পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গত ১০ বছরে এক হাজার ৫৫৮টি বাস যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বহরে। এর মধ্যে ভারতে থেকে কেনা নিম্নমানের বাসগুলো এখন বিআরটিসি’র গলার কাঁটা। বর্তমানে বিআরটিসিতে দুই হাজার ১৫০টি বাস থাকলেও সেগুলোর সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারছেনা সংস্থাটি। এখনও পাঁচশ’র বেশি বাস অচল পড়ে আছে। বিআরটিসি’র ডিপোগুলো এখন ভারতীয় বাসের ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একদিকে ভারত থেকে নিম্নমানের বাস কেনা এবং অন্যদিকে, দুর্নীতি-অনিয়ম এই দুইয়ে মিলে বিআরটিসি’র বেহাল দশা বহুদিন ধরেই। বিআরটিসি’র অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। এর আগে ভারত থেকে নিম্নমানের বাস কেনা নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন আপত্তিও জানিয়েছিল। কিন্তু তারপরেও কয়েক দফায় বাস ও ট্রাক কেনা হয় ভারত থেকেই। তবে আশার কথা হলো, এবার বিআরটিসির যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা বাড়াতে কোরিয়া থেকে দুশ’ বাস কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্টদের দাবি, কোরিয়া থেকে শুধু উন্নত মানের বাস কিনলেই হবে না, সেগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষন করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিআরটিসির বাস সার্ভিসকে পুনরুজ্জীবিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে নর্ডিক ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের (এনডিএফ) ঋণে ২০১০ সালে চীন থেকে কেনা হয় ২৭৫টি একতলা সিএনজিচালিত বাস। ২০১১ সালে কোরিয়ার ঋণে দেশটি থেকে কেনা হয় ১৫৫টি নন-এসি ও ১০০টি এসি একতলা সিএনজিচালিত বাস। আর ভারতের ঋণে ২০১২ সালে ২৯০টি দ্বিতল এবং ২০১৩ সালে ৫০টি আর্টিকুলেটেড ও ৮৮টি এসি বাস যুক্ত হয় বিআরটিসির বহরে। এই তিন দেশের বাসের মধ্যে ভারত থেকে আনা বাসগুলো সবচেয়ে নিম্নমানের। কয়েক দিন চলতে না চলতেই সেগুলো অচল হয়ে পড়ে। বিকল হওয়া বাসগুলো মেরামতের নামে খরচ করা হয় অতিরিক্ত টাকা। এক পর্যায়ে সেগুলো আর সচল করতে না পারায় সেগুলো ফেলে রাখা হয় ডিপোতে। এভাবে ডিপোতে শত শত বাস জমতে থাকে। এক পর্যায়ে ডিপো হয়ে যায় ভারতীয় বাসের ডাম্পিং স্টেশনে।
এতোকিছুর পরেও গত বছর ভারত থেকে আরও ৬০০ বাস কেনে বিআরটিসি। এর মধ্যে রয়েছে ৩০০টি দ্বিতল বাস, ১০০টি নন-এসি বাস, ১০০ সিটি বাস (এসি) ও ১০০ আন্তঃনগর বাস (এসি)। এই বাসগুলো দিয়ে গত বছর ঢাকায় বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে ধামমন্ডি ও উত্তরায় চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করে বিআরটিসি। শেষ পর্যন্ত বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বন্ধ করে দেয়া হয় চক্রাকার বাসের সবক’টি রুট। সূত্র জানায়, ঢাকায় কোম্পানিভিত্তিক বাস ব্যবস্থা বা বাস রুট র্যাশনালাইজেশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের শুরুতে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করে দিয়েছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকেই চালু হয় চক্রাকার বাসগুলো। কিন্তু বিআরটিসির দুর্নীতি আর অবহেলার কারণে সরকারের সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
সূত্র জানায়, বিআরটিসির এক হাজার ৫৫৮টি বাসের মধ্যে ২২টি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপহার দেওয়া হয়। অবশিষ্ট বাসের মধ্যে বেশকিছু বাস কনডেম (ব্যবহার অযোগ্য ঘোষণা) করা হয়। এতে বাসের সংখ্যা দাঁড়ায় এক হাজার ৮৭৩। এর মধ্যে ৩৮৪টি রুটে চলছে এক হাজার ৩৫৭টি বাস এবং ২২৪টি বাস বিকল হয়ে পড়ে আছে। তবে সেগুলো মেরামত করে রাস্তায় নামানো সম্ভব। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৩৪টি ও সচিবালয়ের স্টাফ বাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ১৪৪টি।
জানা গেছে, নিয়মিত নতুন বাস কেনা হলেও এগুলোর সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। ফলে ২০১০ সালে চীন থেকে আনা বাসগুলোর অধিকাংশই এখনও বিকল। মাত্র ৬০টি চলাচল করলেও নিয়মিতই ওয়ার্কশপে যাতায়াত করে। ভারত ও কোরিয়ার বেশকিছু বাসও অচল হয়ে আছে। বাসগুলো এখন গাজীপুর, কল্যাণপুর, মিরপুর ও মতিঝিলে বিআরটিসির বাস ডিপোতে ফেলে রাখা হয়েছে। এছাড়া বিগত সরকারের সময় কেনা ভলবো বাসগুলো ছিল খুবই ব্যয়বহুল। কিন্তু ৫০টির মধ্যে ৪৯টিই বিকল পড়ে আছে। বাকিগুলোর মধ্যে শুধু এসি বাসগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালাচ্ছে বিআরটিসি। আর নন-এসি, দ্বিতল ও আর্টিকুলেটেড (দুই বগির জোড়া লাগানো) কয়েকটি বাস ইজারায় চলছে। দৈনিক জমার ভিত্তিতে এসব বাস ইজারা দেয় সংস্থাটি। ফলে প্রতি বছর বড় অঙ্কের লোকসান গুনছে বিআরটিসি। এমনকি ঋণের কিস্তিও (ডিএসএল) অনেক সময় পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে সরকারি এই সংস্থা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিন বছরে বিআরটিসি বিভিন্ন ধরনের ৯৫৮টি বাস ও ট্রাক কেনে। নিম্নমানের হওয়ায় সেই সব বাস-ট্রাক খুবই দ্রুত বিকল হয়ে যায়। এরপর ভারতের ঋণের টাকায় নিম্নমানের আরও ৬শ বাস কেনা হয়। এতে করে বিআরটিসির বিকল বাসের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে। ওই কর্মকর্তা বলেন, জেনে শুনে ঋণের টাকায় নিম্নমানের বাস-ট্রাক কেনা হয়েছে। সেগুলো এখন বিআরটিসির গলার কাঁটা হয়ে গেছে। বাসগুলো কেনার আগেও বলা হয়েছিল, এক সময় সেগুলো গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে।
এ প্রসঙ্গে বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. এহসানে এলাহী বলেন, চালক ও অন্যান্য জনবল সংকটে বেশকিছু বাস ইজারা দেওয়া আছে। তবে আন্তঃজেলা রুটের বেশিরভাগ বাস নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানো হচ্ছে। এছাড়া কিছু বাস মেরামত করে পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত বাসের সংখ্যা বাড়াতে ড্রাইভার ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশিক্ষণশেষে আরও বাস নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানো যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।