Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্ষতিপূরণসহ কৃষিজমি পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ

মেঘনায় নূর আলীর দুই প্রতিষ্ঠানের মাটি ভরাট অবৈধ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

মেঘনা নদী দখল করে ‘ সোনারগাঁ প্রপার্টি রিসোর্ট সিটি’ এবং ‘সোনারগাঁ ইকোনোমিক জোন’র মাটি ভরাটকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। প্রতিষ্ঠান দু’টির মালিক নূর আলী। পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)র রিট পিটিশনের পরিপ্রক্ষিতে শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন। বেলার পক্ষের অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ কবির জানান, মেঘনা নদীর অংশবিশেষে ১ হাজার ৮৬৮ বিঘা জমিতে ৬টি মৌজায় কথিত দু’টি প্রতিষ্ঠানের মাটি ভরাটকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবির।

আদালত নূর আলীর মালিকানাধীন এই দুটি প্রতিষ্ঠানসহ ওই এলাকায় আর যেসব প্রতিষ্ঠান কৃষি, নদীর জলাভূমি ও নিচুভূমি ভরাট করেছে তাদের মাটি সরিয়ে ৬ মাসের মধ্যে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ধার্য করে তা মাটি ভরাটকারীর কাছ থেকে আদায় করে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জমির হিসাবের তথ্য অনুযায়ী সেখানে প্রায় ১২০ একর কৃষি জমি রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার ৬টি মৌজায় (পিরোজপুর, জৈনপুর, ছয়হিস্যা, চরভবনাথপুর, বাটিবন্ধ এবং রতনপুর) অবস্থিত কৃষিজমি, নিচুভূমি, জলাভূমি, মেঘনা নদীর অংশবিশেষ। সোনারগাঁয়ের ৬টি মৌজায় কৃষিজমি, নিচুজমি ভরাট করে ইউনিক গ্রুপের ইউনিক প্রপার্টিজ ‘সোনারগাঁ রিসোর্ট সিটি’ নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে বেলার আবেদনের শুনানি শেষে গতকাল বুধবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম এবং বিচারপতি রাজীক আল জলিলের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

হাইকোর্টে বেলার পক্ষে ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল, অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আলী মুস্তফা খান ও সাঈদ আহমেদ কবীর। মাটি ভরাটকারী প্রতিষ্ঠান দুটির পক্ষে অ্যাডভোকেট মুরাদ রেজা, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম, আবু তালেব শুনানি করেন।

আদেশে আদালত বলেন, ইকোনমিক জোন করতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করার আগে নদী রক্ষা কমিশন থেকে অনাপত্তি এবং পরিবেশ অধিদফতর থেকে ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে।

প্রসঙ্গত: ইউনিক প্রপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর, জৈনপুর, ছয়হিস্যা, চরভবনাথপুর, বাটিবান্ধা এবং রতনপুর মৌজার কৃষিজমি, জলাভূমি, মেঘনা নদীর অংশ ভরাট করে সোনারগাঁ রিসোর্ট সিটি প্রকল্প নির্মাণ করছিল। এই নির্মাণ কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণার জন্য বেলা ২০১৪ সালে রিট আবেদন করে। এ আবেদনে ওই বছরের ২ মার্চ হাইকোর্ট প্রকল্প এলাকার মাটি বা বালি ভরাটের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ইতোমধ্যে ভরাটকৃত ভূমি হতে মাটি/বালি অপসারণের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি রুল জারি করেন।

এই আদেশের পর কিছু এলাকা থেকে মাটি ও বালি সরিয়ে জমি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু আদেশ পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করে একই কোম্পানি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। ওই এলাকায় সরকার মাটি ভরাটের অনুমতি দিয়েছে দাবি করে আগের আদেশ অকার্যকর ঘোষণা চেয়ে হাইকোর্টে ২০১৬ সালে আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লি.। এ আবেদনে হাইকোর্ট ওই বছরের ২৫ অক্টোবর মাটি ভরাট কার্যক্রম পরিচালনার আদেশ দেন।

এ আদেশের বিরুদ্ধে বেলা আপিল করে। আপিল বিভাগ ওই বছরের ৩ নভেম্বর এক আদেশে হাইকোর্টের পূর্বেরন আদেশ (২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবরের আদেশ) স্থগিত করেন। এরপরও ওই এলাকায় মাটি ভরাট কাজ অব্যাহত রাখা হলে বেলা ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালত অবমাননার মামলা করে। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক হাইকোর্টে হাজির হয়ে অঙ্গীকার করেন যে মাটি ভরাট প্রতিহত করবেন। পরে বন্ধ হয়ে যায় মাটি ভরাট। আবারও ইউনিক প্রপার্টিজ মাটি ভরাট কাজ শুরু করলে আবারও আদালত অবমাননার মামলা করা হয়। পরে সেখানে মাটি ভরাট অব্যাহত থাকলে বেলা ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই হাইকোর্টে আবেদন করে। হাইকোর্ট আবেদনটি নথিভুক্ত করার আদেশ দিলে তার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে বেলা। এ আবেদনে আপিল বিভাগ ২০১৮ সালের ১৪ আগস্ট এক আদেশে মাটি ভরাট কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।

এ আদেশ প্রতিপালন হয়েছে কি না- সে বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়। জেলা প্রশাসক ওই বছরের ৮ নভেম্বর আপিল বিভাগে হাজির হয়ে জানান, সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাটি ভরাট কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

তার বক্তব্যের সমর্থনে তিনি কিছু ছবি দেখান। এ প্রেক্ষাপটে ওই বছরের ১৫ নভেম্বর আপিল বিভাগ বিষয়টি হাইকোর্টে দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় হাইকোর্টে রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে গতকাল উপরোক্ত রায় দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাইকোর্ট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ