পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, যানজট এরকম বহু সমস্যায় জর্জরিত রাজধানী ঢাকা জঞ্জালের শহরে পরিণত হয়েছে। বায়ুদূষণ ও পরিবেশ বিপর্যের কারণে বিশ্বের দূষিত শহরের শীর্ষস্থান প্রায়ই ঢাকার দখলে থাকে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন- রাস্তা, নদীদূষণ পরিবেশের বিপর্যয়ে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। তার উপর চলতি পথে যানজট, অনিয়ম, দখল, গ্যাস স্বল্পতায় টিমটিম চুলা, পানির জন্য হাহাকার, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধময় রাস্তাঘাট, নগরজুড়ে রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ি, উন্নয়নের ধকল, পানিবদ্ধতা, যানবাহন সঙ্কট, রিকশার রাজত্ব, সবমিলে ঢাকাবাসীর জীবন এখন দুর্বিষহ।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের পাশাপাশি এবার ডেঙ্গু ও বায়ু দূষণের আতঙ্কে ঢাকাবাসী। বায়ুদূষণের মাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বায়ুমান সংস্থা আইকিউ এয়ারের তথ্যমতে, ঢাকার বাতাস এখন অস্বাস্থ্যকর। এ অবস্থায় শিশু, বৃদ্ধ ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগে ভোগা ব্যক্তিদের বাইরের বের না হওয়ার পরামর্শ তাদের। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পেলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধিরও আশঙ্কা রয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যেই রাজধানীতে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় ২১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে ১৯ জন ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে রনজীত দাস চৌহান নামের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক শিক্ষার্থী মারা গেছেন। করোনার মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় রাজধানীবাসীর মধ্যে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে ডেঙ্গুর সংক্রমণ এটা অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়। তবে অনেকেই আছেন যারা হয়তো এ বিষয়ে মাথা ঘামান না। তা না হলে করোনার মধ্যে নগরীর যে বায়ুদূষণ তার জন্য লোকজন অবশ্যই মাস্ক পরতো। সেটা তো দেখাছ না। এ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক পরতে হবে, দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং ঘন ঘন সাবান দিয়ে বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হতে পারে।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট নগরবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকাকে অনেকে বসবাসের অযোগ্য, পরিত্যক্ত নগরী এসব নানা অভিধায় আখ্যায়িত করেন। তবে আমি তা মনে করি না। নগরীর হাজারও অনিয়ম দৃশ্যমান। এসব অনিয়ম কঠোর অনুশাসন ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে দূর করে আমরা এ শহরকে অবশ্যই বাসযোগ্য করতে পারি। যেমন নগরীর খাল, খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান এগুলো উদ্ধার এবং যথাযথভাবে রক্ষা করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। সরকার আন্তরিক হলে এবং সবাই সচেতন হলেই আমরা আমাদের রাজধানীকে বাসযোগ্য ও সুন্দর করে গড়তে পারি।
বাড়ছে বায়ুদূষণ
রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ ক্রমেই বাড়ছে। বায়ুমান সংস্থা আইকিউ এয়ারের তথ্য মতে, গতকাল রাজধানীর বায়ুদূষণের মান ছিল ১২৬ পিএম। যা ‘আনহেলদি ফর সেনসেটিভ গ্রæপস’ ক্যাটাগরির দূষণ। এ দূষণের মাত্রা আগামী ২০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইকিউ এয়ার। আইকিউ এয়ারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ মাত্রার দূষণে যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। বিশেষ করে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগে ভোগা ব্যক্তিদের এ অবস্থায় করোনার ঝুঁকি খুবই বেশি। বৃদ্ধ, শিশু, শ্বাস-প্রশ্বাসে রোগে ভোগা ব্যক্তিসহ সবাইকে বাড়ির বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
গত বছরের মতো রাজধানী ঢাকা আবার বিশ্বে বায়ুদূষণের শিকার শহরগুলোর শীর্ষ তালিকায় যাচ্ছে। ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান কারণ হচ্ছে ধুলা। অপরিকল্পিতভাবে শহরের যেখানে-সেখানে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও উন্নয়ন কাজের জন্য রাজধানীর বাতাসে ছড়াচ্ছে ধুলা। আর তাতে বিষাক্ত হচ্ছে রাজধানীর বাতাস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত চার কারণে রাজধানীবাসী বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছে। এর মধ্যে ধুলাদূষণ হলো অন্যতম প্রধান কারণ। দ্বিতীয়ত, পুরোনো যানবাহনের আধিক্য ও এসবের কালো ধোঁয়া। তৃতীয়ত, শহরের আশপাশের শিল্প-কলকারখানার দ‚ষণ। চতুর্থত, শহরের ভেতরে যে ময়লা-আবর্জনা জমে সেগুলো পোড়ানোর ধোঁয়া। পরিবেশ অধিদফতর যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় এই পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন ঘটছে না।
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান প্রথম দিকেই। রাজধানী ঢাকায় দেড় কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। পরিবেশবিদরা বলছেন, অন্য দেশগুলো তাদের বড় শহরগুলোর বায়ুদূষণ রোধে যেখানে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, সেখানে ঢাকা অনেকটাই ব্যর্থ। ধুলাদূষণ রোধে সকাল বিকাল পানি ছিটানো এবং নির্মাণ কাজের স্থান ঢেকে রাখার জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশ থাকার পরও পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। শহরের মধ্যে উন্নয়নকাজের ফলে সৃষ্ট ধুলাদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না দুই সিটি কর্পোরেশন। দূষণের আরেক বড় উৎস ঢাকার বর্জ্য, আর এ বর্জ্য ব্যবস্থাপনারও আধুনিকায়ন করতে পারেনি দুই সিটি কর্পোরেশন।
বিশিষ্ট পানি বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, কোভিড-১৯, ডেঙ্গু, বায়ুদূষণসহ হাজারও সমস্য নিয়ে ঢাকাবাসীর মতো আমিও আতঙ্কিত। কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর স্বাস্থ্যখাতের ভয়াবহরূপ প্রকাশ হতে থাকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেবা ছেড়ে বাণিজ্য করতে চায়। তারা কোভিডের বিভিন্ন সামগ্রী কেনাবেচার মাধ্যমে ব্যবসা করে। টিকা নিয়েও চলছে এমনি বাণিজ্যের পাঁয়তারা। তবে ডেঙ্গুর ব্যাপারে এবার দুই সিটি কর্পোরেশন অনেক সচেতন। তারা আগে থেকেই নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের এ উদ্যোগের পাশাপাশি নাগরিক হিসাবে আমাদেরও সচেতন হতে হবে। এ ছাড়া বায়ুদূষণ এবং অন্যান্য বিষয়েও যেসব সমস্যা সেগুলো দৃশ্যমান এবং এর প্রতিকারও জানা। ঢাকায় অসংখ্য পুরোনো আনফিট গাড়ি চলাচল করছে। এসব গাড়ি থেকে বের হচ্ছে কালো ধোঁয়া। মেয়াদ উত্তীর্ণ পুরোনো গাড়ির কালো ধোঁয়ায়ও ঢাকার বায়ুদূষিত হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য যে ধুলার সৃষ্টি হয়, তাতে পানি ছিটাতে হবে। ময়লা-আবর্জনা যথাস্থানে ফেলতে হবে। এ সবের জন্য নাগরিক সচেতনতাও প্রয়োজন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়ছে
করোনা মহামারির মধ্যেই বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় ২১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে রাজধানীর কয়েকটি হাসপাতালে ১৯ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে গত রোববার (১৫ নভেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রনজীত দাস চৌহানের মৃত্যু হয়। রনজীত বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) চিরুনি অভিযান শুরু করেছে। অভিযানে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় এবং অন্যান্য অপরাধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হলেও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমছে না। অভিযান চালানোর পরও এডিস মশার বিস্তার বাড়ায় রাজধানীবাসীর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে ২১৯ জন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যা চলতি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক। মাসওয়ারি সংক্রমণের হিসাবে, এর আগে জানুয়ারিতে ১৯৯ জন, ফেব্রæয়ারিতে ৪৫ জন, মার্চে ২৭ জন, এপ্রিলে ২৫ জন, মে মাসে ১০ জন, জুনে ২০ জন, জুলাইয়ে ২৩ জন, আগস্টে ৬৮ জন, সেপ্টেম্বরে ৪৭ জন ও অক্টোবরে ১৬৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৫ জনে। এর মধ্যে রাজধানীতে ৮২ জন ও ঢাকার বাইরের হাসপাতালে তিনজন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনার জন্য রোগতত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়।
রাজপথের বেহাল দশা
ভাঙাচোরা খানাখন্দে বেহাল রাজধানীর প্রায় প্রতিটি সড়ক। নানা কাজের খোঁড়াখুঁড়িতে অনেক সড়ক দীর্ঘদিন যাবত চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে। উন্নয়ন কাজের নামে সারাবছর ধরে চলতে থাকা খোঁড়াখুঁড়িতে অনেক সড়কের অবস্থা একেবারে নাজুক। ফলে রোদ থাকলে ধুলা আর বৃষ্টি হলেই কাদা। মাঝেমধ্যে দেখা দেয় পানিবদ্ধতাও। যানজট, ধুলো দূষণে নগরবাসী এমনিতেই অতিষ্ঠ। সমন্বয়হীন অপরিকল্পিত এসব উন্নয়ন কর্মকান্ডের কারণে নগরবাসীর ভোগান্তি যেন চরমে পৌঁছেছে।
রাজধানীজুড়ে চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, সড়কের মাঝ বরাবর দখল করে চলছে উন্নয়ন কাজ। দুই সিটি কর্পোরেশনসহ ঢাকা ওয়াসা, বিটিসিএল, তিতাস, ডিপিডিসি, ডেসা, ডেসকো, রাজউকসহ ২৬টি সেবাদানকারী সংস্থার সংস্কার আর উন্নয়ন কাজ চলছে পুরোদমে। কোথাও মেট্রোরেল, কোথাও বিদ্যুৎ লাইন, স্যুয়ারেজ লাইন আবার কোথাও ওয়াসার পানির লাইন সংস্কারে চলছে এসব খোঁড়াখুঁড়ি। এ ছাড়া চলছে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ। খোঁড়াখুঁড়ি ও ভাঙাচোরার কারণে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশাল বিশাল ফ্লাইওভারগুলো অনেক সময় অকেজো মনে হয়। ধুলাবালি যানজট সব মিলিয়ে চরম দুর্ভোগ সইতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক ফারুক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকার যানজটসহ অন্যান্য যে সব সমস্যা সেগুলো সমন্বয়হীনতার কারণে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সমন্বিতভাবে কাজ করলে এ সব সমস্যা নিরসন করে ঢাকাকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। ঢাকায় বড় বড় ফ্লাইওভার হচ্ছে; কিন্তু এগুলোর সুফল আমরা পাচ্ছি না। আসলে এগুলো পুরো ঢাকাকে চিন্তা করে করা হয়নি। ঢাকার যানজট নিরসনে রাস্তার প্রতিটি মোড়কে ফ্রি করার চিন্তা করতে হবে। এটা করতে মোড় পরিকল্পিতভাবে কেন্দ্রিক ওভারপাস করে যানজট নিরসন সম্ভব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।