Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মধুমতির ভাঙনে দিশেহারা ৫ গ্রামবাসী

চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন

সাইদুর রহমান, মাগুরা থেকে | প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

মধুমতি নদীর পানির স্রোত কমতে থাকলেও নতুন করে দেখা দিয়েছে ভাঙন। গত ১৫ দিনের ব্যাবধানে নদীর ব্যাপক ভাঙনে বসতভিটা বিলিন হয়ে একাধিক পরিবার অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। বিলিন হয়ে গেছে ফসলি জমি, বসতভিটা মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা। চরম হুমকির মুখে মাদরাসা, কবরস্থানসহ উপজেলা শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ। আতংকে দিন কাটাচ্ছে কয়েকশ’ পরিবার। নতুন করে ভাঙনের জন্য স্রোত আর ড্রেজার দ্বারা অবৈধ বালু উত্তলনকে দায়ী করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দ্বিতীয় দফায় মধুমতির ভাঙনের কবলে মাগুরা জেলার মহাম্মদপুরের দুইটি ইউনিয়নের ৫টি গ্রামের ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ এখন দিশেহারা।
গত ১০ বছরে ভাঙনের কবলে একাধিকবার বসতভিটা হারিয়ে সর্বশান্ত মানুষগুলি মাথা গোজার ঠাই নিয়ে চরম শংকিত। এবার স্রোতের তীব্রতা কমে নদীতে পানি নামতে শুরু করায় নদী কুলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ড্রেজার দিয়ে অবৈধ বালু উত্তলনের ফলে নদীর তলদেশে খাদ তৈরি হয়ে তীব্র ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অবিলম্বে এই বালু উত্তলন বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা। সেই সাথে স্থায়ী বাধ নির্মানের দাবি জানিয়েছেন ভাঙন কবলিত এলাকার অসহায় মানুষ।
গত দু’সপ্তাহ ধরে এমন ভাঙন চলছে মাগুরা মহাম্মদপুর উপজেলার দুটি ইউনিয়নের ৫টি গ্রামে। মধুমতি নদীর তীব্র ভাঙনের মুখে সব হারিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন শীরগ্রাম, কাশিপুর, ভোলানাথপুর, ধুলঝুড়ি, গোপালনগরের কয়েকশত পরিবারকে। নদীর তীব্র ভাঙনের কবলে সব হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন এ অঞ্চলের বাসিন্দারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিরগ্রাম কাশিপুর হতে এলেংখালি শেখ হাসিনা সেতু পর্যন্তু বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে তীব্র নদী ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র কয়দিনের ব্যাবধানে বিলিন হয়েছে মসজিদসহ নানা স্থাপনা। উপজেলা শহর রক্ষা বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। খসে পড়তে শুরু করেছে বøক। নদীর পানি কমতে থাকায় এই ভাঙন। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে তলদেশে খাদ সৃষ্টি হয়ে পাড় ভেঙে পড়ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
পারলা শীরগ্রাম নদীর খেয়া ঘাট, কাশিপুর কবরস্থান সংলগ্ন নদীর চরসহ এলেংখালি ব্রিজ পর্যন্ত বিস্তীর্ন এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এ ব্যাপারে প্রশাসনকে বারবার অবহিত করা হলেও তেমন তৎপরতা না থাকায় থেমে নেই অবৈধ বালু উত্তোলন।
কাশিপুরের বাসিন্দা বৃদ্ধা সায়রা বানু জানান, নিজের বাপ ভাইদের ভিটাসহ স্বামীর জমি সবই নদীতে তলিয়ে গেছে। বছরের পর বছর ধরে এভাবে চলে আসলেও তাদের দুঃখ দেখার কেউ নেই। খোঁজ নিতে আসেনি কোন জনপ্রতিনিধি বা সরকারের কেউ।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার জাহান সুজন জানান, নদীর কুল ঘেষে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এ বছর মধুমতির অপর ভাঙন কবলিত ঝামা এলাকায় কিছু জিওব্যাগ ফেলার কাজ শেষ হয়েছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
মহাম্মদপুর সদর উপজেলা সদ্য যোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রমানন্দ পাল জানান, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ উপজেলায় সরকারি খতিয়ানে তিনটি বালুমহল রয়েছে। যার মধ্যে বর্তমানে শুধুমাত্র ঝামা এলাকার একটি বালুমহল ছাড়া আর কোনোটির ইজারা দেয়া হয়নি। এ অবস্থায় যদি কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে থাকে, তবে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ