Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এরদোগানের বিলম্বিত বোধোদয়

প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জালাল উদ্দিন ওমর
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান এখন আবার রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। সিরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সাথে অতি বন্ধুত্ব এবং রাশিয়ার সাথে সম্পর্কহানির পর এরগোদান এখন আবার রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চাইছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের সাথে সম্পর্কের বন্ধন শিথিল করতে চাইছেন। আসলে এটা হচ্ছে এমন একটা বাস্তবতা, যাকে এড়িয়ে চলার কোন সুয়োগ এরদোগানের নেই। মূলত এর মাধ্যমে এরদোগান তার অতীত ভুল থেকে সরে আসতে চাইছেন, তা ছাড়া ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এরদোগানের বিকল্প কোনো পথও নেই। যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ^ যে এরদোগানের প্রকৃত বন্ধু নয়, তা তিনি অবশেষে বুঝতে পেরেছেন। একইভাবে সিরিয়ার ক্ষমতা থেকে আসাদকে সরানো যে সম্ভব নয়, তাও এরদোগান আজ বুঝতে পেরেছেন। তাই এরদোগান আজ আসাদকে মেনে নিয়েই সিরিয়ার সাথে সম্পর্ক পুনস্থাপনের চেষ্টা করছেন। এক সময় যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিরোধী শক্তি রাশিয়া, চীন, ইরান এবং সিরিয়ার সাথে এরদোগানের ভালো সর্ম্পক ছিল। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে গিয়ে এরদোগান হয়ে যান আসাদের প্রতিপক্ষ। একই ইস্যুতে রাশিয়া, চীন এবং ইরানের সাথে এরদোগানের সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়ে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের সাথে সম্পর্কের উষ্ণতা তৈরি হয়। কিন্তু দীর্ঘ যুদ্ধ সত্ত্বে ও সিরিয়ার ক্ষমতা থেকে আসাদের পতন না হওয়ায় এবং ১৫ জুলাইয়ের ব্যর্থ সামরিক অভুত্থানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা এরদোগানের পাশে না আসায়, এরদোগান বুঝতে পেরেছেন যে তিনি ভুল পথেই হেঁটেছেন। তাই এখন এরদোগান যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের বলয় থেকে বেরিয়ে এসে তার পুরানো বন্ধু রাশিয়া, চীন এবং ইরানের বলয়ে ভিড়তে চাইছেন। এমনকি এরদোগান এখন সিরিয়ার ক্ষমতায় আসাদকেও মেনে নিচ্ছেন। এটা হচ্ছে এরদোগানের বিলম্বিত বোধাদয়।
মুসলিম বিশে^ তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী একটি দেশ। এশিয়া এবং ইউরোপের সংযোগ স্থাপনকারী ও ন্যাটোর সদস্য দেশ হিসেবে পশ্চিমা বিশে^ তুরস্কের আলাদা পরিচয় ও প্রভাব রয়েছে। মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের প্রতিষ্ঠিত ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্কের রাজনীতিতে প্রেসিডেন্ট এরদোগান এবং তার দল জাস্টিস এন্ড ডেভেলাপমেন্ট পার্টি অতি আলোচিত একটি নাম। পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে প্রভাবিত ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্কে জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামপন্থি এই দলের উত্থান এবং ক্ষমতায় আরোহণ ছিল বিশ^জুড়ে একটি আলোচিত বিষয়। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এবং প্রতিকূলতাকে জয় করে দলটি তুরস্কের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। দলটির নেতৃত্বে তুরস্কে ইসলামী সংস্কৃতি, রীতিনীতি এবং মূল্যবোধের বিকাশ হয়। বর্তমান প্রেসিডেন্ট এরদোগানের প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে দলটির যাবতীয় কর্মকা- এবং উত্থান। এরদোগানের নেতৃত্বে দলটি ২০০২ সাল থেকে একটানা তুরস্কের ক্ষমতায় এবং দলটির নেতা এরদোগান ছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। ২০১৪ সালে এরদোগান প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন এবং বর্তমানে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট। এরদোগান হয়ে ওঠেন তার দল এবং দেশের অবিসংবাদিত নেতা। এ অবস্থায় গত ১৫ জুলাই তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়, যা জনগণ ব্যর্থ করে দেয়। ফলে এরদোগান এখনো তুরস্কের ক্ষমতায়। এ অভ্যুত্থানের জন্য এরদোগান যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচিত ধর্মীয় নেতা গুলেনকে দায়ী করেন এবং গুলেনপন্থীদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালান। অথচ এই গুলেন এক সময় এরদোগানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন এবং গুলেনের সমর্থনেই এরদোগান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন। ২০১২ সাল পর্যন্তই এই গুলেন ছিলেন এরদোগানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ধর্মীয় আন্দোলনের নেতা গুলেন কেন আরেক ধর্মীয় প্রবক্তা এরদোগানের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান করতে যাবেন, তা বোধগম্য নয়। গুলেন এবং হিজমত আন্দোলনের বিরুদ্ধে এরদোগান এত ক্ষুব্ধ কেন তারও যুক্তিসঙ্গত কোনো ব্যাখ্যা নেই। এখানেও এরদোগান ভুলনীতি গ্রহণ করেছেন বলেই মনে হচ্ছে। এই অভ্যুত্থানের পর থেকেই তুরস্কের সাথে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাদের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। এ অবস্থায় সম্পর্ক উন্নয়নে এরদোগান ৭ আগস্ট রাশিয়া সফর করেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে বৈঠক করেন।
এরদোগান মুসলিম বিশে^র একজন আশাবাদী নেতা হলেও, তার ভুল নীতি মুসলিম বিশে^র জন্য ধ্বংসই ডেকে আনছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, আমরা কেউ তার সমালোচনা করিনি এবং তার ভুলগুলো ধরিয়ে দিইনি। আমরা কখনই আমাদের প্রিয় মানুষগুলোর ভুল ধরি না। আমরা মনে করি, তাদের সব কাজই সঠিক। কিন্তু যখন সব হারাই তখন ভুলটা বুঝতে পারি, তখন আর কিছু করার থাকে না। এরদোগানের বেলায়ও এটা সত্য। ২০১১ সালে মুসলিম দেশে দেশে যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হয় তাকে ব্যবহার করে পশ্চিমারা তাদের বিরোধী শাসকদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পশ্চিমা বিরোধী সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্রোহীরা যুদ্ধ করছে। এসব বিদ্রোহীদেরকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিকভাবে সাহায্য করছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব। সাথে রয়েছে তুরস্ক, সৌদি আরব এবং কাতারসহ বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশ। পিছন থেকে ইসরাইল কলকাঠি নাড়ছে। অপরদিকে আসাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ইরান, রাশিয়া, চীন ও লেবানের হিজবুল্লাহ। এই যুদ্ধে ইতোমধ্যেই প্রায় চার লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছে এবং প্রায় চল্লিশ লক্ষ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, মসজিদ-মাদরাসা, স্কুল-কলেজসহ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য নিরাপরাধ আবালবৃদ্ধবনিতা। নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রতিদিনই অসহায় মানুষেরা বাঁচার তাগিদে উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছে। ধ্বংসযজ্ঞ চলছে তো চলছেই। আসাদ বিরোধী বিদ্রোহীদের সকল তৎপরতার হেড কোয়াটার তুরস্কে অবস্থিত। বিদ্রোহীদের অফিস, সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং রাজনৈতিক তৎপরতা সবই তুরস্কের মাটিতে। তুরস্কের সাথে সিরিয়ার দীর্ঘ সীমান্তের সুযোগে বিরোধীরা অবাধেই তুরস্ক হয়ে অস্ত্র পাচ্ছে। এর মাধ্যমে এরদোগান শুধু শুধু একটি সংকট সৃষ্টি করেছেন, যার কারণে মুসলমানদের কেবল ক্ষতিই হয়েছে। একইভাবে পশ্চিমারা তাদের দীর্ঘদিনের আরেক শত্রু লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফীকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার শ্লে¬াগান দিয়ে তারা লিবিয়ায় হামলার জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব পাশ করে। এরপর পশ্চিমা বিশ্ব লিবিয়ায় সামরিক হামলা শুরু করে দেশটিকে ধ্বংস করে।
গাদ্দাফী পরবর্তী লিবিয়া আজ এক ধ্বংসের জনপদ। লিবিয়ার জনগণ আজ গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার কিছুই পায়নি। এখানেও পশ্চিমাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন এরদোগান, সাথে ছিল কাতার এবং সৌদি আরব। লিবিয়াকে ধ্বংস করার পর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল মিসরের ক্ষমতা থেকে নির্বাচিত ইসলামপন্থি প্রেসিডেন্ট ড. মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পশ্চিমারা পাশ্চাত্য বিরোধী ড. মুরসিকে কৌশলে আরেক পাশ্চাত্য বিরোধী আসাদের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেন। এক্ষেত্রেও পশ্চিমাদের পক্ষে ছিলেন এরদোগান। তিনি আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আসাদ বিরোধী পদক্ষেপ নিতে মুরসিকে উদ্বুদ্ধ করেন, যা ছিল মূলত পশ্চিমাদেরই পরিকল্পনা। এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল বিরোধী মিসরের প্রেসিডেন্ট ড. মুরসি, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের শত্রু আসাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেন। পশ্চিমারা এটাই চেয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের দুই শত্রু ড. মুরসি এবং আসাদ যখন নিজেরাই নিজেদের শত্রু হয়ে গেছেন তখনই তারা ড. মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার কাজটি সম্পন্ন করে। মিসরের সেনাবাহিনী গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামরত কয়েক হাজার মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করলেও এক্ষেত্রে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের প্রবক্তা যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর পক্ষেই অবস্থান নেয়। অবশ্য এরদোগান পরবর্তীতে তার ভুল বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু ততক্ষণে সবই শেষ। তুরস্কের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা না পেলে লিবিয়ার ক্ষমতা থেকে গাদ্দাফীকে উৎখাত করতে পশ্চিমা বিশ্ব কখনোই সফল হতো বলে মনে হয় না। একইভাবে তুরস্কের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা না পেলে সিরিয়ার আসাদ বিরোধী যুদ্ধও এতটুকু অগ্রসর হতো না। একইভাবে এরদোগানের প্ররোচণায় মুরসি যদি আসাদের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিতেন তাহলে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পশ্চিমা পরিকল্পনাও ব্যর্থ হতে পারত। মনে রাখতে হবে, বড় নেতার বড় ভুল বড় ক্ষতিই বয়ে আনে। অবশেষে নিজের ক্ষমতায় যখন আঘাত এসেছে, তখন এরদোগান তার ভুলটি বুঝতে পেরেছেন।
বিশ্ব রাজনীতি বেসিক কিছু নিয়ম মেনে চলে। সেটা হচ্ছে শত্রুর শত্রু বন্ধু, শত্রুর বন্ধু শত্রু। বন্ধুর বন্ধু বন্ধু আর বন্ধুর শত্রু শত্রু। এই নিয়মেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এখানে আদর্শ কোনো ফ্যাক্টর নয়। যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু বলেই চীন, রাশিয়া, ভেনিজুয়েলা, উত্তর কোরিয়া সাথে ইরানের ভালো সম্পর্ক। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু বলেই সিরিয়ার সাথে চীন, রাশিয়া এবং ইরানের ভালো সম্পর্ক। একই সাথে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলে প্রধান শত্রু বলেই হামাস এবং হিজবুল্লাহর সাথে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের ভালো সম্পর্ক। এই সমীকরণ রাজনীতিবিদদের বুঝতে হবে এবং এই সমীকরণ ভুল করলে বিপর্যয় অনিবার্য। যুদ্ধের ময়দানে একটি ভুল যেমন দেশকে পরাধীন করে, ঠিক তেমনি রাজনীতিতে ভুল নিয়ে আসে বিপর্যয়, যা যুগ যুগ ধরে বহন করতে হয়। এরদোগানের উচিত ছিল পশ্চিমা বিরোধী শক্তি যেমন আসাদের নেতৃত্বাধীন সিরিয়া, গাদ্দাফীর নেতৃত্বাধীন লিবিয়া, মুরসির নেতৃত্বাধীন মিসর এবং ইরান, হিজবুল্লাহ, হামাসের সমন্বয়ে একটি জোট গঠন করা এবং তাকে সংহত করা। এ জোটের সাথে থাকত সুদান, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া, ভেনিজুয়েলাসহ পশ্চিমা বিরোধী শক্তিসমূহ। ফলে পৃথিবীতে শক্তির একটি ব্যালেন্স হতো, যা মুসলিম বিশে^র উত্থানে সহায়ক ভূমিকা পালন করত।
বর্তমান বিশ্বে এরদোগান একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ। তার অনেক অর্জন। তিনি ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্কে ইসলামী মূল্যবোধের বিকাশ ঘটিয়েছেন। যে তুরস্কে মহিলাদের হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ ছিল, সেই তুরস্কে এখন লাখো মহিলা হিজাব পরিধান করেন। তিনি তুরস্কের জনগণের জীবনমানকে অনেক উন্নত করেছেন এবং তুরস্ককে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বিশ^বাসীর কাছে একজন ইসলামপন্থি রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। স্বাভাবিকভাবেই তার কাছে বিশ^মুসলিমের অনেক প্রত্যাশা। কিন্তু তিনি পররাষ্ট্রনীতিতে অনেক ভুল করেছেন। যার কারণে মুসলিম বিশ^ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা আশা করব, তিনি এবার আর ভুল করবেন না এবং মুসলমানদের কল্যাণে নিজেকে আরো বেশি নিবেদিত করবেন। তুরস্ক যেহেতু সিরিয়ার বৃহৎ প্রতিবেশী এবং সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সকল তৎপরতার কেন্দ্র যেহেতু তুরস্কে অবস্থিত, সেহেতু সিরিয়া সংকট নিরসনে এরদোগানকেই কাজ করতে হবে। গৃহযুদ্ধ বিপর্যস্ত লিবিয়ায় রাজনৈতিক সংকট নিরসনেও এরদোগানকে এগিয়ে আসতে হবে। একইভাবে ইরাক, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন এবং ইয়েমেন সংকটেও এরদোগানকে ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা আশা করব, তুরস্কের পাশাপাশি পুরো মুসলিম বিশে^র সমস্যা সমাধানে এরদোগান যথাযথ দায়িত্ব পালন করবেন। মুসলিম দেশগুলোর মাঝে বিদ্যমান অনৈক্য, বিভেদ, হানাহানি বন্ধ করে ঐক্য এবং সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে। মুসলমানদের নিয়ে পশ্চিমাদের দাবা খেলা বন্ধে কাজ করতে হবে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, পশ্চিমারা এরদোগান এবং তার দলের বন্ধু নয়। এ কথাটি নিরেট সত্য বলেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বয়স প্রায় ৬০ বছর হলেও, তুরস্ককে এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য করা হয়নি এবং ভবিষ্যতেও করার সম্ভাবনা নেই। সুতরাং এরদোগানের উচিত হবে, শক্তহাতে এবং ঠা-া মাথায় কৌশলী পন্থায় সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। একই সাথে গুলেন ও তার দলের সাথে বন্ধুত্ব করে তুরস্কে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা। গুলেনকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে এবং তার অনুসারীদের ওপর দমন-নির্যাতন অব্যাহত রাখলে তা কোনো সমাধান আনবে না, বরং জাতি আরো বিভক্ত হবে। নিজ দেশের জনগণের মধ্যে বিভক্তি দেশকে দুর্বল করে আর শত্রুকে শক্তিশালী করে। আশা করি, এরদোগান বিজ্ঞতার পরিচয় দেবেন এবং তার নেতৃত্বে তুরস্কসহ পুরো মুসলিম বিশ^ শান্তি এবং উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে।
লেখক প্রকৌশলী ও কলামিস্ট
ড়সধৎথপঃম১২৩@ুধযড়ড়.পড়স

 



 

Show all comments
  • Imran ২০ আগস্ট, ২০১৬, ১০:২২ এএম says : 4
    দৈনিক ইনকিলাব কি রেডিও তেহরান হয়ে গেল?
    Total Reply(1) Reply
    • মুনাজির ২১ আগস্ট, ২০১৬, ৭:৫০ এএম says : 4
      দৈনিক ইনকিলাব কি রেডিও তেহরান হয়ে গেল?

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এরদোগানের বিলম্বিত বোধোদয়
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ