পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘আমার মনোযোগে যদি একটু আধটু ঘাটতি দেখেন, ক্ষমা করে দিয়েন’, আমেরিকায় নির্বাচনের পর গত সপ্তাহে বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনারকে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় হঠাৎ বলে ওঠেন লন্ডনে সউদী রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন বানদার।
বারবার তার মোবাইল ফোনের দিকে তাকাচ্ছিলেন মাঝ চল্লিশের সউদী রাজপরিবারের প্রভাবশালী এই রাজপুত্র। বলেন, ‘উইসকনসিনের ফলাফলের দিকে চোখ রাখছি’।
আট দিন আগের কথা এটি, যখন কেউই জানতেন না জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের ক্ষমতায় কে বসছেন। তারপর জো বাইডেনকে যখন বিজয়ী ঘোষণা করা হলো, রিয়াদে সউদী নেতৃত্ব সাড়া দিতে বেশ সময় নিয়েছেন। অথচ চার বছর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন জিতেছিলেন অভিবাদন জানাতে মুহ‚র্ত দেরি করেননি তারা।
তবে বিবিসির ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার মনে করেন, এতে বিস্ময়ের কিছু নেই কারণ ‘সউদী নেতৃত্ব গত সপ্তাহে বিশ্বের অত্যন্ত ক্ষমতাধর একজন বন্ধুকে হারিয়েছে’।
জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় সউদী আরব এবং উপসাগরে তাদের অনুগত মিত্র দেশগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদী কিছু পরিণতি অপেক্ষা করছে।
কৌশলগত-ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলের সাথে আমেরিকার সহযোগিতার সম্পর্ক ১৯৪৫ সাল থেকে। ওঠানামা থাকলেও এ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে, কিন্তু তাতে পরিবর্তন আসন্ন এবং সেই পরিবর্তনের অনেক কিছুই উপসাগরীয় নেতাদের পছন্দ হবে না।
বড় এক বন্ধুর প্রস্থান
সউদী রাজপরিবারের বড় একজন মিত্র এবং সমর্থক ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৭ সালে ক্ষমতা নেয়ার পর তার প্রথম আনুষ্ঠানিক বিদেশ সফর শুরু করেছিলেন তিনি সউদী আরবকে দিয়ে। মি. ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ক্ষমতাধর সউদী যুবরাজ মোহামেদ বিন সালমানের সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।
২০১৮ সালে স্বেচ্ছা নির্বাসিত সউদী সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যাকান্ডের যখন সিআইএসহ পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যুবরাজ মোহাম্মদকে সন্দেহ করে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ নিয়ে কথা বলতে অস্বীকার করেন।
প্রখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড স¤প্রতি প্রকাশিত তার সাড়া জাগানো একটি বইতে লিখেছেন - তার সাথে সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গলা উঁচিয়ে বলেছিলেন তিনি সউদী যুবরাজকে রক্ষা করেছেন।
জামাল খাসোগি হত্যাকান্ডের পর মার্কিন কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে সউদী আরব এবং ইউএই’র কাছে ৮০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি অনুমোদন করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইয়েমেনে সউদী নেতৃত্বে যুদ্ধ বন্ধে কংগ্রেসে এক প্রস্তাবে তিনি ভেটো দেন।
ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, বোঝাই যায় যে, কেন তারপর যুবরাজ মোহাম্মদের লোকজন বলেছিলেন: ‘আর কোনো (খাসোগি হত্যাকান্ড নিয়ে) চিন্তা নেই। আমরা ব্যবস্থা করে ফেলেছি’।
সুতরাং বলাই বাহুল্য যে, সউদী আরব, এবং সেই সাথে কিছুটা হলেও সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন হোয়াইট হাউজে তাদের বড় একজন মিত্র হারাতে বসেছে।
তবে তাতে যে সবকিছুই বদলে যাবে তা হয়তো নয়, তবে কোথাও কোথাও বর্তমান পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
ইয়েমেনের যুদ্ধ
ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সউদী নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের যুদ্ধে এবং তার ফলে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয় নিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শেষ দিকে ক্রমেই অস্বস্তি প্রকাশ করতে শুরু করেছিলেন। তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও একই মত পোষণ করতেন।
প্রেসিডেন্ট ওবামা যখন হোয়াইট হাউজ ছাড়েন, তখন ইয়েমেনের যুদ্ধের দু’বছর পার হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সামরিক কোনো সুফল তো আসেইনি, বরঞ্চ ইয়েমেনে জানমাল এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছিল। মার্কিন কংগ্রেসের ভেতর ইয়েমেনের যুদ্ধ নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হতে শুরু করে যার ফলে প্রেসিডেন্ট ওবামা সউদী আরবে সামরিক এবং গোয়েন্দা সহযোগিতা কমিয়ে দেন।
কিন্তু মি. ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর সাথে সাথেই সেসব সাহায্য ফিরিয়ে তো আনেনই, বরঞ্চ তা বাড়িয়ে দেন। সেই চিত্র আবারো বদলে যেতে পারে। স¤প্রতি গবেষণা সংস্থা কাউন্সিল অব ফরেন রিলেসন্সে এক বক্তৃতায় জো বাইডেন স্পষ্ট করে দেন যে, তিনি ক্ষমতায় গেলে ইয়েমেনে সউদী নেতৃত্বে ‘সর্বনাশা যুদ্ধে’ আমেরিকার সাহায্য বন্ধ করে দেবেন। শুধু তাই নয়, জো বাইডেন বলেন, ‘সউদী আরবের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক নতুন করে পর্যালোচনার’ নির্দেশ দেবেন তিনি।
সুতরাং ইয়েমেন যুদ্ধ বন্ধে সউদী আরব এবং ইয়েমেনে তাদের মিত্রদের ওপর বাইডেন প্রশাসনের যে চাপ বাড়বে তা নিয়ে সন্দেহ নেই।
তবে, ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, সউদী এবং আমিরাতিরাও সা¤প্রতিক সময়ে উপলব্ধি করতে শুরু করেছে যে, যুদ্ধ করে ইয়েমেনে জেতা সম্ভব নয়। ‘তারা মুখ রক্ষা করে সঙ্ঘাত থেকে বেরুনোর একটা রাস্তা খুঁজছে। তারা শুধু দেখাতে চায় যে, ২০১৫ সালে যুদ্ধ শুরুর সময় হুতি বিদ্রোহীদের যে শক্তি ছিল, এখন তা আর তাদের নেই’।
ওয়াশিংটন থেকে বিবিসির বারবারা প্লেট বলছেন, ইয়েমেনে সউদী নেতৃত্বে যুদ্ধের প্রতি আমেরিকার সমর্থন প্রায় নিশ্চিতভাবে প্রত্যাহার করবেন জো বাইডেন। ‘বেসামরিক লোকজনের মৃত্যু, মানবিক বিপর্যয়ের কারণে ইয়েমেনের যুদ্ধের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মধ্যে বড় ধরনের অসন্তোষ তৈরি হয়েছে’। ওয়াশিংটনে গবেষণা সংস্থা আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের মেরি ড্যানিয়েল প্লেটকা বিবিসিকে বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে বিশাল কোনো পরিবর্তন হয়তো দেখা যাবে না, কিন্তু সউদী আরবের কাছ থেকে একটু দূরে সরে যাওয়া এবং ইরানের সাথে আলাপ বাড়ানোর সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত’।
ইরান
প্রেসিডেন্ট ওবামার মধ্যপ্রাচ্য নীতির সবচেয়ে বড় লেগাসি বা ছাপ ছিল ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি যেটি জয়েন্ট কমপ্রিহেন্সিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেপিসিওএ) নামে পরিচিত। এ চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করে সেদেশকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা।
তবে সউদী আরব এবং ইসরায়েলের এ চুক্তি নিয়ে তীব্র আপত্তি ছিল। তাদের যুক্তি ছিল, এ বোঝাপড়ার মাধ্যমে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা থেকে বিরত রাখা যাবে না, বরঞ্চ নিষেধাজ্ঞা ওঠালে তাদের শক্তি বাড়বে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এ যুক্তি পুরোপুরি গ্রহণ করেন এবং তার ভাষায়, ‘সর্বকালের সবচেয়ে জঘন্য চুক্তি’ থেকে একতরফা সিদ্ধান্তে তিনি আমেরিকাকে বের করে আনেন।
এখন তার উত্তরসূরি জো বাইডেন ঐ চুক্তিতে আবারো অংশীদার হওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছেন। আর এ সম্ভাবনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন সউদী আরব।
গত বছর সউদী তেল স্থাপনায় রহস্যজনক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর রিয়াদে সউদী সরকারের এক সংবাদ সম্মেলনে সেদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আদেল আল জুবেইর ইরান পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে প্রচÐ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সউদী মন্ত্রী বলেছিলেন, ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি সর্বনাশ ডেকে আনছে। কারণ, তার মতে, ‘এ চুক্তিতে ইরানের ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি এবং সেই সাথে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে তাদের অনুগত মিলিশিয়াদের যেভাবে ইরান শক্তিশালী করে চলেছে তাও ভাবা হয়নি’।
আদেল আল জুবেইর বলেন, ইরানের সাথে আন্তর্জাতিক এ চুক্তি ওবামা প্রশাসনের ‘একটি ভ্রান্ত নীতি ছিল কারণ ঐ সরকার বুঝতে পারেনি যে ইসলামি প্রজাতন্ত্রটি মধ্যপ্রাচ্যে কতটা হুমকি তৈরি করেছে’।
জানুয়ারি মাসে যখন ইরাকে আমেরিকান ড্রোন হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের অত্যন্ত ক্ষমতাধর কমান্ডার কাসেম সোলায়মানিকে হত্যা করা হয়, তখন সউদী আরব এবং তার উপসাগরীয় মিত্ররা খুশি হয়েছে।
ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার মনে করেন, এখন এসব দেশ সত্যিই উদ্বিগ্ন যে, তাদের স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে নতুন আমেরিকান প্রশাসন আবারো ইরানের সাথে মীমাংসা শুরু করবে।
কাতার
মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সবচেয়ে বড় এবং কৌশলগতভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বিমান ঘাঁটিটি কাতারে। আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি থেকেই পেন্টাগন সিরিয়া থেকে আফগানিস্তান এ পুরো অঞ্চলের বিমান অভিযান পরিচালনা করে।
কিন্তু তারপরও, সউদী আরব, ইউএই, মিসর এবং বাহরাইন কাতারের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রেখেছে। এসব দেশের প্রধান অভিযোগ যে, কাতার মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম ব্রাদারহুডের মত ইসলামপন্থীদের সমর্থন দিচ্ছে।
২০১৭ সালে রিয়াদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সফরের পরপরই কাতারকে বয়কটের সিদ্ধান্ত জানায় এ চারটি দেশ এবং তারা পরিষ্কার জানে যে, তাদের এ সিদ্ধান্তে আমেরিকা প্রশাসনের সমর্থন তারা পাবে।
আসলে, ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলেন, প্রথমদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বয়কট সমর্থন করলেও পরে তাকে বোঝানো হয় যে, কাতারও আমেরিকার মিত্র এবং কাতারের আল উদাইদ বিমান ঘাঁটিটি আমেরিকার প্রতিরক্ষা দপ্তরের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জো বাইডেন এখন উপসাগরীয় অঞ্চলের এ বিবাদ মিটিয়ে ফেলার জন্য হয়তো চাপ দেবেন। কারণ এ কলহ আমেরিকার জন্য অস্বস্তিকর এবং তাদের স্বার্থ বিরোধী।
মানবাধিকার
উপসাগরীয় দেশগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সবসময় কম-বেশি উদ্বেগ রয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কখনই এ নিয়ে মাথা ঘামাননি। তার কথা ছিল - সউদী আরবে কারাবন্দি নারী অধিকার কর্মীদের ইস্যু বা কাতারে বিদেশী শ্রমিকদের কথিত নির্যাতন বা ইস্তাম্বুলে সউদী কনস্যুলেটের মধ্যে সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যাকাÐ নিয়ে হৈচৈ করার চেয়ে উপসাগরে আমেরিকার কৌশলগত স্বার্থ এবং ব্যবসা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত জো বাইডেন এবং তার প্রশাসন মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব বিষয় নিয়ে এইরকমভাবে যে চুপ থাকবেন না তা একরকম নিশ্চিত।
তবে সউদী আরব বা ইরান নিয়ে বাইডেন প্রশাসন কী করবে তা অনেকটাই স্পষ্ট হবে যখন তিনি তার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নিয়োগ দেয়া শুরু করবেন। কে তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হবেন, কে পেন্টাগনের দায়িত্ব পাবেন, কে জাতীয় নিরাপত্তার প্রধান উপদেষ্টা হবেন - তা থেকেই মি. বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য নীতি নিয়ে অনেকটাই স্পষ্টভাবে ধারণা করা সম্ভব হবে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।