Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কক্সবাজারকে ভিক্ষুক মুক্ত করার পরিকল্পনা: প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে আত্মনির্ভরশীল হচ্ছেন ৩৪ জন

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:৪৬ পিএম

কক্সবাজারকে ভিক্ষুকমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ভিক্ষা ছেড়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্যই এমন প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সদর উপজেলা থেকে এই কার্যক্রম সূচনা হয়। সোমবার (২৯ নভেম্বর) সকালে সার্কিট হাউজস্থ অরুণোদয় স্কুল প্রাঙ্গণে সদরের ইসলামাবাদ ও ঝিলংজা ইউনিয়নের ৩৪ জন ভিক্ষুককে বিতরণ করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারস্বরূপ জীবিকার্জনের নানা উপকরণ।
বিতরণকৃত এসব উপকরণের মধ্যে রয়েছে রিকসা, সেলাই মেশিন, জাল তৈরির সরঞ্জাম, দোকান, খামারসহ ছাগল, হাস—মুরগী, ২ মাসের খাদ্য ও ভিটামিন। পর্যায়ক্রমে সকল উপজেলায় মোট ১ হাজার ৫০১ জন ভিক্ষুককে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে জীবিকার্জনের জন্য উপকরণ দেয়া হবে জানাগেছে ।
সোমবার সকালে কক্সবাজার জেলাকে ভিক্ষুকমুক্তকরণ কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশকে দারিদ্রমুক্ত করতে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু বিপদগামী সেনা সদস্যদের হাতে পরিবারসহ তিনি নির্মমভাবে খুন হন। এতে তাঁর অনেক স্বপ্ন আলোর মুখ দেখেনি।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করে যাচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দেশকে ভিক্ষুকমুক্ত করার ঘোষণা দেন। ওইসময় তিনি জেলা প্রশাসকদের এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মতো জেলা প্রশাসকসহ কক্সবাজারের সকল সরকারী কর্মকর্তাদের একদিনের বেতন সংগ্রহ করা হয় ৪৮ লাখ টাকা। এই টাকার সাথে যোগ করে প্রধানমন্ত্রী আরও ৫০ লাখ টাকা দেন। ৯৮ লাখ টাকার তহবিল গঠন করে কক্সবাজারকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে এই কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। তবে এই টাকা পর্যাপ্ত না। কিন্তু টাকার সমস্যাটা মূখ্য বিষয় হিসেবে থাকবে না। প্রয়োজন সকলের আন্তরিকতা ও সমন্বিত উদ্যোগ।
তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ অচিরেই কক্সবাজারের বাকি উপজেলায়ও প্রকৃত ভিক্ষুকদের আত্মনির্ভরশীল করতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারস্বরূপ জীবিকার্জনের উপকরণ দেয়া হবে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার সুইটি বলেন, সদর উপজেলার ইসলামাবাদের ১৭ জন ও ঝিলংজা ইউনিয়ন থেকে যাচাই বাছাই করে ১৭ উপকারভোগী বেছে নেয়া হয়েছে। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দেয়ার প্রতিশ্রম্নতিতে তাদের এসব উপকরণ দেয়া হয়েছে।
সদর উপজেলার পক্ষ থেকে তাদের নিয়মিত তদারকি করা হবে। দুই বছর তাদের অবস্থার পরিবর্তন না হলে আবারও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ইউছুপেরখিলের বাসিন্দা উপকারভোগী নুর জাহান বলেন, তার স্বামী নেই। বৃদ্ধ বয়সে ভিক্ষা করে জীবন নির্বাহ করে চলতাম। জেলা প্রশাসকের বদান্যতায় প্রধানমন্ত্রী উপহার পেয়ে ভিক্ষাবৃত্তির অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
ঝিলংজা ইউনিয়নের উপকারভোগী আনোয়ারা বেগম বলেন, তার ৩ জন ছেলে। ২ ছেলে বিয়ে করে আলাদাভাবে সংসার করেন। বড় ছেলে চায়ের দোকানে চাকুরী করে। তার সাথে থেকেই ভিক্ষা করেই চলেছে জীবন। কিন্তু তিনি এখন আর ভিক্ষা করবেন না। প্রধানমন্ত্রী যে দোকান উপহার দিয়েছেন সেখানে চায়ের দোকান করে বাকি জীবনটুকু কাটিয়ে দিবেন তিনি।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার সুইটির সভাপতিত্বে উপকরণ বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল ইসলাম চৌধুরী, জাসদ সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, ভাইস চেয়ারম্যান হামিদা তাহের, সদর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার শামশুল হুদা, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি নজিবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক উজ্জ্বল কর প্রমুখ।
এসময় স্থানীয় ইউনিয়ন সমুহের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ