Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফল আমদানি বেড়েছে

করোনাকালে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চাহিদা বেশি পাঁচ বছরে আপেল, কমলা, মাল্টা ও আঙ্গুর আমদানিতে ব্যয় ৮ হাজার কোটি টাকা

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মানুষের ফল খাওয়ার প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে। বিশেষ করে করোনামহামারির এ সময়ে অনেকে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশি করে ফল খাচ্ছেন। আর এই বাড়তি চাহিদা পূরণে ফলের আমদানি আগের তুলনায় ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। বলা যায় দেশে ফল আমদানি লাফিয়ে বাড়ছে। গত পাঁচ বছরে আপেল, কমলা, মাল্টা ও আঙ্গুর-এ চার ধরনের ফল আমদানিতে ব্যায় বেড়েছে দ্বিগুণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ফল আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৯৪৬ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে ফল আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় হয়েছে ২৯ কোটি ডলার বা প্রায় ২ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা।
গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ফল আমদানির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৫১ হাজার ২৫৫ টন। পাঁচ বছরের ব্যবধানে গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৮৯ টনে। চলতি অর্থবছরের পুরো হিসেব এখনো পাওয়া না গেলেও গত মার্চ থেকে জুন এই চার মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বিদেশি ফলের আমদানি বেড়েছে ১৮ শতাংশ। এরমধ্যে আপেল আমদানি ৪৪ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৮০ হাজার টন হয়েছে। মাল্টা আমদানি হয়েছে ৫২ হাজার টন। আর কমলা, আঙ্গুর, নাশপাতি, ডালিম আমদানি ৯২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৯০৭ টনে। তবে চট্টগ্রাম বন্দর, ঢাকা বিমানবন্দর, ভোমরা, সোনামসজিদ, হিলি স্থলবন্দর ছাড়াও বেশ কয়েকটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে ফল আসে। এলসির বাইরেও হুন্ডির মাধ্যমে প্রতিবেশি ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ ফল দেশে প্রবেশ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি আপেল আমদানি করে তার মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয়। এ ছাড়া পণ্যের বাজার পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ইনডেক্সমুন্ডির তথ্য অনুযায়ী, মাল্টা আমদানিতে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, সুস্বাস্থ্যের জন্য এক জন মানুষের প্রতিদিন গড়ে ১১৫ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে দেশে মানুষ দৈনিক ৭৬ গ্রাম ফল খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আগে এর পরিমাণ ছিল ৫৫ গ্রাম। মানুষের চাহিদার কারণে একদিকে দেশে ফল উৎপাদন যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে ফল আমদানি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, একটা সময় ছিল যখন মানুষ রোগী দেখতে যাওয়ার সময় ফল কিনত। এখন দৃশ্যপট অনেক পাল্টেছে। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার গুরুত্বপূর্ণ অংশজুড়ে রয়েছে ফল। দেশের মানুষের মাঝে পুষ্টি সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে ফলের চাহিদা বাড়ছে। মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তরাও এখন ফল কিনে খাচ্ছে। করোনা মহামারির এ সময়ে মানুষ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেশি বেশি ফল খাচ্ছেন।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, দেশের মানুষের ফল খাওয়ার প্রবণতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফল দেশের মোট চাহিদার মাত্র ৩০ ভাগ পূরণ করে। বাকিটা আমদানির মাধ্যমে পূরণ হয়। যেসব বিদেশি ফল আমদানি হচ্ছে, সেগুলো দেশে উৎপাদন হয় কম। তাই আমদানির বিকল্প নেই। সারা বছর বিদেশি ফলের চাহিদা রয়েছে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর বলছে আমদানির পাশাপাশি দেশে ফলের উৎপাদনও বেড়েছে। অধিদফতরের হিসাবে, পাঁচ বছরের ব্যবধানে দেশে ফলের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ২২ লাখ টন। আগামীতে এই উৎপাদন আরো বাড়বে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফরের বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মেহেদী মাসুদ গতকাল ইনকিলাব বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ফল খাওয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। বিশেষ করে করোনামহামারির সময়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনেকেই এখন বেশি বেশি ফল খাচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতির আগে একটা সময়ে আমদানি করা ফলের চেয়ে মানুষ তুলনামূলকভাবে দেশি ফলের প্রতি বেশি আগ্রহী হচ্ছিল। কারণ মানুষ এখন বুঝতে পারছে, আমাদের দেশি ফল আম, কাঁঠাল, নারকেল, পেয়ারা, পেঁপে, বড়ই, আমড়া, জাম, জাম্বুরা কোনো অংশেই কম নয়। থাই জাতের পেয়ারা, আপেলকুল ভোক্তাদের কাছে দিনদিন তার কদর বাড়াচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করে করোনা সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে আমদানি করা ফলের প্রতি ঝুঁকেছে মানুষ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৪৬টি দেশ থেকে আপেল, কমলা, মালটা, আঙ্গুর, নাশপাতি, ডালিম ওই ছয়টি ফল আমদানি হয়। এর মধ্যে ভারত, চীন, ব্রাজিল, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ভুটান, মিসর, দক্ষিণ আফ্রিকা অন্যতম। তবে ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি ফল অবৈধ পথে আসে। এছাড়া আপেল, কমলা, আঙ্গুর, নাশপাতি, মাল্টা, চেরি, আনার, বরই, আম ছাড়াও বেবি ম্যান্ডারিন, পাম, নেকটারিন, কিউইর, সুইট মিলান, এবাকাডোর মতো কিছু অপরিচিত ফল আমদানি করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ