Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গ্রেফতারকৃত মানসিক হাসপাতালের রেজিস্ট্রার রিমান্ডে

আনিসুলকে মাইন্ড এইডে পাঠান মানসিক স্বাস্থ্যের রেজিস্ট্রার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

এএসপি আনিসুল করিম চিকিৎসার জন্য যান জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালে। কিন্তু সেখানকার রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্ররোচনা ও সরাসরি হস্তক্ষেপে আদাবরের নামমাত্র ক্লিনিক মাইন্ড এইড হাসপাতালে নেয়া হয় এএসপি আনিসুলকে। সেখানে নেয়ার পর চিকিৎসার নামে নির্মম মারধরের শিকার হয়ে প্রাণ হারান আনিসুল। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগর এলাকায় নিজ বাসা থেকে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে গতকাল তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) ফারুক মোল্লা। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গতকাল নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, এএসপি আনিসুল করিম হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত ১৫ জন আসামির মধ্যে ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি ৩ জনের মধ্যে ১ জন বিদেশে ও ২ জন পলাতক রয়েছেন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৪ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেফতারকৃতদের জবানবন্দি ও জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনায় কারা জড়িত, কাদের ইন্ধনে সরকারি মানসিক হাসপাতাল থেকে মাইন্ড এইডে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কাদের যোগসাজস রয়েছে, কে উদ্বুদ্ধ করেছে আমরা সবার নাম পেয়েছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করেছি।

তিনি আরো বলেন, ঘটনার দিন প্রথমে এএসপি আনিসুল করিমকে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে নেয়ার পর ঠিকঠাক সেবা দেয়া হয়নি। অনেকক্ষণ বসিয়ে রেখে তাকে একটা বেডে শুইয়ে দুইটা ইনজেকশান পুস করা হয়। এর মধ্যেই এএসপি আনিসুল ঘুমিয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালের রেজিস্ট্রার মামুন এসে দৌড়াদৌড়ি করে, ফোনে যোগাযোগ করে এএসপি আনিসুলকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে পাঠান।

ডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, মামুন সরকারি প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রার হওয়া স্বত্তে¡ও তিনটা হাসপাতালে রোগী দেখেন। এখানে তার ২৪ ঘণ্টার ডিউটি থাকা স্বত্তে¡ও এসব ফাঁকি দিয়ে টাঙ্গাইলের ঢাকা ক্লিনিক, ঢাকার মাইন্ড ওয়েল এবং মাইন্ড এইড হাসপাতালে রোগী দেখেন। সরকারি হাসপাতাল থেকে কেন ওই নামমাত্র হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগীর বেটার ট্রিটমেন্ট চেয়েছিলেন। তাহলে কি সরকারি হাসপাতালে বেটার ট্রিটমেন্ট হয় না? এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি। রেজিস্ট্রার মামুনসহ দালালচক্র সব রোগীকে বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠাতেন না। যেসব রোগী আসতেন তাদের অবস্থা থেকে শুধু মাইন্ড এইড না বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে পাঠাতেন। এএসপি আনিসুলের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর খবর পেয়ে মাইন্ড এইডে যান রেজিস্ট্রার মামুন। সেখানে গিয়ে তিনি নিজেই অ্যাম্বুলেন্সে করে মৃত মানুষকে এনে আবার হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করান। এটা হত্যাকান্ড অবশ্যই, মামুন যা করেছেন এটা একধরনের প্রতারণাও।

এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি হারুন বলেন, কোনো রোগীকে এসব ক্লিনিকে পাঠালে তিনি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমিশন পেতেন। একজন রোগীকে সরকারি হাসপাতালে নেয়ার পরেও কেন ভালো চিকিৎসা দেয়া হয়নি, এগুলো আমরা ধরছি। গত কয়েকদিনে আমরা হাসপাতালের এমন ২০ থেকে ২৫ জন দালালকে গ্রেফতার করেছি। এগুলো বন্ধ করা হবে।

গত ৯ নভেম্বর আদাবরের ওই হাসপাতালে যাওয়ার পর একটি রুমে বসে নাস্তা খান এএসপি আনিসুল করিম। কিছুক্ষণ পর তিনি ওয়াশরুমে যেতে চাইলে বেলা আনুমানিক পৌনে ১২ টার দিকে হাসপাতালের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয় তাকে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যান। এ সময় এএসপি আনিসুল করিমের সঙ্গে তার বোন উম্মে সালমা উপরে যেতে চাইলে আরিফ ও রেদোয়ান সাব্বির তাকে বাধা দিয়ে দ্বিতীয় তলার কলাপসিবল গেট আটকে দেন। বেলা ১২টার দিকে আরিফ নিচে এসে তার বোনকে উপরে যাওয়ার জন্য ডাক দেন। এরপর তার বোনসহ পরিবারের সদস্যরা উপরে গিয়ে একটি কক্ষের মেঝেতে আনিসুল করিমকে নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর পরিবারের সদস্যরা একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে আনিসুল করিমকে উদ্ধার করে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ১২টা ৫৮ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ