পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দোকানের কর্মচারী থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে রাজধানীর বাড্ডা থানার দায়েরকৃত তিন মামলায় ১৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল রোববার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দু’জন বিচারক পৃথক আদেশে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর মধ্যে অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের দুই মামলায় অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবুবকর ছিদ্দিকের আদালত মনিরের সাত দিন করে ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে দু’টি মামলার বিষয়বস্তু একই হওয়ায় তাকে সাত দিনই রিমান্ডে থাকতে হবে বলেও আদেশ দেন আদালত। অপরদিকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ-উর-রহমান মাদক আইনের মামলায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে এ রিমান্ড আলাদাভাবে কার্যকর হবে। রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষে আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
একটি সংস্থার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জালিয়াতি, প্রতারণা এবং চোরাচালানের মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যান গোল্ডেন মনির। ২০০১ সালে তার মূল উত্থান হলেও এর পরেও আর পেছন ফিরে থাকাতে হয়নি তাকে। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথেই নিজের নেটওয়ার্ক পরিবর্তন করে সখ্যতা গড়ে তুলতের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে। ২০০১ সাথের পর যতগুলো সরকার পরিবর্তন হয়েছে তার হাত ছিল সব সময় শক্তিশালী। তবে গত ২০ বছরে গোল্ডেন মনির কোন কোন রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের আমলাদের সাথে সর্ম্পক রেখে অবৈধ সুবিধা নিয়েছেন ত্ াখতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সাথে মনিরের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধাভোগি ব্যক্তিদের তালিকা তৈরির কাজও করছেন গোয়েন্দারা।
তিনি আরো বলেন, খুব শীঘ্রই ওই তালিকা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হবে। তার পর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে বলে ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
অন্যদিকে র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, গোল্ডেন মনির ছিলেন একজন সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ। নব্বইয়ের দশকে সেলসম্যান থেকে লাগেজ ব্যবসা এবং স্বর্ণ চোরাচালানি ও ভূমি দখলে তিনি রাজনৈতিক নেতা ও সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছ থেকে সুবিধা ভোগ করেছেন। নিজের নামে-বেনামে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় এক হাজার ৫০ কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। অবৈধভাবে মনির হোসেন থেকে গোল্ডেন মনির হওয়ায় পেছনে কারা কারা জড়িত তাদের শনাক্তে কাজ করছে র্যাব। গত শনিবার গ্রেফতারের পর র্যাব-৩ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া গোল্ডেন মনিরকে বাড্ডা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে র্যাব।
বাড্ডা থানার ওসি পারভেজ ইসলাম জানান, গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ও অস্ত্র আইনে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে র্যাব। শনিবার সকালে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার নিজ বাসা থেকে গোল্ডেন মনিরকে আটক করা হয়। এ সময় তার বাসা থেকে ৬০০ ভরি সোনার গহনা, বিদেশি পিস্তল-গুলি, মদ, ১০ দেশের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ও নগদ এক কোটি নয় লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এছাড়া তার বাড়ি থেকে অনুমোদনহীন দু’টি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়। যার প্রতিটির বাজারমূল্য প্রায় তিন কোটি টাকা। এছাড়া তার ‹অটো কার সিলেকশন› নামে গাড়ির শো-রুম থেকে আরও তিনটি অনুমোদনহীন বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, গোল্ডেন মনিরের বাবা কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা সিরাজ মিয়া ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি ঢাকার নিউ মার্কেট ও গাওছিয়া মার্কেট এলাকায় ফেরি করে গামছা বিক্রি করতেন। মনির দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। বাড্ডায় নানার বাসায় থেকে সে বড় হয়েছে। বাবার সূত্রে মনিরেরও ব্যবসার শুরু একইভাবে। পরে তিনি মৌলভীবাজার থেকে কাপড় এনে বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করা শুরু করেন। এভাবে সে ব্যবসার প্রসার ঘটিয়ে ব্যাংকক-সিঙ্গাপুরে আসার যাওয়ার মাধ্যমে ল্যাগেজ ব্যবসা শুরু করে। এই ব্যবসার আড়ালে সে স্বর্ণ চোরাচালান ব্যবসায় জড়িয়ে যায়।
গোল্ডেন মনিরের উত্থানে জড়িতদের শনাক্তে কাজ চলছে- র্যাব
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, নব্বইয়ের দশকে একজন সেলসম্যান থেকে তিনি কুকারিজ ব্যবসা শুরু করেন। এরপর লাগেজ পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। সেখানে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কসমেটিকস পণ্য আমদানি করতেন। তারপর মনির স্বর্ণ চোরাচালানে যুক্ত হন। মনির রাজউকের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। জাল স্ট্যাম্প, জাল সিল তৈরি করে ভুয়া দলিল বানিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে প্লট ও জমি দখল করেছেন। এ ছাড়া, তার বাসা থেকে দুটি এবং অটো কার সিলেকশন থেকে তিনটি অনুমোদনহীন বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়। এসব বিষয়ে আমরা সরকারের চারটি সংস্থাকে তথ্য সংগ্রহের জন্য অনুরোধ জানাবো। অবৈধভাবে মনির হোসেন থেকে গোল্ডেন মনির হওয়ায় পেছনে কারা কারা জড়িত তাদের শনাক্তে কাজ করছে র্যাব।
তিনি আরও বলেন, তার বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় র্যাব বাদী হয়ে তিনটি মামলা দায়ের করেছে। তার বাসায় বিদেশি পিস্তল উদ্ধারের বিষয়ে অস্ত্র আইনে একটি, বিদেশি মদ উদ্ধারের ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি এবং ছয় শ ভরি স্বর্ণ, ডলার ও টাকা উদ্ধারের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুদক ও রাজউক আগেই দুটি মামলা করেছিল। মনিরের বাসায় অভিযানে গিয়ে আমরা জানতে পেরেছি রাজউকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তিনি ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকায় দুই শতাধিক প্লট ও জমি দখল করেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ৩০টি প্লট দখলে থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
ভূমি জালিয়াতি সম্পর্কে র্যাব জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন প্রভাবশালী মন্ত্রী, গণপূর্ত ও রাজউকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক স্থাপন করে তিনি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভূমি জালিয়াতি শুরু করেন। রাজধানীর বাড্ডা এলাকার রাজউকের ডিআইটি প্রজেক্টে প্রতারণার মাধ্যমে অনেক প্লট নিজস্ব করে নেন। এভাবে রাজউক থেকে প্লট সংক্রান্ত সরকারি নথিপত্র চুরি করে এবং অবৈধভাবে রাজউকের বিভিন্ন কর্মকর্তার দাফতরিক সিল ব্যবহার করে রাজউক পূর্বাচল, বাড্ডা, নিকুঞ্জ, উত্তরা এবং কেরানীগঞ্জে বিপুল সংখ্যক প্লট করেন। অভিযোগ আছে তিনি বর্তমানে নামে-বেনামে দুই শতাধিক প্লটের অধিকারী। ২০১৯ সালে রাজউকের ৭০টি নথি নিজ কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে আইনবহির্ভূতভাবে হেফাজতে রাখায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়া দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করায় দুদক তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। সেটাও চলমান রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।