পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মানুষের হাত কয়টি? সাধারণ উত্তর দুটি, ডান হাত ও বাম হাত। কিন্তু করোনাকালে যোগ হয়েছে অজুহাত! ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে মাস্ক পরা বিকল্প নেই বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিয়েছেন। দেশের বিশেষজ্ঞা চিকিৎসকরাও এ অনুরোধ জানিয়ে আসছে। করোনা থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক পড়তে মানুষকে নাগরিকদের বাধ্য করতে সরকার ‘নো মাস্ক না সার্ভিস’ চালু করেছে। মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতও মাঠে নেমেছে। কিন্তু তবুও মানুষের ভ্রুক্ষেপ নেই। মাস্ক না পরা নিয়ে মানুষের অজুহাতের শেষ নেই। গতকাল যাত্রবাড়ী মোড়ের পাশের বাজারে ঢোকার পরই মনে হলো করোনাভাইরাস বুঝি পুরোপুরি বিদায় নিয়েছে। কারও মুখে মাস্ক নেই। নেই সামাজিক দূরত্বের বালাই। একই দৃশ্য গুলিস্তান মোড়েও দেখা গেল। শাহবাগে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। সেখানেও দেখা গেল নেই। শাহবাগে দেশের দুটি বড় হাসপাতাল। সেখানে গিয়ে দেখা গেলো কারও মুখে মাস্ক নেই। হাসপাতালের মতো স্পর্শকাতর জায়গাতেও দেখা গেল কেউ থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে ঘুরছেন। কেউ মাস্ক হাতে নিয়ে কথা বলছেন মোবাইলে।
মুখে মাস্ক নেই কেন? জানতে চাইলে ফরিদ উদ্দিন বলেন, মাস্ক পরে মোবাইল ফোনে কথা বলা যায় না, অন্য পাশ থেকে শুনতে পায় না। হাসপাতালের দারোয়ান জানালেন, মাস্ক পরলে গরম লাগে, হাঁপিয়ে উঠি।
দেশজুড়ে যখন করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ থেকে বাঁচার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। একের পর এক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তখন মাস্ক পরার প্রতি মানুষের অনীহাও যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। অজুহাতেরও শেষ নেই।
শীতে করোনা-সঙ্কট এরই মধ্যে বেড়ে গেছে। করোনার কারণেই শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। মন্ত্রিপরিষদ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ নিয়ে সাত দফা ছুটি বাড়াল। প্রতিবার প্রজ্ঞাপনেই মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়। বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহারসহ শর্তসাপেক্ষে অফিস খোলা হয়, গণপরিবহনও চালু হয়। তারপরও ভ্রুক্ষেপ নেই কারও।
রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন ভ্রম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। কোথাও গাড়ি থামিয়ে কোথাও মার্কেটে মাস্ক পরা নিয়ে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ মাস্ক না পরার জন্য নানা অজুহাত দিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮ অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ৩১ মে নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, লকডাউন উঠে গেছে। এখন সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। সঠিকভাবে মাস্ক পরতে হবে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।
সরকারের এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর কেটে গেছে চার মাস। মাঝে সংক্রমণ কিছুটা কমে এলেও আবার তা বাড়তে শুরু করেছে। এখন প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যা বাড়ছে।
জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, কেউ যেন করোনাকে পাত্তাই দিচ্ছে না। মানুষের মন থেকে ভয় উঠে গেছে। অথচ সামনে শীতকাল। সচেতন না হলে ভয়ানক বিপদ অপেক্ষা করছে। আমরা এখনও জানি না ভ্যাকসিন কবে আসবে বা আদৌ আসবে কিনা। আর সেটা এলেও কতটুকু কার্যকর হবে কিংবা তা দিয়ে কতদিন করোনা প্রতিরোধ করা যাবে সেসবই অজানা। অথচ সবাই মাস্ক পরাসহ শারীরিক দূরত্ব মেনে বললে করোনাকে অনেকটা প্রতিরোধ করা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, কারও উপসর্গ থাকলে তাকেই শনাক্ত করে আমরা আইসোলেশনে নিচ্ছি। কিন্তু যার উপসর্গ নেই তাকে আক্রান্ত বলে ধরছি না। তাই কে আক্রান্ত আর কে আক্রান্ত নন, সেটা না ধরে প্রত্যেকের মাস্ক পরা উচিত এবং সঠিকভাবেই পরা উচিত।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলে মাস্ক পরাটাই যেন অপরাধ। কেউ মাস্ক পরছে না। মানুষকে জিজ্ঞাস করলে মাস্ক না পরা নিয়ে নানান অজুহাত দেখাচ্ছে। এটা কাম্য নয়।
রাজধানীতে অভিযান অব্যাহত
এদিকে জনগণের মাঝে মাস্ক ব্যবহার বাড়াতে গতকাল শনিবারও রাজধানির বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ঢাকা জেলা প্রশাসন। এসময় মাস্ক না পরার কারনে বেশ কয়েকজনকে জরিমানাও করা হয়। আর, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সচেতনতা বাড়াতে সরকারি বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার পরামর্শ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেনের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। প্রতিষেধক না আসা পর্যন্ত প্রতিরোধের ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। তাই সবার মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করাই এখন মুল কাজ। কিন্তু নানা উদ্যোগেও অনেকে নির্লিপ্ত ঘোরাঘুরি করছেন মাস্ক ছাড়া, কেউ ঘুরছেন থুতনিতে মাস্ক নিয়ে কেউবা পকেটে নিয়ে।
সূত্র জানায়, নগরবাসীকে সচেতন করতে শনিবারও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ঢাকা জেলা প্রশাসন। মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার এলাকায় মাস্কও বিতরণ করে ভ্রাম্যমান আদালত। এসময় মাস্ক না থাকায় অনেকেই ভ্রাম্যমান আদালত দেখে সটকে পড়েন। এছাড়া মাস্ক ছাড়া বের হওয়ায় এবং বাজারে আসায় বেশ কয়েকজনকে জরিমানা করা হয়।
শুধু জরিমানা করার উদ্দেশ্যেই নয়, সচেতনতা বাড়াতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। নগরবাসীকে আরো সচেতন করতে ভ্রাম্যমান আদালত চলবে বলেও জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।