Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রশ্ন: মানুষের উত্থান-পতন কি সীরাতের অনুসরণের সাথেই জড়িত?

| প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

উত্তর : সীরাত অধ্যয়নে জানা যায় দুনিয়াতে মানুষের উত্থান-পতনের ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার অমোঘ নীতি কী। কুরআনে কারীমে এসেছে-

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আহবানে সাড়া দাও যখন তিনি তোমাদেরকে ওই পয়গামের প্রতি আহবান করেন, যা তোমাদের মাঝে জীবন সঞ্চার করবে।’’-সূরা আনফাল (৮) : ২৪

অতএব বলা যায়, মানুষের জন্য সীরাত অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে সুন্দর ও নিরাপদ জীবন। অপর দিকে রাসূলের নাফরমানির পরিণাম হল ধ্বংস।

সীরাতে নববী সকল দ্বিধা-সংশয়ের মহৌষধ : সত্যিকার জ্ঞান ও সকল কল্যাণের উৎস হল কুরআনে কারীম ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত ও সীরাত। যাকে কুরআন ‘হিকমত’ শব্দ দ্বারা উল্লেখ করেছে। এদু’টো ছাড়া যত জ্ঞান-বিজ্ঞান আর ধ্যান-ধারণা আছে তা একপর্যায়ে মানুষকে দ্বিধা-সংশয় আর অস্থিরতার শিকার করে। এ অবস্থায় সীরাতে নববীই সেই পবিত্র মেঘমালা যা হৃদয়ের বিরানভূমিকে সজীব করে তুলতে পারে। সীরাতে নববীই পারে সকল আত্মিক-ব্যাধি থেকে আরোগ্য দান করতে। সীরাতে নববীই পারে বিশ্ব-মানবতাকে মুক্তির পয়গাম শোনাতে।

হাফেজ ইবনুল ইমাদ হাম্বলী তার ইতিহাসগ্রন্থ ‘শাযারাতুয যাহাব’এ ইমামুদ্দীন ওয়াসেতীর জীবনীতে লেখেন-তিনি কালাম শাস্ত্রবিদ ফকীহদের মাঝে বেড়ে উঠেছিলেন। এ জন্য তার মাঝে ছিল যুক্তি ও দর্শনের মেযাজ। কিন্তু একসময় তিনি অনুভব করলেন, তার অন্তরে শান্তি নেই, স্বস্তি নেই এবং ইয়াকীনের নূর নেই। হৃদয় জুড়ে শুধু দ্বিধা-সংশয় আর অস্থিরতা। তিনি কালাম শাস্ত্রবিদদের পথ ছেড়ে সূফিয়ায়ে কেরামের দ্বারস্থ হলেন। কিন্তু সূফিদের রং-ঢং দেখে আরো বিগড়ে গেলেন। অবশেষ তিনি শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.-এর শরণাপন্ন হয়ে মনের অস্থিরতা খুলে বললেন।

ইবনে তাইমিয়া রহ. তাকে অসিয়ত করলেন-সব কিছু ছেড়ে সীরাতে নববীর অধ্যয়নে মনোযোগ দাও। সীরাতে নববীই সকল আত্মিক ব্যাধির উপশম। সীরাতে নববীই ঈমান ও ইয়াকীনের চিরন্তন উৎস।

শাইখ ইমামুদ্দীন ওয়াসেতী সীরাত অধ্যয়নে ডুবে গেলেন। হৃদয়জুড়ে যে শূন্যতা ও অস্থিরতা বিরাজ করছিলো তা দূর হয়ে গেল। তিনি অনুভব করলেন, হৃদয় থেকে দ্বিধা-সংশয় সরে গেল।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অতুলনীয় জীবন-পদ্ধতি ও শিক্ষা দেখতে দেখতেই মানবজাতির রূপ বদলে গিয়েছে। তেইশ বছরের সংক্ষিপ্ত সময়ে আরব ভূখন্ডের মূর্খ, অশিক্ষিত, উসৃঙ্খল, দ্বা›দ্বাবাজ এবং নারীদের জ্যান্ত কবর দানকারী মানুষেরা, একটি সুশৃঙ্খল, সুশিক্ষিত, চরিত্রবান, আদর্শবান, শান্তিপ্রিয় এবং মানুষের অধিকার রক্ষাকারী জাতিতে পরিণত হয়েছিল।

আজও প্রয়োজন সেই সীরাতে নববীর বাণীকে ব্যাপকভাবে প্রচার করা। যদি বর্তমান বিশ্ব বাস্তবিক পক্ষেই বস্তুগত উন্নয়নের সাথে সাথে চারিত্রিক ও আত্মিক উন্নতি চায় এবং মানুষকে একটি নিরাপদ ও সুন্দর জীবন উপহার দেওয়ার স্বপ্ন দেখে তাহলে অবশ্যই রাসূলের আদর্শকে চোখের মণি বানিয়ে চলতে হবে। কারণ, বর্তমান সমস্যার সমাধান একমাত্র সীরাতে নববীর মধ্যেই রয়েছে। সীরাত সর্বকালের মানুষের জন্য কল্যাণময় এক আদর্শ।

উত্তর দিচ্ছেন : এইচ. এম. মুশফিকুর রহমান



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সীরাতের-অনুসরণ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ