বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
চট্টগ্রামে অবৈধ গর্ভপাত কালে মারা যাওয়া তরুণী করোনায় মারা গেছেন বলে প্রচার করা হয়েছে। তবে তদন্তে বের হয়ে আসে পরিকল্পিত খুনের চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ এ তথ্য জানায়। পুলিশ কমর্কতারা বলেছেন সিলগালা করে দেওয়া সিটি হেলথ ক্লিনিক ছয় মাস আগে অবৈধ গর্ভপাত করাতে গিয়ে মারা যাওয়া এক তরুণীকে কোভিড-১৯ রোগী বলে প্রচার করেছিল।
বুধবার রাতে সিলগালা করার আগে পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক হারুনর রশিদ (৬০), নার্স গীতা দাশ (৪৩) ও আয়া সাবিনা ইয়াসমিন ওরফে চম্পাকে (৪৩) গ্রেপ্তার করে। তার আগে অলকা পাল (৩২) নামের এক নার্সকে গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত ১৫ মে নগরীর চকবাজার সিটি হেলথ ক্লিনিকে অবৈধ গর্ভপাত করাতে গিয়ে মৃত্যু হয় ওই তরুণীর। মৃত্যুর ১১ দিন পর পরিবারের অভিযোগে মামলা নেয় চকবাজার থানা পুলিশ। এর প্রায় ছয় মাস পর তদন্ত শেষে বুধবার রাতে হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান বলেন, গত ১৫ মে সিটি হেলথ ক্লিনিকে ওই তরুণী মারা যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে পরিবারকে লাশ বুঝিয়ে দেয়। ২৬ মে ওই তরুণীর বাবা চকবাজার থানায় এসে অভিযোগ করেন তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। অভিযোগের পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে। পুলিশ ওই তরুণীর সেজান নামের এক বন্ধুকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় ওই তরুণীর গর্ভপাত করানোর জন্য সিটি হেলথ ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়েছিল। সেখানে সে মারা যায়। তবে এজন্য সে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তবে বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা অস্বীকার করে হাসপাতালে কেউ মারা যায়নি বলে দাবি করে। আটক সেজানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপার্দ করা হলে সে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।
ডিসি মেহেদী বলেন, মামলার পর ওই তরুণীর লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়।
হাসপাতালেই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে সেটি নিশ্চিত হয়ে বুধবার অলকা পাল (৩২) নামে হাসপাতালের এক নার্সকে আটক করা হয়। সে আদালতে জবানবন্দিতে জানায় ওই তরুণীর গর্ভপাত করাতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়। মেয়েটির শারিরীক অবস্থা খারাপ হওয়ায় চিকিৎসক ডাকার কথা বলা হলেও হাসপাতাল পরিচালক ডাকেননি।
অলকার জবানবন্দির পর রাতেই হাসপাতাল পরিচালক হারুনর রশিদ, নার্স গীতা দাশ ও আয়া সাবিনা ইয়াসমিন ওরফে চম্পাকে গ্রেপ্তার করা হলে তারা অবৈধ গর্ভপাতে ওই তরুণীর মৃত্যুর কথা স্বীকার করে।
বিষয়টি সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হলে তিনি হাসপাতালে এসে কাগজপত্র দেখেন এবং কর্তৃপক্ষ কোনো অনুমোদন দেখাতে না পারায় হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।
গর্ভপাতে মারা যাওয়া তরুণীর পরিবারের পক্ষ থেকে যে দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তার একজন মেয়েটির বন্ধু সেজান। অপরজন সেজানের বন্ধু। কিন্তু পুলিশের তদন্তে এ ঘটনায় সেজানের বন্ধুর সম্পৃক্ততা না মেলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয় নি।
ওই তরুণী নগরীর একটি কলেজ থেকে বিবিএস শেষ করে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন। পাশাপাশি একটি ডেটা এন্ট্রি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। সেজানও তার সাথে একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। সেখানে তাদের পরিচয় হয়।
ওই তরুণীর বাবা বলেন, মেয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে তিনি ও তার স্ত্রী সিটি হেলথ ক্লিনিকে আসেন। তখন তারা লাশটি কাপড় মোড়ানো অবস্থায় দেখতে পান।
মেয়েকে ধরতে চাইলে তারা ধরতে না দিয়ে জানায় মেয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তবে বিষয়টি আমরা নার্স অলকার কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি জানান আমার মেয়েকে হাসপাতালে আনার পর সে মাথা ঘুরে পড়ে যায় এবং তাকে দেখে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু হাসপাতালের দারোয়ান আমাদের জানায় আমার মেয়ে সকালে সেখানে গেছে এবং বিকালে মারা যায়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে মৃত্যু সনদ চাওয়া হলেও তারা দেয়নি।
তরুণীর বোনের দাবি, লাশ গোসল করানোর সময় বোনের মাথার পেছনে থেঁতলানো এবং রক্তাক্ত দেখতে পেয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।