Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিবির-ছাত্রদলের নিয়ন্ত্রণে সিলেটে ফেঞ্চুগঞ্জ ছাত্রলীগ কমিটি !

কার্যক্রম স্থগিত করলো কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগ

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০২০, ৭:২১ পিএম

অনুপ্রবেশকারী তথা ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের নিয়ন্ত্রনে সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জ ছাত্রলীগের কমিটি। সেই সাথে বিবাহীতরাও এ কমিটিতে। এ কমিটির অধীনে উপজেলার স্থানীয় ইউনিয়নগুলোতে একই অবস্থা। ২০১৭ সাল থেকে চিত্র এমন হলেও নির্বাক ছিলেন সংশ্লিষ্টরা। বরং শিবির-ছাত্রদলের অনুপ্রবেশকারীদের তোয়াজ করেই জয় বাংলা শ্লোগান তুলতে হয়েছে ছাত্রলীগের স্থানীয় সাধারন নেতাকর্মীদের। তবে বোধদয় ঘটেছে দলের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের। গত সোমবার স্থগিত করা হয়েছে বির্তকিত এ কমিটি। ছাত্রলীগ কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ও সাধারন সম্পাদক লেখক ভট্রাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। এরই পাশাপাশি কমিটির বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রিয় সংসদ। মাত্র ৭ দিনের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনাও দিয়েছে এ কমিটিকে। এঘটনায় শিল্পনগরী বলে খ্যাত সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ছাত্রলীগ রাজনীতিতে চলছে তোলপাড়।
সম্প্রতি, ফেঞ্চুগঞ্জ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক এ এম ফারহান সাদিকের কিছু স্থিরচিত্র ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ২০০৮ সালের এ ছবিগুলো ছিল ছাত্রশিবিরের তৎকালীন স্থানীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাথে। কিন্তু ছবির ভাষায় অনুমেয় হয় ছাত্রশিবিরের সাথে ফারহানের অতীত সখ্যতা। তারপরও ফেঞ্চুগঞ্জ ছাত্রলীগে ফারহানের দাপুটে অবস্থানে কোনঠাসা ছিল মুলধারার মুর্জিব আদর্শের সৈনিকরা। কমিটি ছাত্রলীগের হলেও তৃণমুলে ছাত্রলীগের কমিটিতেও শক্তি অবস্থানে গড়ে তোলে শিবির-ছাত্রদলের চিন্থিত নেতাকর্মীরা। এনিয়ে অভিযোগ অনুযোগ কম হয়নি, কিন্তু কেউ কানে তুলেনি। এতে ছাত্রলীগের মোড়কে পাকাপোক্ত অবস্থানে পৌছে শিবির ছাত্রদলের দাপট। ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারী ফেঞ্জুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেয় সিলেট জেলা কমিটি। তৎকালীন জেলা সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ ও সেক্রেটারী এম রায়হান চৌধুরীর যৌথ স্বাক্ষরে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি অনুমোন পায়। কিন্তু ঘোষিত এ কমিটি ছাত্রলীগের হলেও শিবির ছাত্রদলের চিন্থিত রাজনীতিক কর্মীরা পূর্ণবাসিত হয় একমিটিতে। এরপরও প্রতিক্রিয়া শুরু হয় গোটা উপজেলা ছাত্রলীগ রাজনীতিতে। ঝাঁড়–-জুতা মিছিল করে পদবঞ্চিত ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। কিন্তু সেই ক্ষোভের ঢেউ ধোপে টিকেনি। এরপর থেকে এ কমিটির রাজত্বে পকেট বন্দি হয়ে পড়ে ফেঞ্চুগঞ্জ ছাত্রলীগ। পথ হারায় ছাত্রলীগ রাজনীতির আদর্শ। তবে নামেই কেবল ছিল ছাত্রলীগের ঝান্ডা। অবশেষে সোমবার (২৩ নভোম্বর) শিবির-ছাত্রদল নির্ভর ফেঞ্চুগঞ্জ ছাত্রলীগ কমিটিকে স্থগিতের মাধ্যমে দায় মুছানোর পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রিয় ছাত্রলীগ। এতে করে নতুন প্রাণে উজ্জীবিত হয়েছে স্থানীয় মুজিব আদর্শের প্রকৃতি সাধারন নেতাকর্মীরা। স্থানীয় সূত্র জানায়, স্থগিত কমিটির সভাপতি মো: জুনেদ আহমদ আওয়ামী পরিবারের সদস্য হলেও শিবির-ছাত্রদলের সাথে তার সখ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। তার এ আদর্শিক আপোষ চরিত্রকে মেনে নিতে পারেনি সাধারন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সভাপতি হ্ওয়ার পর থেকে দল গোছানোর পরিবর্তে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাছিলে ব্যাপক তৎপর হয়ে উঠেন তিনি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে বালু জুনেদ নামে পরিচিত লাভ করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ দেয়া হয় দুদক সহ আইনশৃংখলা বাহিনী বরাবরে। কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে বালু মহাল নিয়ন্ত্রনের নামে কোটি কোটি টাকা পকেটে নিলেও, দলের রাজনীতি করেন বির্তকিত। ছাত্রলীগের সভাপতি হল্ওে তিনি নিজেই একজন অছাত্র। তার অন্যতম সহযোগী ফেঞ্চুগঞ্জ ছাত্রলীগ কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল আহমদ ইমন বালুখেকো চক্রের চিন্থিত এক সদস্য। এক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জাবেদুর রহমান ড্যানিস ছিল তালামীযে ইসলামীয়ার ২নং মাইজগাঁও ইউনিয়ন সভাপতি। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার সহ চাঁদাবাজির ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে সহ সভাপতি মো: জালাল আহমদ, সহ-সভাপতি মো: আরিফ আহমদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক জাবেদুর রহমান ড্যানিসকে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে বহিস্কার করেছিল ছাত্রলীগ কেন্দ্রিয় সংসদ। তৎকালীন কেন্দ্রিয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারন সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন এ বহিস্কারাদেশ প্রদান করেছিলেন। স্থগিতাদেশ কমিটির যুগ্ন সাধারন সম্পাদক শেখ টিটু ছাত্রদল রাজনীতিতে ছিল সক্রিয়। ছাত্রদলের বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ গ্রহনের ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হচ্ছে ভাইরাল। এর মধ্যে কমিটির অপর এক সহ-সভাপতি মুহিত আহমদ শাহ, নাহিদ সুলতান পাশা এখন বিবাহিত। আরেক সহ সভাপতি মেহরাব হোসেন জুনেল এক সময় ছাত্রদল রাজনীতিতে ছিলেন সক্রিয়। ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলী কমিটি শিবির ছাত্রদলের নিয়ন্ত্রনে চলে য্ওায়ায়, তৃণমুলেও প্রভাব পড়েছে। ইউনিয়ন কমিটিগুলোতে এরই ধারাবাহিকতায় স্থান দেয়া হয়েছে শিবির ও ছাত্রদল কর্মীদের। ১নং ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগ কমিটির বর্তমান সভাপতি ইমরান খান রুমেল এক সময় ছাত্রদলের চিন্থিত কর্মী ছিলেন, এ কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক জীবন বিবাহিত, সাধারন সম্পাদক রূপক আহমদ এক সময় শিবির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন, এখন বিবাহিতও তিনি। ওই ইউনিয়নের একাধিক ওয়ার্ড কমিটি ছাত্রদল ও শিবিরের নিয়ন্ত্রণে ছাত্রলীগ কমিটি। ৩নং ঘিলাছড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ কমিটির বর্তমান সভাপতি সাইফুর রহমান পাভেল একসময় ছাত্রদলের দাপুটে কর্মী ছিল। তার ইউনিয়নের ওয়ার্ড কমিটিগুলো ছাত্রলীগের হলেও দখলে শিবির ও ছাত্রদলের।
এদিকে, কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ কমিটির উপর আরোপিত অভিযোগ তদন্তে গতকাল (বুধবার) সিলেটে এসে পৌছেছেন ২সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সদস্যরা। ২দিন সিলেটে তদন্তকার্যক্রম পরিচালনা শেষে শুক্রবার ঢাকায় ফিরবেন তারা। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত কমিটিকে ম্যানেজ করতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন স্থগিত কমিটির কয়েকজন নেতাকর্মী। বিভিন্নভাবে অর্থকড়িও সংগ্রহ করছেন ঢেলে দেয়ার জন্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ