Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাথা গোঁজার স্থায়ী ঠাঁই মেলেনি

কুড়িগ্রামে নদী ভাঙনের শিকার ৮ হাজার পরিবার

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

‘ঘরদয়োরতো সউগ নদীত পড়চে। ভিটাও নদীত। রাস্তার উপরা পড়ি আছি। টাকা পইসা পায়নি। কাম কাজও পায়নি। সাহায্যও পায়নি। এলা বাড়ি করি কেমন করি।’ বন্যার সময় ধরলার ভাঙনে শিকার মহিলা বেগম জানালেন তার অসহায়ত্বের কথা। মহিলা বেগমের মতো সারডোবের শতাধিক পরিবার পড়েছে দুর্ভোগে। দফায় দফায় নদী ভাঙনে তাদের ভিটের শেষ চিহ্নটুকু মুছে গেছে। কোথায় মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। তাই পড়ে আছেন রাস্তার ধারে-বাঁধে-খোলা জায়গায়।
কুড়িগ্রামে এ বছর নদী ভাঙনের শিকার ৮ হাজার পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলেনি এখনো। বসতভিটা না থাকায় মালামাল নিয়ে এসব পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধ, রাস্তা ও অন্যের জমিতে। ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় অনেকেই টিনের চালা, পলিথিন ও তাঁবু খাটিয়ে বাস করছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রামে দীর্ঘমেয়াদী বন্যা ও নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ভিটেমাটি হারানো ৬টি উপজেলার ৬ হাজার পরিবারের একটি তালিকা প্রথম দফায় পাঠানো হয়েছে। পরে আরো একটি তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, নদী ভাঙনের শিকার আরো দুই পরিবারের তালিকা খুব দ্রæত পাওয়া যাবে। সরেজমিন দেখা যায়, ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার ও সোনাভরির ভাঙনে বিলীন অনেকের ঘরবাড়ি ও বসতভিটা। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরে বাস করছেন বাঁধ ও রাস্তার ঝুপরিঘরে। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারেনি ভাঙন কবলিত হত দরিদ্র পরিবারগুলো। বর্তমানে তাদের দিন কাটছে চরম দুর্ভোগে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোব গ্রামের জহির উদ্দিন জানান, নদী ভাঙনের তীব্রতার মুখে বাড়ির অনেক মালামাল ভেসে গেছে। তিনটি ঘরের চাল ভেঙে নৌকায় করে এনেছেন ফাঁকা জায়গায়। সেখানে মাচা করে রেখেছেন টিনগুলো নৌকা ভাঙা ও বাড়ি স্থানান্তরের খরচ মেটাতে শতকরা ২০ টাকা সুদে দাদন নিয়েছেন ২০ হাজার টাকা। ফসল নষ্ট হওয়ায় কাজ নেই বন্যা কবলিত চরাঞ্চলে। তাই খাদ্য ও অর্থ সঙ্কটে নাকাল ভিটেহারা পরিবারগুলো। তাই জরুরি ভিত্তিতে ঢেউটিন ও অর্থ সহায়তা দিয়ে পুণর্বাসনের দাবি দুর্ভোগে পড়া হাজারো পরিবারের।
সারডোব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন আবেদুল, রাজ্জাক, নবীর ও নজীরসহ ৬০টি পরিবার। তারা জানান, সারডোব এখন বিধস্ত জনপদ। আবাদের চিহ্নমাত্র নেই। কাজ নেই। ঘরে ঘরে অভাব। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তা ছাড়া কোনো উপায় নেই। সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়নের জগমোহনের চর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রিত আলী হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বাবা, দুইটা ঘর ভাসি গেইচে। একটা কোনোমতে আটকেয়া ছাপড়া তুলি আছি। খাওয়া দাওয়ার খুব কষ্ট হইচে। ভিটাতো নেই, এলা যামো কোটে। এই চরটিও এবার বিলীন হয়েছে ধরলার তীব্র ভাঙনে। এই গ্রামের দুলালী বেগম, জসিম উদ্দিন, করিমুদ্দিন, জুয়ান মিয়া ভিটে হারিয়ে বাঁধ ও রাস্তায় আশ্রয় নিয়ে আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার জগমোহনের চর, পাঁছগাছি, যাত্রাপুর, নাগেশ্বরীর নুনখাওয়া, রায়গঞ্জ, ভুরুঙ্গামারীর চর ভ‚রুঙ্গামারী, উলিপুরের বজরা, থেতরাই, চিলমারীর নয়ারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বন্যার সময় তারা সরকারি বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা পেলেও বর্তমানে তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই।
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুর্ণবাসণ কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সরকার জানান, নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর জন্য নগদ অর্থ ও ঢেউটিন চাওয়া হয়েছে। এখনও পাওয়া যায়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক অনুদানের সহায়তা ও গৃহহীনদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করার চলমান কর্মসূচিতে বরাদ্দ পাবার কথা রয়েছে। এসব সহায়তা পেলে সরকারি নিয়মে তা বিতরণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ