দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর : সীরাত অধ্যয়নের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গির সাথে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। কারণ একজন মুসলমানের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুবারক সীরাত অধ্যয়ন শুধু জ্ঞান বা জ্ঞানবৃদ্ধির বিষয়ই নয়, এটা তার দ্বীনী প্রয়োজন। নিন্মোক্ত বিষয়গুলোর মাধ্যমে তা সহজেই বুঝে আসবে।
১. সীরাত অধ্যয়ন একটি উত্তম আমল
উলামায়ে কেরাম এই বিষয়ে একমত যে, সীরাতে নববী সর্বযুগীয় একটি মু‘জিযা। সীরাতে নববী আল্লাহ তা‘আলার হিকমত ও প্রজ্ঞার নিদর্শন এবং কুরআনে কারীমের জীবন্ত ব্যাখ্যা।
কুরআনে কারীমে ‘আসমা ও সীফাতে’র আয়াতগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আকায়েদ বা বিশ্বাস, আহকামের আয়াতগুলো তাঁর উত্তম জীবনযাপন, প্রভাব ও প্রতাপের আয়াতগুলো তাঁর মহত্ব ও মর্যাদা এবং রহমত ও শান্তির আয়াতগুলো তাঁর সৌন্দর্য প্রকাশ করছে। মোটকথা কুরআনের যে কোনো ধরনের আয়াত আপনি নেবেন তাতেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পয়গাম্বরী সীরাত ও তার নবুওতী মাকামের নমুনা দেখতে পাবেন। পবিত্র কুরআনের বাস্তব ও সার্থক রূপায়ণ ছিলো মহানবীর গোটা সীরাত বা জীবনচরিত। তার ইন্তিকালের পর উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়শা (রা.)কে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসূল (সা.)-এর চরিত্র কেমন ছিলো? তিনি একবাক্যে উত্তর দিয়েছিলেন,
প্রিয়নবীজির চরিত্র ছিলো আল-কুরআন।
[মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৫৩০২]
কুরআন যদি কেয়ামত পর্যন্ত তার সর্বময় উলূম ও ফুনূনের মাধ্যমে মানবজীবনে পূর্ণতার পথ প্রদর্শক হয়ে থাকে তাহলে সীরাতে নববীও তার জীবন্ত আদর্শের সকল শাখা-প্রশাখা
বিস্তার করে মানবতার শান্তি ও কামিয়াবির পথ দেখাবে।
২. সীরাত অধ্যয়ন মুমিনের ঈমান ও আনুগত্যের দাবী
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কারীমে মুসলমানদেরকে রাসূল ও রিসালাতের উপর বিশ্বাস স্থাপনের সাথে সাথে তার পূর্ণ অনুসরণ ও আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন।
তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি ও তাঁর বার্তাবাহক উম্মী নবীর প্রতি যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীতে ঈমান আনে এবং তোমরা তার অনুসরণ কর, যাতে তোমরা সঠিক পথ পাও। [সূরা আরাফ : ১৫৮]
৩. সীরাত অধ্যয়ন কুরআন বোঝার সহায়ক
আমরা জানি যে, কুরআন ইসলামী শরীয়তের মৌলিক ও প্রথম উৎস এবং মানুষের সুখ-শান্তি ও চিরন্তন সফলতার চাবিকাঠি। পৃথিবীর বহু মানুষ বিশেষত মুসলিমগণ কুরআনকে সহীহ অর্থে বোঝা, তার বিধানাবলী জানা এবং এই সৌভাগ্যগ্রন্থের রহস্য সম্পর্কে অবগত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে থাকে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, এটা সহজ হবে সীরাত অধ্যয়নের মাধ্যমে।
উলামায়ে কেরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কুরআন বোঝার জন্য ‘আসবাবে নুযূল’ এবং ‘নাসিখ-মানসূখ’-এর ইলম অত্যন্ত জরুরি। আর ‘আসবাবে নুযূল’ এবং ‘নাসিখ-মানসূখ’-এর ইলম সীরাতে নববীর সাথে সম্পৃক্ত। এছাড়া কুরআনের ব্যতিক্রমধর্মী বর্ণনাশৈলী ও শ্রেষ্ঠতম অলংকৃত ভাষার কারণে তা সুসংক্ষিপ্ত একটি কিতাব, যার তাফসীর বা ব্যাখ্যা হলো সীরাতে নবী। সুতরাং কুরআনে কারীমকে না সীরাত থেকে আলাদা করে বোঝা যায় আর না তার বিধানাবলী, আদেশ-নিষেধ এবং তত্ত্ব ও নির্দেশনা সম্পর্কে সঠিক সমাধানে পৌঁছা যায়।
৪. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন মুসলমানদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যক্তিত্ব কোনো সাধারণ ব্যক্তিত্ব নয়, বরং তা এক আদর্শ ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। যে সুন্দরতম ও আস্থাপূর্ণ আদর্শ ব্যক্তিজীবন থেকে সামাজিক জীবন সকল ক্ষেত্রে পরিব্যাপ্ত। কুরআনে মুসলমানদেরকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‘উসওয়ায়ে হাসানা’কে আদর্শ বানিয়ে চলার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তার কারণ এটাই।
আর উসওয়ায়ে হাসানা সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য সীরাতে নববী অধ্যয়ন করার চেয়ে উত্তম তরীকা আর কী হতে পারে।
আমরা যখন সীরাত অধ্যয়ন করব তখন জানতে পারব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন ছিলেন একজন সৎ ও বিশ্বস্ত মানুষ, তেমনি ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠতম দায়ী ও অভিভাবক। তিনি যেমন ছিলেন একজন ধৈর্যশীল ও শোকরগুজার বান্দা, তেমনি ছিলেন বিরাট শান ও মর্যাদার অধিকারী এক মহাপুরুষ। যেমন ছিলেন একজন উত্তম ও অকৃত্রিম বন্ধু, তেমনি ছিলেন একজন আদর্শ পিতা ও স্বামী। যেমন ছিলেন ইবাদতগুজার ও রাত জাগরণকারী, তেমনি ছিলেন মুজাহিদ ও সফল সেনাপতি। তিনি ছিলেন এক তুলনাহীন ন্যায়পরায়ণ বাদশা ও নেতা এবং ছিলেন রাজনৈতিক র্ময়দানের সুঅভিজ্ঞ ‘শাহসোয়ার’ এবং একজন সমাজসেবক ও জননেতা। সর্বোপরি তিনি ছিলেন গভীর চিন্তাশীল এক মানুষ।
উত্তর দিচ্ছেন : এইচ. এম. মুশফিকুর রহমান
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।