Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমেরিকা-রাশিয়া-চীন-ভারতের নয়, মদিনার সনদেই এ দেশ চলতে হবে

ফটিকছড়িতে হেফাজতের আমীর সংবর্ধিত

সৈয়দ জাহেদুল্লাহ কুরাইশী, ফটিকছড়ি থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০২০, ৮:৫০ পিএম | আপডেট : ৮:৫১ পিএম, ২৫ নভেম্বর, ২০২০

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন; এদেশ মদিনার সনদে চলবে। প্রধানমন্ত্রীর এ দাবীর সাথে আমরা একমত এবং হেফাজতের দাবিও সেটি। এদেশ মদিনা সনদেই চলতে হবে; আমেরিকা-রাশিয়া-চীন কিংবা ভারতের সনদে চলতে পারবে না। মদিনার সনদে চললেই দেশ শান্তিময় জনপদে পরিণত হবে। আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না; ইসলামই শান্তির ধর্ম। এ সবকিছুই আছে মদিনার সনদে। যদি মদিনার সনদে চলতে হয় তবে ইসলাম আর শরীয়ত বিরোধী সকল কাজ বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সমস্ত মেহনতের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলাম এবং আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। আমাদের ধর্ম ইসলাম; আমরা জাতি হিসেবে মুসলমান, আমাদের নবীর নাম মুহাম্মাদ (সঃ), আমাদের সংবিধান হচ্ছে আল-কোরআন, আমাদের প্রভু আল্লাহ। এ আকীদায় যারা বিশ্বাসী; তারাই আস্তিক এবং মুসলমান। যারা এ আকীদা বিশ্বাস করে না; তারা নাস্তিক এবং বেইমান। এখানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি লড়াই নয়। ঈদের কাতারে এবং জুমার মসজিদে নামাজে একসাথে দাঁড়ায় আওয়ামীলীগ-বিএনপি। একজন আরেকজনের সাথে আত্মীয়তা করে। তারা এক এবং ভাই ভাই। আমাদের লড়াই আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিরুদ্ধে নয়; আস্তিক আর নাস্তিকের মধ্যে। আজ সারা বিশ্বেই লড়াই চলছে আস্তিক আর নাস্তিকের মধ্যেই। আস্তিক আর নাস্তিকের এ লড়াইতে দাঁতভাঙ্গা কিংবা মাঁড়িভাঙ্গা জবাব দেয়ার জন্য প্রয়োজনে কলিজার তাজা রক্তের সাগর বসাতে হবে।
তিনি বলেন, ফ্রান্সের ম্যাক্রো এ জামানার আবু জাহেল আর ফেরাউন। আমাদের কলিজার টুকরা নবী মুহাম্মদ (সঃ) কে ব্যঙ্গ করে এ ম্যাক্রো গালিগালাজ করে অপমান করেছে। আগেও অনেক অনেক ব্লগার আমাদের নবীর শানে বেয়াদবি; কটুক্তি, কটাক্ষ করেছে। এগুলো ছিল ব্যক্তিগত; কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশ্বের বুকে এ প্রথম নবীর শানে বেয়াদবি করেছে ফ্রান্সের কুখ্যাত এ ম্যাক্রো। আমি কোরআন; নবী ও ইসলামের দুশমন এ নাস্তিকদেরকে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে জানাতে চাই- যদি ২০০ কোটি মুসলমানদের প্রিয় নবীকে নিয়ে কোন ধরণের কটূক্তি-কটাক্ষ করে কথা বলেন; তৌহিদী জনতা আপনাদের জিব্বা কেটে ফেলবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরো বলেন, আমরা নবীকে ব্যঙ্গ করার প্রতিবাদে কিছুদিন আগে ফ্রান্সের দূতাবাস ঘেরাওয়ের জন্য হেফাজতের ব্যানারে ঢাকায় কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম। একদিনের মাথায় ৪/৫ লাখ মানুষের সমাগম দেখে আমার প্রতীয়মান হয়েছে- সমস্ত মুসলমানদের অন্তরে প্রিয় নবীর মহব্বত আছে। আমরা সেই নবীর উম্মত; যে নবী কবরে জিন্দা অবস্থায় শুয়ে আছেন। নবী মুহাম্মদ (সঃ) যেখানে শুয়ে আছেন; সে মাটি আল্লাহর আরশ থেকে তৈরি। আর সেই নবীর সাথে বেয়াদবি করলে মুসলমানরা কি আর ঘরে বসে থাকতে পারে?
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন। এখানে কোন দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা যাবে না। আমরাও কোন দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি না। আমরা নবী মুহাম্মদের এজেন্ডা বাস্তবায়নেই অঙ্গীকারবদ্ধ। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর হুকুম জারি করার এজেন্ডাই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। কোন পার্টির সঙ্গে হেফাজতের সম্পর্ক নেই। আমরা সরকার বিরোধী নই; দেশ বিরোধীও নই, আবার সরকারদলীয়ও নই। আমরা বাতিল আর নাস্তিক বিরোধী। এগুলো সকলকে বুঝতে হবে। সরকার তাদের কাজ করুক; আমরা নবী মুহাম্মদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করব। সরকার প্রধান যেহেতু মুসলমান; তারাও তো নবীর উম্মত, বরং সরকারকে বলব- নবীর এজেন্ডা বাস্তবায়নে সরকার আমাদের সহযোগিতা করতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা শাপলা চত্বরে রক্ত দিয়েছি সচিবালয় আর ক্ষমতা দখল করার জন্য নয়। নয় প্রধানমন্ত্রী হবার জন্য। নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর ইজ্জত-সম্মান রক্ষা করার জন্যই শাপলা চত্বর রক্ত দিয়েছি। পরিষ্কার ভাষায় বলছি- যেখানে আমাদের কলিজার টুকরা নবীর এক ফোঁটা ঘাম-এর অসম্মান হবে; সেখানে কোটি কোটি আশেকানে মোস্তফা রক্তের সাগর বন্যা বইবেই। সরকারকে বলব- আপনারা ১০০/২০০ বছর ক্ষমতায় থাকেন; আমাদের আপত্তি নেই কিন্তু ইসলামকে মাইনাস করে এ দেশ চলতে দেবো না; চলতে দেয়া যায় না।
তিনি আরো বলেন, কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। আমি মনে করি- প্রধানমন্ত্রীও কাদিয়ানীদের মুসলিম মনে করেন না। তবে ব্যক্তিগতভাবে মনে না করলে তো হবে না- রাষ্ট্রীয়ভাবেই তাদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। কারণ- হিন্দুরা কাফের হলেও মুসলিমদের নাম কিংবা পরিভাষা; মসজিদে ব্যবহার করে না, আজান কিংবা জুমাও ব্যবহার করেন না। অথচ এ কাদিয়ানীরা মুসলিম নাম; মসজিদ আর আজান ব্যবহার করছে। আমাদের পরিভাষা ব্যবহার করছে। যার কারণে সরলপ্রাণ মুসলমানরা ধোঁকা খাচ্ছে। পঞ্চগড়ে মুসলমানদের সাথে কাদিয়ানীরা বিবাহ-শাদীর সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছে। এ সম্পর্ক হবে ‘জেনা’। কাদিয়ানী মরলে জানাজা পড়া যাবে না; মুসলমানের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। যেহেতু তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম নয়; সেহেতু তারা ভিসা-পাসপোর্ট নিয়ে মুসলমান সেজে মক্কা-মদিনায় যাচ্ছে; অথচ মক্কা-মদিনায় কোন কাফের ঢুকার বিধান নেই। ফলে মক্কা-মদিনার পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে। এটার জন্য দায়ী বাংলাদেশ সরকার। যদি তাদের অমুসলিম ঘোষণা করা হয়- তবে এ ধরণের সমস্যা থেকে মুসলিম জাতি রক্ষা পাবে। এগুলো নিয়েই আমাদের রাজনীতি এবং মনের কথা। সরকারকেও আমাদের এ মনের কথা ভাব বুঝতে হবে।
হেফাজতের নব নির্বাচিত এ আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর সম্মানে গতকাল (আজ ২৫ নভেম্বর) বিকেলে নাজিরহাট বাজারের চাউলহাট মসজিদ গলিতে আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন।
নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা মুফতি হাবিবুর রহমান কাশেমীর সভাপতিত্বে এবং মাওলানা আবু মাখনুন মুহাম্মদ বাবুনগরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টা আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ আজাদী, মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী, মাওলানা জুনায়েদ বিন জালাল, মাওলানা হাবিবুল্লাহ নদভী, মুফতি হারুন আজিজি নদভী, হাফেজ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া, মাওলানা মাহমুদ শাহ, মুফতি শওকত বিন হানিফ, মুফতি খালেদ, ক্বারী আবু সাঈদ, ইউসুফ আনছারী, মুফতি আব্দুল হাকিম, মুফতি আইয়ুব প্রমূখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ