Inqilab Logo

বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রেজাল্ট পেতে ভোগান্তি

করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

দেশে শুরু থেকেই করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা নিয়ে নানামুখী বিতর্ক ছিল। এমনকি জালিয়াতি ও ভুয়া টেস্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। এদিকে শীত আসন্ন। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে সবাই আতঙ্কে। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইতোমধ্যে এ নিয়ে সব ধরণের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন। করোনার সংক্রমণরোধে ব্যাপক প্রস্তুতিও গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা। তবে এখনও করোনার নমুনা পরীক্ষা নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। কোন কোন স্থানে একদিনের মধ্যেই পরীক্ষার রেজাল্ট মিললেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এখনো ৩-৪ দিন লেগে যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় কর্মরত পেশাজীবী সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) প্রতি শনিবার করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। করোনার অন্যতম ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা সাংবাদিকদের নমুনা পরীক্ষার রেজাল্ট পেতেই লাগছে ৪ দিন বলে জানান ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কল্যাণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ। নানা ভোগান্তি এবং অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ ভুক্তভোগী মানুষ বলছেন, বাধ্য না হলে অনেকেই পরীক্ষা করছেন না।

সূত্র মতে, বিশ্বব্যাপী বাড়ছে করোনার নমুনা পরীক্ষা। একই সঙ্গে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষার ফলাফলও মিলছে। অথচ বাংলাদেশে গত কয়েকমাস থেকে নমুনা পরীক্ষার হার কমছে। পাশাপাশি এখনও পরীক্ষার ফলাফল পেতে মানুষকে পড়তে হচ্ছে নানামুখী হয়রানি ও ভোগান্তিতে। আর এ কারণে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অনেকেই নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জুন মাসে দেশে সাড়ে ১৮ হাজারেরও বেশি করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হলেও গত কয়েকমাসে এ সংখ্যা ক্রমেই কমেছে। গতকাল সাড়ে ১৪ হাজার নমুনা পরীক্ষা হলেও গড়ে ১৩ হাজার বা তার আশপাশে পরীক্ষা হচ্ছে। অথচ বিশ্বব্যাপী বাড়ছে করোনা নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মার্চে প্রথম করোনা শনাক্তের মাসে দিনে গড়ে ৫০টিরও কম পরীক্ষা হয়েছে। এপ্রিল মাসে গড়ে প্রতিদিন পরীক্ষা হয়েছে ২,১০২টি, মে মাসে এ সংখ্যা বেড়ে ৭,৮৭৯টি এবং জুনে গড়ে দৈনিক ১৫,২৫১টি পরীক্ষা হয়েছে। জুন মাসে একদিনে সর্বোচ্চ সাড়ে আঠারো হাজার পরীক্ষাও করা হয়েছে। অথচ জুলাই মাস থেকেই পরীক্ষার সংখ্যা কমছে।

এদিকে গতকাল আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসিডিডিআর,বিতে ৩০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০০ জনের মধ্যেই করোনা শনাক্ত হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ৩ জনের মধ্যে ১ জন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি জানান, দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আবারও বাড়ছে। তাই দ্রুত করোনার নমুনা পরীক্ষার হার বাড়নো এবং দ্রুত ফলাফল প্রদানের কথা জানান। ফলাফল প্রদানে বেশি সময় ক্ষেপন হলে আক্রান্তের সংখ্যা অধিকহারে বাড়বে। কারণ এই সময়ে সংক্রমিত রোগী অন্যদের ছড়াবে।

আইসিডিডিআর,বি’র অপর এক কর্মকর্তা বলেন, এখন প্রয়োজন ছাড়া কেউ টেস্ট করছে না। তাই সংক্রমণ হার কিছুটা বেশি। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, শহর বা গ্রামে হাসপাতালে গিয়ে কিংবা বাড়িতে ডেকে নমুনা সংগ্রহের পরিমাণ কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেছেন, আগে যেমন এক জায়গায় নমুনা সংগ্রহ করতে গেলে ৩০-৪০ জনেরও নমুনা নিয়ে আসা হতো পুরা বিল্ডিংয়ের। এখন আমাদের এমন কোন রিকোয়েস্টও নেই। বাসা থেকে আগে যা নমুনা সংগ্রহ হতো সেটাও অর্ধেকে নেমে এসেছে। কারণ মানুষ নমুনা সংগ্রহ করার জন্য ডাকছে না।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক প্রফেসর ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, টেস্ট নিয়ে শুরু থেকেই ভুলনীতির চক্রে বাংলাদেশ। আমরা ভুলভাবে এগিয়েছি এটা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো দরকার। তিনি বলেন, যতবেশি করে টেস্ট করা যাবে ততবেশি শনাক্ত হতো।

ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, অ্যান্টিজেন টেস্ট যদি চালু করা যেত এই ঘাটতিটা পূরণ করা যেত। তার মানে বহুপাক্ষিক এবং বহুমাত্রিক সমস্যায় আমাদের করোনা টেস্টটা কমে গেছে। যেটা আমাদের জন্য আসলে একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বা আত্মঘাতী কার্যক্রমের মতো হয়েছে। একই সঙ্গে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল দ্রুত দেয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, দ্রুত ফলাফল পেলে মানুষ সতর্ক হয়ে যেতো। একজন থেকে অন্যজনে সংক্রমণের হার কমতো।

অবশ্য সরকারের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআরের) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর ইনকিলাবকে বলেন, নমুনা পরীক্ষার পর সাধারণত ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পরীক্ষার ফলাফল মোবাইলে এসএমএস আকারে বা ই-মেইলে চলে যাচ্ছে। এছাড়াও অনলাইনেও ফলাফল দেখা যায়। তবে নমুনা পরীক্ষার সময়ে দেয়া মোবাইল বা ই-মেইল আইডি ভুল হলে অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এছাড়া যে ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হয় সে ল্যাবে চাপ বেশি থাকলে ফলাফল পেতে কিছুটা দেরি হতে পারে। তিনি বলেন, নমুনা পরীক্ষার ফলাফল দ্রুত দেয়ার বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আমরা।

উল্লেখ্য, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ১৯ জন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৬ হাজার ১২৭ জন। একই সময়ে ১৪ হাজার ৫২৪টি নমুনা পরীক্ষা করে এক হাজার ৭৩৩ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এ নিয়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চার লাখ ২৫ হাজার ৩৫৩ জনে দাঁড়াল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ