিভ ফলাফল আসে, তাহলে তাকে আবার আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করতে হবে। সংক্রমণ এড়াতে সবাইকে মাস্ক পড়ার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসের টিকা সঠিক সময় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন আমাদের সামাজিক সুরক্ষা টিকা হিসেবে মাস্ক পরাকে গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন গাইবান্ধা, মুন্সিগঞ্জ, পঞ্চগড়, মাদারীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর, মেহেরপুর, সিলেট, জয়পুরহাট ও পটুয়াখালী জেলার সিভিল সার্জনরা। এই সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমসহ অন্যান্য কমকর্তারা।
স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, প্রাথমিকভাবে যেসব জেলায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষার সুযোগ নেই, সেসব জেলাতেই অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালু করা হলো। সে চিন্তা থেকেই প্রান্তিক জেলাগুলোতে শুরু করতে চেয়েছিলাম প্রথম থেকে। তিনি বলেন, অ্যান্টিজেন পরীক্ষা অনেক কাক্সিক্ষত ছিল, অবশেষে সেটা চালু হলো। ভবিষ্যতে এ কার্যক্রমের আরও সম্প্রসারণ করা হবে। তিনি ১০ জেলার সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে বলেন, এ কার্যক্রম নিয়ে যেন কোনও প্রশ্ন না ওঠে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পরীক্ষা সঠিকভাবে করতে হবে। অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে এ পরীক্ষা করতে হবে, যেন কোনও ভুল হবার আশঙ্কা না থাকে।
অনুষ্ঠানের স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, বড় হাসপাতাল ও কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালও অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু করা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা অনুষ্ঠানে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, অ্যান্টিজেন পরীক্ষার সেনসিটিভিটি ৮০ শতাংশ হওয়াতে এখানে ফলস নেগেটিভ হওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে আরটি-পিসিআরের চেয়ে বেশি। যে কারণে অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় কেউ পজিটিভ হলে তাকে পজিটিভ ধরে আইসোলেশন এবং চিকিৎসা দেয়া হবে। কিন্তু কেউ নেগেটিভ হলে তাকে পুনরায় আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে। মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে এ পরীক্ষার ফল পাওয়া যাবে। প্রাথমিকভাবে বিনামূল্যে এই পরীক্ষার ব্যবস্থা সরকার। যাদের অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ফল নেগেটিভ আসবে এবং তার শরীরে করোনার উপসর্গ রয়েছে, এমন সন্দেহজনক রোগীর আরআরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হবে।
প্রসঙ্গত, রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন বা আরটি-পিসিআর পদ্ধতি সংক্রমণ শনাক্তে বিশ্বে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশে নয় মাস আগে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর এই পদ্ধতিতেই পরীক্ষা হয়ে আসছে। তবে এই পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহের পর ফল পেতে বেশ সময় লেগে যায়, খরচও বেশি। তাছাড়া সব জায়গায় এ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি স্থাপন সম্ভব নয়। সেই কারণেই সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী অ্যান্টিজেন পরীক্ষার উদ্যোগ। এই পরীক্ষার জন্যও নাক বা মুখ গহ্বর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
যশোর ব্যুরো জানায়, বাংলাদেশে প্রথম শুরু হওয়া র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে যশোরে তিনজনেরই নেগেটিভ ফল এসেছে। শনিবার ওই তিনজনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। অ্যান্টিজেন টেস্টের জন্য যশোর থেকে একজন চিকিৎসক, একজন টেকনিশিয়ান ও একজন আইটি স্পেশালিস্ট ঢাকায় প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করোনা রোগী শনাক্ত ও চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে। দেশের ১০টি জেলার মধ্যে যশোরেও এই টেস্ট ব্যবস্থা থাকায় এই অঞ্চলের মানুষ উপকৃত হবে। যশোরে প্রতিদিন ৬০-৮০টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা সম্ভব। এ পরীক্ষা করা হবে কারও লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দেওয়ার ৫-৭ দিনের মধ্যে। অ্যান্টিজেন পরীক্ষা অনেকগুলো একসঙ্গে করা যাবে, পরীক্ষা করা যাবে দ্রুত, আরটি-পিসিআরের তুলনায় খরচ অনেক কম। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেসব জেলায় আরটি-পিসিআর নেই, সেসব জেলার পাশাপাশি যেসব জেলায় সংক্রমণের হার বেশি সেখানে অ্যান্টিজেন টেস্ট রাখা হচ্ছে।
মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়া মাদারীপুরে শুরু হয়েছে র্যাপিট অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। এই পরীক্ষার জন্য ৫শ’ কীট হাতে পেয়েছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ। আড়াইশ’ শয্যার নতুন ভবনে নিচতলায় প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করা হবে। নমুনা সংগ্রহের পরবর্তী ৩০ মিনিটের মধ্যেই এই রিপোর্ট পাবেন রোগীরা। এজন্য একজন মেডিকেল অফিসার, একজন ল্যাব টেকনিশিয়ান ও একজন পরিসংখ্যাবিদ বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। গতকাল প্রথমদিন ১৫ জন আসে করোনা পরীক্ষার জন্য। ১৫ রেজিস্ট্রেশন করলেও অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয় উপসর্গ থাকা ৪ জনের। অ্যান্টিজেন টেস্টে স্বল্প সময়ে ফলাফলে দেখা যায় ৩ জনের নেগেটিভ ও ১ জনের পজিটিভ এসেছে। নেগেটিভ আসা ৩ জনসহ ১৪ জনের নমুনা ঢাকায় প্রেরণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতা জানান, সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হবে। প্রতিদিন ৩০০টি স্ট্রিপের মাধ্যমে করোনাভাইরাস শনাক্তের অ্যান্টিজেন পরীক্ষাসম্পন্ন করা যাবে। মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে করোনার ফলাফল হাতে পাচ্ছে উপক‚লবাসী। গতকাল তিন রোগীর অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত প্যাথলোজিস্ট।
পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার আবদুল মতিন বলেন, অ্যান্টিজেন টেস্ট সম্পন্নের লক্ষ্যে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা প্রশিক্ষিত ডাক্তারের নিকট থেকে দায়িত্ব বুঝে নিয়েই পরীক্ষা শুরু করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।